জন কলিংস
জাপানে চিকিৎসা কর্মীদের ক্রমবর্ধমান সংকট এবং দেশটিতে জনসংখ্যার বড় অংশের বয়স বেড়ে যাবার কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় বিরাট চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
এই বিরাট চ্যালেঞ্জকে সমাধানের জন্যে জাপান একাধিক পন্থা বেছে নিয়েছে। যে পন্থাগুলো তারা গ্রহণ করছে তার মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত মেডিকেল প্রযুক্তি’র ব্যবহার।
এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে’র(AI) প্রযুক্তিগুলো জাপানের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের দেশটির বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা সেবা’র কাজকে অনেক বেশি সাহায্য করছে।
যেমন এ প্রযুক্তি’র মধ্যে জাপানে ইতোমধ্যেই পরীক্ষা বা প্রযোগ করা হচ্ছে স্মার্ট ঘড়ি যা মূলত পরিধানকারীর একটি বায়োমেট্রিক তথ্য ট্র্যাক করতে পারে এবং অপারেশনে সহায়তা করতে পারে এমন রোবট। মেশিন লার্নিং ব্যবহার করা হচ্ছে মেডিকেল ইমেজিং সিস্টেমগুলিকে আরও সহজে বোঝার জন্যে। এবং সিটি স্ক্যান, এমআরআই ফলাফল ও এক্স-রে থেকে আরও তথ্য সংগ্রহ করার জন্য।
এই ধরনের অগ্রগতি অস্ত্রোপচারকে আরও নিরাপদ বা কম ঝুঁকিপূর্ণ করবে এবং রোগী সুস্থ হবার সময়কালও কমাবে। বাস্তবে এটাবয়স্কদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
AI এর এই মেডিকেল সুবধিাগুলোর সীমা মূলত অসীম। তবে তা গ্রহন করার জন্যে আরো বেশি দক্ষ হতে হবে।
গতানুগতিক মেডিকেল ডিভাইসগুলি থেকে এই প্রযুক্তিগুলির পার্থক্য হলো এটা সার্বক্ষনিক পরিবর্তন শীল। এবং এরা আরো বেশি সঠিক ডাটা গ্রহন করতে পারে মানুষের শরীর থেকে। যে কারণে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে অনেক বেশি সহায়ক।
যদিও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়, তবে এর পরিবর্তনশীল প্রকৃতি একটি নৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে অর্থাত্ মানুষের জীবনের বা শরীরের সব ধরনের ডাটা ওই যন্ত্রে থেকে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে তার কোন অপব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
তবে এ উদ্বেগগুলো সঙ্গে নিয়েই অগ্রসর এ প্রযুক্তি’র জন্যে নীতিগুলো প্রনয়ন করতে হবে। কারণ, নতুন প্রযুক্তিগুলি, যা জীবন পরিবর্তনকারী চিকিৎসা দিতে পারে, সেগুলিকে নিরাপদভাবে কাজে লাগানোর জন্য সতর্কতা ও প্রক্রিয়া এবং পথ উদ্ভাবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে।
নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে অগ্রণী হওয়ায় জাপান এই চ্যালেঞ্জগুলিকে অতিক্রম করছে এমন নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে যা মেডিকেল ইকুইপমেন্ট প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা এশিয়া প্রশান্ত মেডিকেল টেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশন ও আমেরিকান মেডিকেল ডিভাইস অ্যান্ড ডায়াগনস্টিকস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক নির্ধারিত সর্বোত্তম প্রাকটিসের সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
জাপানের ফার্মাসিউটিক্যালস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস এজেন্সি ইতোমধ্যেই AI ও ML সম্বলিত সফটওয়্যার সন্নিবেশিত মেডিকেল ডিভাইসগুলির পরিবর্তনশীল প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিগুলি বাস্তবায়ন শুরু করেছে।২০২০ সালে সালে প্রবর্তিত অ্যাপ্রুভাল ফর টাইমলি ইভালুয়েশন অ্যান্ড নোটিস উইথইন ইমপ্রুভমেন্ট ডিজাইন নীতিটি একটি পণ্য লঞ্চ হওয়ার পরে বিদ্যমান নিয়ামক অনুমোদনে আংশিক সংশোধনীর অনুমতি দেয়- একই সঙ্গে রেজিস্ট্রেশনের সময়েই ভবিষ্যতের পরিবর্তনের জন্য ভেলিডেশন প্রক্রিয়া অনুমোদন করে।
