ম্যাট এলটন
একটি নতুন গ্রন্থ, দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট এম্পায়ার, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অতীত নিয়ে বিতর্কে ইতিহাসবিদদের বিশেষজ্ঞতার গুরুত্ব তুলেধরেছে। আমি, গ্রন্থের তিনজন লেখকের সাথে কথা বলেছি, যেখানে সাম্রাজ্য নিয়ে একাডেমিক এবং জনপ্রিয় দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ফারাকআলোচনা হয়েছে।
নতুন গ্রন্থটি প্রকাশের পেছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে লেখক অ্যালান লেস্টার বলেন, ‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাস অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়হয়ে উঠেছে আমরা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার (বিএলএম) আন্দোলনের বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখেছি এবং কিছু ক্ষেত্রে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকেনৈতিকভাবে রক্ষা করার চেষ্টাও দেখা গেছে। এই পরিস্থিতিতে, আমি বিশেষজ্ঞ ইতিহাসবিদদের কাজ সংগ্রহ করতে এবং এটিকেএমনভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলাম যা সাধারণ মানুষ সহজে গ্রহণ করতে পারে।’
লেখকগণ এবং ইতিহাসবিদরা এই গ্রন্থে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তাঁরা যক্তিসঙ্গতভাবে এবং কৌতূহল দ্বরাচালিত হয়ে অতীতের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন। সাম্রাজ্যের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, যা এইগ্রন্থে বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে চীনে যেসব সামরিক হস্তক্ষেপ হয়েছে, সেগুলি প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়। তবে এই গ্রন থেরএকটি অধ্যায়ে চীনের উপর ব্রিটিশ প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা অনেকের কাছেই নতুন তথ্য হতে পারে।
এছাড়াও, আলোচনা করা হয়েছে তাসমানিয়ায় ঘটে যাওয়া গণহত্যা নিয়ে, যা সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক বিতর্কে আরও উত্তপ্ত হয়েউঠেছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসের এই অধ্যায়টি সম্পর্কে এখনো বিতর্ক চলমান।
লেখকগণ এই গ্রন্থে তাদের কাজের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, ইতিহাস একটি একক গল্প নয়, বরং এটি অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বং আলোচনা নিয়ে গঠিত।
প্রকাশিত গ্রন্থটি ইতিহাস সম্পর্কে নতুন একটি দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে। অ্যালান লেস্টার বইটির ভূমিকা লখতে গিয়ে উল্লেখকরেছেন যে, সতয কী এবং আমরা সত্যের কতটা কাছাকাছি পৌঁছাতে পারি, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তিনিবলেন, ‘এটি নির্ভর করে আমরা কী প্রশ্ন করছি। আমরা যে সূত্রগুলি বযবহার করছি সেগুলির উপর, এবং আরা যেভাবে উত্তরগুলিব্যাখ্যা করছি তার উপর। আমরা কি উন্মুক্ত মন নিয়ে এবং কৌতূহল দ্বারা চালিত হয়ে উত্তর খুঁজছি, নাকি আমরা রাজনৈতিক যুক্তিপ্রতিষ্ঠা করার জন্য ইতিহাসের কিছু অংশ বেছে নিচ্ছি?’
