সারাক্ষণ ডেস্ক
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার এমবি নিট ফ্যাশনস ইতালীয় ক্রেতার জন্য ৫৮ হাজার ৮৯৩ পিস জ্যাকেট, টি-শার্ট ও জগার বানিয়েছে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি এসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ইতালি পাঠানোর কথা ছিল; কিন্তু চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কোম্পানিটি পণ্য পাঠাতে পারেনি।
এদিকে ইতালীয় ক্রেতা বারবার পণ্য পাঠানোর তাগিদ দিচ্ছেন। তাঁরা এই সপ্তাহের মধ্যেই মাল পৌঁছানোর সময়ও বেঁধে দিয়েছেন। তাই অনেকটা নিরুপায় হয়ে এমবি নিট ফ্যাশনসের মালিক আকাশপথে পণ্য পাঠানোর উদ্যোগ নেন। এক সপ্তাহ অনেক ঘোরাঘুরি করে অবশেষে গত বৃহস্পতিবার একটি বিদেশি এয়ারলাইনস বা উড়োজাহাজ সংস্থায় ওই পণ্য পাঠানোর বুকিং দেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সেই পোশাকের চালান ইতালির উদ্দেশে রওনা দেয়নি। চার দিন অপেক্ষার পর আজ রোববার সেই পণ্যের চালান ঢাকা থেকে উড়াল দেবে, আর ইতালি গিয়ে পৌঁছাবে আগামী বুধবার।
এবার জানা যাক ওই পণ্য পাঠাতে কত খরচ হলো। খরচ শুনলে আপনার চোখ চড়কগাছ হয়ে যাবে। ১ লাখ ৫১ হাজার ডলারের পোশাক পাঠাতে এমবি নিট ফ্যাশনসের খরচ হচ্ছে ৭৫ হাজার ৩৩৫ ডলার; অর্থাৎ পণ্যের ভাড়া মেটাতেই যাচ্ছে দামের প্রায় অর্ধেক পরিমাণ অর্থ। চালানটিতে ১৬ হাজার ৬০০ কেজি ওজনের ১ হাজার ১৮৪টি কার্টন পাঠানো হচ্ছে।
একদফা দাবিতে আজ রোববার (৪ আগস্ট) সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ পালিত হবে।
শনিবার (৩ আগস্ট) মধ্যরাতে এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে এসব তথ্য জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
তিনি বলেন, একদফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি রোববার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ পালিত হবে। সকাল থেকেই ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে ছাত্র-জনতাকে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
আসিফ বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে শাহবাগে বেলা ১১টা থেকে বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতে সকলের অংশগ্রহণের আহ্বান করছি।
অনির্দিষ্টকালের জন্য আজ থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। সেই সঙ্গে সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয় ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভায় দেয়া ভাষণ থেকে অসহযোগের ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আজ থেকে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলনে দেশের মানুষকে কী কী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সেই খাতগুলো উল্লেখ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে জরুরি এক নির্দেশনায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো নাগরিক কোনো কর বা খাজনা দেবে না। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবে না। সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও কল-কারখানা বন্ধ থাকবে। কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না। সব ধরনের সরকারি সভা-সেমিনার ও আয়োজন বর্জন করবেন। বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না।’
জরুরি নির্দেশনায় আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, ‘দেশের কোনো কল-কারখানা চলবে না, গার্মেন্টসকর্মী ভাই-বোনেরা কাজে যাবেন না। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না। জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববার ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে। পুলিশ সদস্যরা রুটিন দায়িত্ব ছাড়া কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু থানা-পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। বিজিবি ও নৌবাহিনী ছাড়া অন্যান্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে দায়িত্ব পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও উপকূলীয় এলাকায় থাকবে।’
আসিফ আরো বলেন, ‘আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না। জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না। দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, তার জন্য সব অফশোর লেনদেন বন্ধ থাকবে। বিলাসদ্রব্যের দোকান, শোরুম, বিপণিবিতান, হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।’
অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে জরুরি ওই নির্দেশনায় কিছু সেবা খাত খোলা রাখার কথা উল্লেখ করেন আসিফ মাহমুদ। তিনি জানান, অসহযোগ কর্মসূচির মধ্যেও হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, জরুরি পরিবহন সেবা (ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন), অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট-সেবা, জরুরি ত্রাণসহায়তা ও এ খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবহন সেবা চালু থাকবে।
আজ থেকে ৫৩ বছর আগেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগের যে ডাক দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে আজকের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগের ঘোষণা মিলে যায়। ১৯৭১ সালের বঙ্গবন্ধুর ডাক দেয়া ওই অসহযোগ আন্দোলন ২ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত চলে।
আজ রোববার সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। গতকাল শনিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানায় বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্যকারণ বশত আগামীকাল (রোববার) সাময়িকভাবে সব ধরনের ট্রেন চলাচল স্থগিত থাকবে।
উল্লেখ্য, এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৪ দিন বন্ধ থাকার পর গত ১ আগস্ট থেকে স্বল্প দূরত্বে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
Leave a Reply