সারাক্ষণ ডেস্ক
অলিম্পিকস এর নারী বক্সিং ইভেন্টে লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপপ্রচার ও গুজবের ছড়াছড়ি চলছে।
এবারের প্যারিস অলিম্পিকে আলজেরিয়ার ইমান খেলিফ ও তাইওয়ানের লিন ইউটিন ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির বাছাইয়ে টিকে গেছে কিন্তু ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড বক্সিং চ্যাম্পিয়নশীপ লিঙ্গ নির্ধারনের অজুহাতে তাদের অযোগ্য ঘোষনা করেছিল যা আন্তর্জাতিক বক্সিং এসোসিয়েশন কার্যকর করে।
এনিয়ে আইওসি এবং আইবিএ’র মধ্যে দ্বন্ধ চলে। আইওসি সম্প্রতি সমালোচনার সম্মুখীন হয় এবং ম্যাচ ফিক্সিং এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার অভিযোগ অস্বীকার করে কে অগ্রাহ্য করে। আইবিএ চ্যাম্পিয়নশীপ থেকে ছিটকে পড়ে খালিফ এবং লিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদেরকে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে চিহ্নিত করে এবং ব্যাপক হেনস্তা করা হয়। সোসাল মিডিয়াতে গুজব ছড়ায় যে, এই দুজন মেয়ে হিসেবে জন্ম নিয়ে বড় হয়েছেন এবং টোকিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছেন। অনেকেই আবার বলেছেন তাদের লিঙ্গ নির্ধারনেও সমস্যা আছে কারন তারা দু’জন নারী নাকি পুরুষ তা বোঝা যায়না।
লোকেরা আরো বলে যে, এটা খুবই দু:খজনক তারা পুরুষ হয়ে জন্মে নারীদের সাথে প্রতিযোগিতা করছে যা সত্যিই গ্রহণযোগ্য নয়।কিন্তু ডিসঅর্ডার অব সেক্স ডেভেলপমেন্ট এর দাবীর ভিত্তি হলো আইবিএ এর পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে উঠে আসা একটি গুজব ।
জেন্ডার টেস্টের ফলাফলে এ্যাথলেটদের যে নাম প্রকাশ হয়েছে তাও ত্রুটিপূর্ণ ।তাই তাদের জেন্ডার সমস্যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণ নানা বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখায়।
তাইওয়ানের লিন ইউটিন ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড বক্সিং চ্যাম্পিয়নশীপে দ্বারা অনুপযুক্ত প্রমাণিত হয়ে অলিম্পিকের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
অলিম্পিকের ইতিহাসে এমন নারীদের নিয়ে অনেক সময়ই নানা সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিল বিশেষ করে যারা নারী হয়েও পুরুষালী আচরণ কিংবা শারীরিক গঠন, চেহারা ও শক্তিতে পুরুষের মতো ছিল। এখানে অনেক নারী এ্যাথলেট থাকতে পারে যারা পুরুষের আদলে আসলে নারীই যেখানে আমাদের প্রতারণা বলার সুযোগ নাই। একসময় নারীরা অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করচাইলে তাদের সকল পোষাক অনাবৃত করে স্ক্রীন টেস্টে পাশ করতে হতো।
আইওসি ১৯৬৮ সালে প্রথম নারী এ্যাথলেটদের লিঙ্গ নির্ধারনে ক্রোমোজোমাল টেস্ট শুরু করে। এই ধরনের পরীক্ষার ফলাফলগুলোকে কখনো প্রকাশ করা হতোনা আর যারা এই পরীক্ষায় অনুপযুক্ত হিসেবে প্রমাণ হতো তারা অলিম্পিকের আসর ত্যাগ করতে বাধ্য হতো। অনুপযুক্ত এ্যাথলেটদের গোপন শারীরিক সমস্যার কথা বলে বিদায় করা হতো।
ইমান খালিফ ২০২৪ সামার অলিম্পিকের বক্সিংএ তার কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিতের উৎযাপন করছে।
অনেক এ্যাথলেট তাদের সেক্স নির্ধারণের ব্যর্থতার পরে অনেক কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছেন আবার কেউ কেউ আত্মহত্যাও করেছেন। সেক্স নির্ধারণ টেস্টে অযোগ্য হয়ে দেশে ফিরেও তারা অনেকেই তাদের সেই পরীক্ষার কথা কাউকে বলতে পারেননি আবার মানসিক সাপোর্ট নিতেও ব্যর্থ হয়েছেন।
এই পরীক্ষা নারীদের উপরে একটি অন্যায্য বৈষম্য হওয়ায় এবং ভৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে এর কোনো যুক্তি নোই বলে এই পরীক্ষা ২০০০ সালে বাতিল হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে এ্যাথলেটরা তাদের পুরুষালী অঙ্গ প্রদর্শণে ব্যর্থ হওয়ায় তারা প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়েছেন।
এখন যেহেতু মেডিক্যাল সাইয়েন্স এর বিপুল পরিবর্তন এসেছে তাই কারো দেহে XX ক্রোমোজোম থাকলেই তিনি নারী হবেন এবং XY হলে তিনি পুরুষ হবেন এমনটা পুরাপুরি বিশ্বাস করা যায়না। কোনো শরীরে XY ক্রোমোজোম থাকলেই তিনি পুরুষ হবেন এমনটা সত্য নয়। নারী –পুরুষের মাঝে একটিা বাস্তব সীমারেখা টানা সত্যিই কঠিন বিশেষ করে ক্রীড়াতে নারী-পুরুষকে আলাদা করা খুবই কঠিন।
উচ্চমানের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষকে আলাদা করার নিয়ম লিঙ্গের উপরে নির্ভর করেনা কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে টেসটোসটেরন আর পুরুষের ক্ষেত্রে হরমোনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিৎ করা হয়। যাইই হোক এটা নিশ্চিৎ নয় যে, টেসটোসটেরনই মাসল এর শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটা অপ্রয়োজনীয় চিন্তা হবে যে, টেসটোসটেরনই একমাত্র বিষয় যা ক্রীড়াতে পুরুষালী শক্তি বৃদ্ধি করে এই নিয়মটিও পর্যাপ্ত নয়।
প্রতিযোগিতায় ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তাই হলো সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ণ ইস্যু। বিশেষ করে মার্শাল আর্টস এবং কমব্যাট স্পোর্টস এ অতিরিক্ত শক্তির পার্থক্য জীবন হানিকর হতে পারে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে যৌক্তিক ও মানবিকভাবে আইনকে প্রতিষ্ঠিত করা উচিৎ। কোনো এ্যাথলেটের সামর্থ্যের মাপকাঠি যদি তার পুরুষালী চেহারার উপরে নির্ভর করে তাহলে সেটা হাস্যকার।
এটা একটা ভালে দিক যে, অনলাইনে সবাই তার মতামত সহজে তুলে ধরতে পারেন। কিন্তু সেখানেও একটা মাত্রা থাকে এমনকি একটি অপরিচিত পোস্টারেও মন্তব্য করার ক্ষেত্রেও। সোসাল মিডিয়াতে আমরা প্রায়ই দেখি যে, বৈষম্য একটা ভুল বিষয় কিন্তু পার্থক্য একটা প্রয়োজনীয় বিষয়। যাইই হোক, ভুল তথ্যের উপরে পার্থক্য নিরুপণ করা, গুজব এবং শারীরিক গঠনকে মনে হবে পক্ষপাতযুক্ত বৈষম্য।
Leave a Reply