এই বইতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইতিহাসবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। তারা সকলেই অতীত সম্পর কেখোলামনের কৌতূহল এবং সূত্রের সাথে সৎভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রয়াস চালিয়েছেন।
বইটি সম্পাদনার সময় অ্যালান লেস্টার মনে রেখেছেন যে, ইতিহাস একটি দীর্ঘমেয়াদী আলোচনার অংশ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নিয়েঅনেক বর ধরে গবেষণা হয়েছে এবং বিভিন্ন নতুন দৃষ্টিকোণ সামনে এসেছে। তবে অনেকেই এখনো এই বিষয়গুলির সম্পর্কে অবগতনন। তাই এই বইয়ের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আরও বৃহত্তর জনসাধারণকে অবগত করা হয়েছে।
বইটির লেখকগণ এই বিষয়ে আরও বিস্তৃত আলোচনা করেছেন এবং বিভিন্ন মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তারা উল্লেখ করেছেনযে, ইতিহাস একটি একক গল্প নয়, বরং এটি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একটি আলোচনার মাধ্যম। মোটকথা, ‘দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট এম্পায়ার’ বইটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাস নিয়ে চলমান বিতর্ক এবং এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে নতুন তথ্যও বিশ্লেষণ প্রদান করেছে, যা পাঠকদের অতীত সম্পর্কে একটি আরও গভীর ও বিবিধ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে। সাথনাম সাংগেরা বইটিসম্পাদনার সময় তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সাম্রাজ্য নিয়ে সংস্কৃতি যুদ্ধে নিজেকেমাঝখানে দেখতে প য়েছি, এবং এর পরিণতি বেশ অন্ধকারময় হতে পারে। ইতিহাসবিদ এবং সম্প্রচারক ডেভিড ওলুসোগাকে কিছুইভেন্টে বডিগার্ড রাখতে হয়। আর করিন ফাউলার- যিনি কলোনিয়ালিজম নিয়ে ন্যাশনাল ট্রাস্ট রিপোর্ট লিখেছেন, এমন একটিঅবস্থায় পৌঁছেছেন যেখানে তিনি এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন যে পুলিশ ডাকতে হয়েছে এবং তিনি বাড়ি ছেড়ে বেরোতে ভয়পেতেন। আমি নিজেও কিছু সময়ের জন্য ইভেন্ট করতে বিরত ছিলাম শুধুমাত্র ইতিহাস নিয়ে যা লিখেছি তার জন্য যে নির্যাতন সহ্যকরতে হয়েছে।’
গ্রন্থটির আরেক অংশগ্রহণকারী লেখক ব্রনওয়েন এভারিল বলেন, ‘আমরা এই বিষয়ে একটি আকর্ষণীয় সময়ে রয়েছি। যদিওবিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে বহু দশক ধরে কাজ করে আসছেন, সেই কাজের অনেকটাই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। সাম্রাজ্য নিয়েইতিহাসবিদরা অনেক আকর্ষণীয় নতুন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন, তবে সেই আলোচনা প্রায়শই জনপ্রিয় ধারণায় পৌঁছায় না।’
এভারিল আরও বলেন, ‘সাধারণভাবে মানুষ এখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নেতিবাচক দিকগুলি স্বীকার করতে শুরুকরেছে বিশেষ করে অর্থনৈতিক শোষণ। তবে কিছু লোক এখনো দাস ব্যবসা নিয়ে তর্ক করে বলে, ‘ঠিক আছে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে দাসব্যবসা ছিল, কিন্তু এটি ১৮০৮ সালের পর দাস ব্যবসা শেষ করতে কাজ করেছে- তাহলে কি এটা সাম্রাজ্যের ভালো দিক নয়?’
