সারাক্ষণ ডেস্ক
বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ৪০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তবে নিট বা প্রকৃত মুনাফা হয়েছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি সবচেয়ে বেশি আয় করেছে রেপো ও স্পেশাল রেপোর বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংককে দেওয়া স্বল্পমেয়াদি ধারের বিপরীতে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত থেকে ডলার বিক্রি করেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভালো আয় করেছে।
রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড়ি এলাকায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের ছোট ভাই এরশাদ মাহমুদের অবৈধ দখলে রয়েছে প্রায় ২২০ একর বনভূমি। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গত ১৫ বছর ধরে এসব বনভূমি দখলে রেখে মৎস্য চাষ, মাল্টার বাগান, পুকুর, ডেইরি ফার্ম, রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করে ভোগ দখল করছেন। ক্ষমতার দাপটের কারণে এসব অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ছিলেন অসহায়। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বন বিভাগ অবৈধ দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। দুই দফায় ১০৫ একর বনভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়।
রাঙ্গুনিয়া, সুখবিলাস, দশমাইল ও খুরশিয়াসহ আশপাশের বিশাল পাহাড়ি এলাকা নিয়ে রয়েছে বনভূমি। সড়কের পাশে থাকা বনভূমির ওপর নজর পড়ে এরশাদ মাহমুদের। গত ১৫ বছর যাবত রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ও আশপাশের এলাকায় সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটায় এরশাদ মাহমুদ। দখল করা এসব বনভূমি সড়কের কাছাকাছি। যোগাযোগের ব্যবস্থাও ভালো। গত সোমবার প্রথম দফায় সুখবিলাস এলাকায় প্রায় ৫৫ একর বনভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়। এখানে ছিল চার-পাঁচটি গোয়ালঘর, তিনটি পুকুর, পার্ক, রেস্টুরেন্ট। পুকুরগুলোতে মাছ চাষ করা হতো। গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দফায় আরও ৫০ একর বনভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়।
১৯৭৫ সালের এপ্রিলে ফারাক্কা ব্যারাজ উদ্বোধন করে ভারত। এ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কথা ছিল বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রীরও। তখন পানিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। তবে সরকারের সিদ্ধান্তেই ওই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত অংশগ্রহণ করেননি। এর মূল কারণ ছিল ফারাক্কা ব্যারাজ নিয়ে বাংলাদেশের অসন্তোষ। বাংলাদেশের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির আগেই ব্যারাজটি চালু করে দেয় ভারত, যা ওই সময় দেশে বড় ধরনের অসন্তোষ তৈরি করে। এর প্রতিক্রিয়ায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। এরপর পার হয়েছে প্রায় ৪৯ বছর। এখনো বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে চাপে ফেলার বড় এক ক্ষেত্র হয়ে আছে ফারাক্কা ব্যারাজ তথা গঙ্গার পানি বণ্টন।
ফারাক্কা ব্যারাজ নিয়ে এ ভূখণ্ডে অসন্তোষের ইতিহাস প্রায় ৭৫ বছরের। ১৯৫১ সালে ভারত যখন গঙ্গা নদীতে ব্যারাজটি নির্মাণের পরিকল্পনা করে, তখনই এ নিয়ে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে অসন্তোষ তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে সে সময় পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তিও তোলা হয়। বিষয়টি নিয়ে দু্ই সরকারের মধ্যে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এরপর থেকে গত পাঁচ দশক বাংলাদেশ ও ভারত—দুই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি আলোচিত বিষয় হয়ে আছে ফারাক্কা ব্যারাজ।
বিশেষত বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময়ে ফারাক্কা থেকে বাংলাদেশের ন্যায্য পানির হিস্যা আদায় করে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তবে কার্যত ব্যারাজটি নিয়ে অসন্তোষ এখনো রয়েই গেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, স্বাধীনতার পর দেশে ভারতবিরোধী মনোভাব প্রকট হয়ে ওঠার অন্যতম বড় কারণ ছিল ফারাক্কা ব্যারাজ। এমনকি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে যেসব ক্ষোভ কারণ হিসেবে কাজ করেছে, তার অন্যতম হলো গঙ্গার পানি আদায়ে বঙ্গবন্ধুর ব্যর্থতা।