সারাক্ষণ ডেস্ক
থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত বুধবার দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধীদল ‘মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিকে’ নিষিদ্ধ করেছে। দেশটির প্রাচীন রাজকীয় মানহানি আইন সংস্কারে (থাই রাজতন্ত্রকে যেকোনো ধরনের সমালোচনা বা মানহানি থেকে সুরক্ষা আইন) পিটার প্রচেষ্টার কারণে আদালত এ রায় দিয়েছেন। তার এই প্রচারণা প্রগ্রেসিভ পার্টির প্রতি একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রগ্রেসিভ পার্টি গত বছরের সাধারন নির্বাচনে সবচেয়ে বেশী আসন পেয়ে সরকার গঠন করে।
আদালত নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির বড় নেতাদের বিরুদ্ধেও লড়েছিল যারা ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ এর জানুয়ারী পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। আদালত তাদের ১০ বছরের জন্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন
মুভ ফরোয়ার্ড এর ফ্লাগশীপ পলিসি প্রস্তাব ছিল ক্রিমিনাল কোডের আর্টিকেল ১১২ এর সংশোধন যা ১৫ বছরের কারাবাস সহ রাজকীয় শাস্তির আওতায় পড়ে । জানুয়ারীতে সাংবিধানিক আদালত বলেছে , এটা ছিল একটি ঝুঁকিপূর্ণ পলিসি যা সংবিধানকে অমান্য করতে পারে। তারপর নির্বাচন কমিশন মার্চে দলটিকে নিষিদ্ধ করার জন্যে একটি পিটিশন দাখিল করে এই বলে যে, দলটি থাইল্যান্ডের রাজকীয় শাসনকে বন্ধ করতে চায়।
এর বিপক্ষে দলটি বলে যে, “নির্বাচন কমিশনের আদালতে আবেদন করার কোনো অধিকার নেই।” রায় পড়ার সময় বিচারক বলেন, দলটির প্রচারণার উদ্দেশ্য ছিল আর্টিকেল ১১২ কে বাদ দেয়া। তার মানে মুভ ফরোয়ার্ড এর উদ্দেশ্য ছিল থাইল্যান্ড থেকে রাজতন্ত্রকে বিদায় দেয়া।
সাংবিধানিক আদালতের রায়ই চূড়ান্ত এবং এর বিরুদ্ধে কোনো আপিল গ্রহণযোগ্য হবেনা। রায়ের পর দলটির প্রধান নেতা পিতা সাংবাদিকদের বলেন,“ আমি আমার সবটুকু দিয়ে জনগণের পাশে থাকবো এবং আইন আমাকে সহায়তা করবে আমার পরবর্তী পদক্ষেপ চালিয়ে যাবো।”
পিতা আরো বলেন,তার সহযোগীরা যাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়নি তাদের পরবর্তী কর্মসূচী সম্পর্কে শুক্রবার একটি সংবাদ সম্মেলন করবে। আইনে মুভ ফরোয়ার্ড হলো সর্বশেষ রাজনৈতিক দল যাকে নিষিদ্ধ করা হলো। মুভ ফরওয়ার্ডের উত্তরাধিকারী দল দি ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টি সহ গত দুই দশকে অনেকগুলি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২০২০ সালে আদালত এর প্রতিষ্ঠাতার কাছ থেকে বেআইনীভাবে ফান্ড গ্রহণ করার অভিযোগে এর উত্তরাধিকারীকে নিষিদ্ধ করেছিল। ১১ জন সাংসদ সহ ১৬ জন নির্বাহীকে অফিস চালানো এবং নতুন দলে যোগ দেওয়ার অভিযোগে ১০ বছরের জন্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
দি ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টি পুনরায় চাঙ্গা হয়েছিল যেমনটি মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি লেস মেজেস্টি আইন সংশোধনের একই প্রগ্রেসিভ ধারণা নিয়ে এগিয়েছিল। ২০২৩ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত সাধারন নির্বাচনে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি ৫০০ আসন বিশিষ্ট নিম্ন কক্ষে ১৫১ টি আসন জিতে একক বড় দল হিসেবে এসেছিল। কিন্তু মুভ ফরোয়ার্ডের কোয়ালিশন পার্টনার দি ফুয়ে থাই পার্টি, যেটি নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন জিতেছিল তারা রাজতন্ত্র বিলোপের নীতিতে রাজি না হয়ে মুভ ফরোয়ার্ডের সাথে কোয়ালিশন ছেড়ে চলে যায়।
দি ফুয়ে থাই এরপর অন্য দলের সাথে কোয়ালিশন করে এবং প্রপার্টি টাইকুন শ্রেথা থাভিসিনকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসায়। রাংচিৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের লেকচারার ওয়ানইউচিৎ বুনপ্রং বলেন, বুধবারের রায় বিরোধী দলকে দুর্বল করে দিতে পারে এবং মুভ ফরোয়ার্ডের নির্বাহীদের রাজনীতি অসম্ভব করে তুলতে পারে।
Leave a Reply