গন্থটির বিভিন্ন অধ্যায়ে এই ধরনের প্রচলিত ভুল ধারণা এবং ইতিহাসের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ তুলে ধরা হয়েছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রভাবএবং এর বিভিন্ন দিক নিয়ে ইতিহাসবিদদের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের বিশ্লেষণ বইটির মূল ভিত্তি।শেষ পর্যন্ত, দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট এম্পায়ার গ্রন্থটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্পর্কে একটি জটিল, বহুমুখী এবং গভীর আলোচনার অংশ, যাইতিহাসের সাধারণ ধারণাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করে এবং পাঠকদের আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে উত্সাহিত করে।
এই গ্রন্থটি ইতিহাসের একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে, যা পাঠকদের সাম্রাজ্যিক অতীতের জটিলতা এবং বিতর্ক সম্পর্কে আরওভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। অ্যালান লেস্টার বইটিতে আরও উল্লেখ করেছেন যে, সাম্রাজ্য নিয়ে আলোচনা শুধু ব্রিটিশদের নয়, বরং অন্যান্য জাতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের এই অংশটি শুধু ব্রিটিশদের জন্য নয়, বরং সাম্রাজ্যেরঅধীনে থাকা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের এই অধ্যায়গুলি আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রাসঙ্গিককারণ এটি আমাদের বিশ্বের গঠন এবং সেই গঠনে আমাদের ভূমিকা বোঝায়।’
লেস্টার এই বইতে উল্লেখ করেছেন যে, সাম্রাজ্য নিয়ে রাজনৈতিক মনোভাব ১৯৬০-এর দশক থেকে বদলাতে শুরু করেছে, তবে ২০০৮সালের আর্থিক সংকটের পর এই পরিবর্তনগুলি ঘটেছে আরও দ্রুত সাম্রাজ্যের সথে যুক্ত বিভিন্ন স্মারক এবং মর্তিগুলি নিয়ে বিতর্কতৈরি হয়ছে, বিশেষ করে ২০২০ সালে ব্রিসটলে এডওয়ার্ড কোলস্টনের মূর্তি ভাঙার পর।
লেস্টার আরও উল্লেখ করেছেন, ‘এই ধরনের বিতর্ক এবং স্মারকের উৎখাতের সময় আমরা দেখি যে, এগুলি প্রায়শই সম্রাটদেরজীবনের সথে সম্পর্কিত নয়, বরং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সঙ্কটের সময় স্থাপিত হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, ভিক্টোরিয়ান এবংএডওয়ার্ডিয়ান যুগের অনেক মূর্তি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সংকটের সময়ে স্থাপিত হয়েছিল, যখন নতুন সাম্রাজ্যের উত্থান, যেমন জার্মানি, আমেরিকার অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি, এবং দক্ষিণ আফ্রিকার যুদ্ধের সময় ব্রিটেনের ভঙ্গুরতা প্রকাশ পেয়েছিল। এই ধরনের পরিস্থিতিতেজাতীয় গৌরবের ধারণা আবার উজ্জীবিত হয়েছিল।’
গ্রন্থটিতে উঠে এসেছে যে, সাম্রাজ্য নিয়ে এই ধরনের সংকট এবং বিতর্কগুলি এখনো বিদ্যমান, এবং ইতিহাসের এই অংশটি বোঝারজন্য আমাদেরকে আরো গভীর এবং ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চিন্তা করতে হবে।লেস্টার বলেছেন, ‘আমি চাই লোকেরা তাদের জাতীয় ইতিহাস নিয়ে গর্ববোধ করুক, তবে সেই গর্ব একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গল্পের উপরভিত্তি করে হওয়া উচিত। অতীতের জটিলতাকে বোঝা এবং সেই জটিলতার মধ্যে থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।’
গ্রন্থটির আরেক অংশগ্রহণকারী ব্রনওয়েন এভারিল উল্লেখ করেছেন যে, ‘ইতিহাস একটিমাত্র গল্প নয়; এটি বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবংবিতর্কের একটি সমন্বয়। ইতিহাসবিদরা অতীতকে বিভিন্ন কোণ থেকে দেখেন, কারণ সেখানে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ধারা নেই।’
সাথনাম সাংগেরা শেষ পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন যে, ‘আমরা ক্রমবর্ধমানভাবে ধ্রুবক বার্তাগুলির দিকে ধাবিত হচ্ছি এব সামাজিকমিডিয়া আমাদের আরো বিভক্ত করছে। এর ফলে ইতিহাসের মতো জটিল এবং বিবিধ বিষয়ের জন্য খুব কম জায়গা তৈরি হয়েছে।’
দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট এম্পায়ার: রিয়াল হিস্টোরিজ অফ ব্রিটিশ কলোনিয়ালিজম, অ্যালান লেস্টারের সম্পাদনায়, ইতোমধ্যেই প্রকাশিতহয়েছে। এবং পাঠকদের জন্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসের নতুন একটি প্রাসঙ্গিক এবং গভীর দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচিত করেছে।
Leave a Reply