২০১৪ সালের সাকিগাকে নীতিটি এমন মেডিকেল ডিভাইসগুলির জন্য দ্রুতগতির নিয়ামক অনুমোদনের ব্যবস্থা করে যেগুলি প্রাথমিক পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে উল্লেখযোগ্য কার্যকারিতা দেখায়।
এই নীতিগুলির কার্যকারিতার প্রমাণ দেখা যাচ্ছে, যেমনটা গত দুই বছরে অতীতের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক সফটওয়্যার-ভিত্তিক ডিভাইস অনুমোদন পাওয়ায় দেখা গেছে।
এই প্রযুক্তিগুলির মধ্যে রয়েছে ফুসফুসের ক্যানসার সনাক্তকারী মেডিকেল ইমেজ অ্যানালাইসিস সফটওয়্যার যা বক্ষদেশের এক্স-রে থেকে লক্ষণগুলি বের করতে পারে এবং সিটি স্ক্যান থেকে কোভিড-১৯ জনিত নিউমোনিয়া শনাক্ত করতে সক্ষম।
এই উদ্যোগগুলি বিজ্ঞান এবং উদ্ভাবনকে সুফল দানের অনুমতি দেয়, যার মধ্যে রয়েছে নতুনতর সম্ভাবনাময় চিকিত্সা, আরও সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্লেষণ এবং রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা ফলাফল ভালো করার মত নতুন জীবনযাত্রার মানের উন্নতি।
তবে এআই উন্নয়নকারীদের দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ এআই মডেল এবং অ্যালগরিদম তৈরির জন্য সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহারের মতো ঝুঁকিগুলির প্রতিকার করতে হবে- যাতে তা নিরপেক্ষ, বৈষম্যহীন এবং অনুদ্ভাবনীয় হয়।
জাপানের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে স্পষ্ট হচ্ছে তারা এই প্রযুক্তিগুলো যথাভাবে ব্যবহার করবে এবং নৈতিকতার দিকটিও সমানভাবে লক্ষ্য রাখবে।
এশিয়া প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের মত একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকায় কিভাবে স্বাস্থ্যসেবা সমাধানগুলির ব্যবহারের জন্যে এ প্রযুক্তি’র অনুমতি দেওয়া হবে তা প্রাকৃতিকভাবে ভিন্ন হতে বাধ্য। তাই এআই চালিত মেডিকেল প্রযুক্তিগুলির প্রচুর সম্ভাবনা থাকায় জীবনরক্ষাকারী টুলগুলিকে যত বেশি সংখ্যক মানুষের পৌঁছে দেয়ারই অনুমোদন প্রক্রিয়া’র চেষ্টা চলছে।
যদি বিভিন্ন এলাকার স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ ও শিল্প প্রতিনিধিরা বর্তমানের কাঠামোগুলোর দক্ষতা এবং সীমাবদ্ধতা বোঝার চেষ্টা করে সেগুলির সর্বোত্তম অনুশীলন ও নিরীক্ষা করেই বাস্তবে অগ্রগামী প্রযুক্তিগুলিকে যথাসম্ভব দ্রুত রোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে পারবে।
এই ধরনের একটি গতিশীল প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই চীনে দেখা গেছে। দেশটি ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর হারমোনাইজেশন অব টেকনিক্যাল রিকোয়ারমেন্টস ফর ফার্মাসিউটিক্যালস ফর হিউম্যান ইউজ-এ যোগ দেওয়ার পরে, যা মানব চিকিত্সার জন্য নিরাপদ ও কার্যকরী ওষুধ উন্নয়নে গাইডলাইন তৈরিতে কাজ করে, পরবর্তী তিন বছরে বেইজিং১৬১টি ক্যানসার ওষুধ অনুমোদন করেছে, যা আগের তিন বছরে অনুমোদিত সংখ্যার তিনগুণ বেশি।
যদিও স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতাকে আগে গুরুত্ব দিতে হবে , তবুও এআইয়ের দ্বারা বয়স্ক রোগীদের জন্য যে স্বাস্থ্য সেবার দ্রুতগতি সৃষ্টি হতে পারে তার সম্ভাবনাটি সম্পূর্ণভাবে খুঁজে দেখা প্রয়োজন। তা না হলে মূলত রোগীদের সর্বাধুনিক চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে।
কারণ, আমরা এমন একটি যুগে বসবাস করছি যেখানে প্রতিদিনই বিস্ময়কর প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ঘটছে। তাই আমাদের আগের প্রজন্মের প্রতি দায়িত্ব পালনের জন্যই নিশ্চিত করতে হবে যে তাঁরাও বর্তমানের এই প্রযুক্তি’র সুফল পাচ্ছেন।
লেখক: জন কলিংস, মার্কিন মেডিকেল প্রযুক্তি কোম্পানি স্ট্রাইকারের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মেডিকেল টেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান।
লেখাটি নিক্কি এশিয়াতে প্রকাশিত। ভাষা ও বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে অনুদিত।
Leave a Reply