শ্রী নিখিলনাথ রায়
উক্ত চত্বরমধ্যে পূর্ব্ব দিকের দ্বারের নিকট আলিবর্দী খাঁর মাতা চিরনিদ্রার অভিভূত আছেন। আলিবর্দী খাঁ তাঁহাকেই সমাহিত করিবার জ প্রথমে এই সুন্দর বৃক্ষবাটিকা নির্মাণ করেন।
এই প্রাচীরবেষ্টিত সমাধিস্থানটির উত্তর দিকে একটি উচ্চ স্থানে ১৭টি সমাধি দেখিতে পাওয়া যায়, তাহার কোন কোনটিতে ফারসী অক্ষর খোদিত আছে। পূর্ব্ব দ্বার হইতে পশ্চিম চত্বরে প্রবেশ করিবার দ্বারের নিকট দক্ষিণ দিকে এবং পূর্ব্ব চত্বরমধ্যেই আরও তিনটি সমাধি দৃষ্ট হয়। পূর্ব্ব চত্বর ও পশ্চিম চত্বরের মধ্যস্থ প্রবেশদ্বার অতিক্রম করিয়া, পশ্চিম চত্বরে প্রবেশ করিলে, সম্মুখে একটি সমাধিগৃহ দৃষ্ট হইয়া থাকে; সেই সমাধিগৃহে আলিবর্দ্দদী সিরাজ প্রভৃতি সমাহিত আছেন। দ্বার হইতে সমাধিগৃহে গমন করিবার পথের দক্ষিণ দিকে উন্মুক্ত স্থলে প্রথমতঃ তিনটি সমাধি দেখিতে পাওয়া যায়; এই সমাধি তিনটি আলি- বদীবংশীয়দিগের কোন কোন কর্মচারীর সমাধি বলিয়া কথিত হয়।
সমাধিগৃহটি বর্গক্ষেত্র, দৈর্ঘ্যে প্রন্থে প্রায় ২১ ‘হস্ত হইবে। গৃহের চারি পার্শ্বে চারিটি বারাণ্ডা; এই বারাণ্ডার চারি পার্শ্বেও চারিটি অপ্রশস্ত রোয়াক আছে। গৃহের পূর্ব্ব ও পশ্চিম উভয় দিকেই তিনটি করিয়া দ্বার; কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণদিকে এক একটি দ্বার ও দুই দুইটি জানালা রহিয়াছে। সমাধিগৃহাভ্যন্তরে সর্ব্বশুদ্ধ ৭টি সমাধি আছে। মধ্যস্থলে শ্বেত ও কৃষ্ণবর্ণ প্রস্তরখণ্ডমণ্ডিত সমাধিতলে বাঙ্গলার আদর্শ নবাব আলিরদী খাঁ শায়িত আছেন। আফগান ও মহারাষ্ট্রীয়গণের অবিশ্রান্ত আক্রমণে ব্যাকুল হইয়া, যখন মহারাষ্ট্রীয়দিগের সহিত সন্ধিস্থাপনপূর্ব্বক তিনি কিছুদিনের জন্য শান্তিলাভের প্রয়াসী হইয়াছিলেন, সেই সময়ে তাঁহার পরিবারমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটিতে আরম্ভ হয়।
তাঁহার জ্যেষ্ঠভ্রাতা হাজী আহম্মদ এবং ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা জৈনুদ্দীন ইতিপূর্ব্বেই আফগানহস্ত প্রাণবিসর্জন দিয়াছিলেন। তাহার পর নওয়াজেস মহম্মদ খাঁ ও তাঁহার দ্বিতীয় ভ্রাতা সৈয়দ আহম্মদ খাঁও একে একে সংসার হইতে বিদায়গ্রহণ করিলেন। এই সমস্ত কারণে বৃদ্ধ নবাবের হৃদয়ের শান্তি দূরে পলায়ন করিল; ক্রমে ক্রমে তাঁহার ও স্বাস্থ্যভঙ্গ হইতে আরম্ভ হইল।
Leave a Reply