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৬ সালে। এরপর এর নবায়ন নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার পানি রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেছেন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের রামিজ মোহাম্মদ ভাট। তিনি তার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছেন, চূড়ান্ত চুক্তির আগেই ভারতের ফারাক্কা ব্যারাজ চালু করে দেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশে ভারতের প্রতি একটি বিরূপ মনোভাব তৈরি করে। এর জেরে ওই সময়ে যারা বঙ্গবন্ধুর বিরোধী দলে ছিলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানকেও জটিলভাবে দেখতে শুরু করেন। এর ফলে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তির বাস্তবায়নও হুমকির মুখে পড়ে যায়। একই সঙ্গে ভারতের কাছ থেকে গঙ্গার পানি আদায়ে বঙ্গবন্ধুর ব্যর্থতা তার প্রতি বিরোধীদের ক্ষোভ আরো বাড়িয়ে দেয়, যা ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডেও প্রভাব রেখেছিল।
নিজস্ব সুরক্ষায়, প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষায় বিত্তশালী ব্যক্তিরা বেসামরিকভাবে লাইসেন্সের মাধ্যমে বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। গত
ছয় বছরে সারা দেশে এই তিন ক্যাটাগরিসহ বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ৫১ হাজার ৬৮০টি। এর মধ্যে ব্যক্তির নামে ৪৫ হাজার ২২৬টি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৫ হাজার ৮৪টিরও বেশি। ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী। বিভিন্ন পেশাজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে রয়েছে ২১ হাজার ৬৮০টি বৈধ অস্ত্র। এসব মালিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন। বৈধ অস্ত্র সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেয়া বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সের সংখ্যা ৫১ হাজার ৬৮০। কিন্তু এর প্রকৃত সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বৈধ অস্ত্রের হিসাব সম্পর্কে এখন পর্যন্ত সম্মিলিত তথ্য আসেনি।
দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকারীর সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। বৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও রাজস্ব সেভাবে আদায় করা হয়নি।
যাদের অনেকেরই আয়কর ফাইলে দেখানো আয় ও সম্পদের হিসাবে কৌশলে বড় অঙ্কের কর ফাঁকি দিয়ে অস্ত্র ব্যবহার করেছেন বলে জানিয়েছে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সূত্র জানায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বেসামরিক জনগণকে প্রদানকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইতিমধ্যে স্থগিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা ও জমা দেয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। এতে আগামী ৩রা সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলা-বারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।অস্ত্র আইন, ১৮৭৮ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬ অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় ব্যবহার গ্রহণ করে থাকেন। স্পেশাল ব্রাঞ্চ কর্তৃক তৈরি করা বেসামরিক আগ্নেয়াস্ত্র্ত্রের তথ্য সংরক্ষণ সফটওয়্যার এ আগ্নেয়াস্ত্রের হাল নাগাদ তালিকা সম্পর্কে জানা যায়, ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৫১,৬৮০টি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ধরন অনুযায়ী পিস্তল ৪,৮৪০টি, রিভলবার ২,৬৯২টি, একনলা বন্দুক ২১,৩৯৫৪টি, দোনলা বন্দুক ১১,০২২টি, শটগান ৫,৯৩৮টি, রাইফেল ১,৮৬৪টি। এ ছাড়া এর আগের বছরগুলোর আগ্নেয়াস্ত্রের বিষয়ে হালনাগাদ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একইসঙ্গে এ সকল আগ্নেয়াস্ত্রে সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সধারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন জেলার অন্তর্গত থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর, আগ্নেয়াস্ত্র লুটপাটসহ গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় পুলিশের স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় গত ১৫ বছরের ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের বিষয়ে পুলিশ এখনো স্বাভাবিক কাজ শুরু করতে পারেনি। অনেক থানায় লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্রে জমা নেয়ার ক্ষেত্রে জটিলতাসহ অস্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্রশস্ত্র্ত্র এখনো সম্পূর্ণ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply