হারুন উর রশীদ স্বপন
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার ভবনে আগুন তিন দিনেও নেভেনি। ছয় তলা ভবনটি যে-কোনো সময় ধ্বসে পড়ার আশঙ্কায়।
আগুনে কতজন প্রাণ হারিয়েছেন তা মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপ পরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন.” স্থানীয় লোকজন নিখোঁজ ব্যক্তিদের ১৭৪ জনের তালিকার কথা বললেও আমাদের জানা নাই।” মঙ্গলবার ওই এলাকায় নিখোঁজদের নিয়ে কাজ করা ছাত্ররা ৯৯ জনের নাম, ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি টানিয়ে দেয়। তাদের ‘নিখোঁজ’ বলা হচ্ছে।
ভবনের সামনে এখনো অনেক লোকের ভিড়। তারা দাবি করছেন, তাদের স্বজনরা ওই ভবনে ছিলেন। কিন্তু তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মো. ডাবলু নামে একজন জানান, তার ভাই ওই এলাকায় ছিলেন, তবে আগুন লাগার পর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সালেহা বেগম নামে একজন বলেন, “আমরা ছেলে অটো রিকশা ড্রাইভার্৷ সে-ও ওই এলাকায় ছিল। বাসা থেকে গাজী টায়ারে যাওয়ার কথা বলে বের হয়। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷”
নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক আমীর হোসাইন জানান,” আগুন লাগার পর থেকে ছাত্ররা ফায়ার সার্ভিসের সাথে কাজ করছে। তারা মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯৯ জন নিখোঁজের তালিকা করেছেন। তবে এটা প্রশাসন বা ফায়ার সার্ভিসের তালিকা নয়।”
ফায়ার সার্ভিসের জসংযোগ জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহজহান শিকদার বলেন,” আমরা কোনো নিঁখোঁজের তালিকা করিনি। আমরা আগুন লাগার পর ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছি। কোনো মৃতদেহ আমরা এখনো পাইনি।”
উপ পরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন,” আসলে ছয়তলা ভবনটি পুরো পুড়ে গেছে। এখানে রাবার ও কেমিকেল থাকায় আমরা ১৬টি ইউনিট নিয়ে কাজ করেও আগুন নিভাতে পারিনি। এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পুরো নিভাতে আরো সময় লাগবে।”
তিনি জানান,” সরকারের পতনের দিন (৫ আগস্ট) থেকেই কারখানাটি বন্ধ ছিল। ফলে ভবনে প্রতিষ্ঠানটির কোনো লোক ছিল না।”
গত ২৫ আগস্ট রাত ১০টার দিকে গাজী টায়ার কারখানার ছয়তলা ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। এরপর থেকে শত শত মানুষ এসে সেখানে জড়ো হচ্ছেন। গত ২৪ আগষ্ট রাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তারের পর নারায়ণগঞ্জের আদালত তার ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। খবর পেয়ে সর্বশ্রেণির মানুষ কারখানাটিতে গণহারে লুটপাট চালায়। আগুন লাগার সময়ও লুট করতে গিয়ে শতাধিক মানুষ ভেতরে আটকা পড়েন বলে স্থানীয়রা জানান।
গাজী টায়ারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “৫ আগস্ট থেকেই আসলে গাজী টায়ার ভবন এলাকায় লুটপাট শুরু হয়। চত্বরে মোট ছয়টি ভবন। আরো চারটি শেড আছে। ফ্যাক্টরি ভবনটি ছয় তলা। ওই ভবনটি ছাড়া বাকি ভবন ও শেডে আগেই ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করা হয়। যে যার মতো মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।”
” গেলাম দস্তগীর গাজী গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২৫ তারিখ ফ্যাক্টরি ভবনে আগুন দেয়া হয়। কিন্তু ওই ভবন বা অন্য কোনো ভবনে আমাদের কোনো কর্মচারি ছিল না। গেটে কয়েকজন নিরাপত্তা প্রহরী ছিলেন৷ তারা লোকজন আসতে দেখে আগেই চলে যান। ভিতরে কেউ যদি তখন থেকে থাকেন তারা আমাদের লোব নয়, তারা হয়ত লুটপাট করতে এসে ভবনে ঢুকেছিলো,” বলেন তিনি।
গাজী টায়ার কারখানাটি রূপঞ্জের রপসী এলাকায় । ৯৬ বিঘা জমির ওপরে ২০১৩ সালে টায়ারের কারখানাটি করা হয়। কারখানায় দুই হাজার ৩০০ শ্রমিক কাজ করতেন। ছয় তলা ভবনটির প্রথম তিনটি ফ্লোরে ফ্যাক্টরি এবং বাকি তিনটি ফ্লোরে গোউাউন ছিল। এখানে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
কারখানায় লুটপাট ও আগুনের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। ফায়ার সার্ভিস জানায়, কেউ আগুন দিয়েছে না কোনো কারণে আগুন লেগেছে তা তারা তদন্ত করে দেখছেন। কত ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা-ও তদন্তের পর বলা যাবে।
নারায়ণগঞ্জের অ্যাডিশনাল এসপি আমির খসরু বলেন,” আসলে ওই ভবনটি পুরোপুরি ভস্মীভূত হওয়ার আগে উদ্ধার কাজ চালানো যাবে না। এখনো থেকে থেকে আগুন জ্বলছে। রাবার ও কেমিকেলের কারণে ফায়ার সার্ভিস ভবনের ভেতরে যেতে পারছে না। তারা বাইরে থেকে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।”
আর নিখোঁজদের ব্যাপারে তিনি বলেন,” আগুন লাগার পর স্থানীয়রা ১৭০-১৮০ জন নিখোঁজ বলে তালিকা দেন। তবে আসলে কতজন নিখোঁজ তা বলা যাচ্ছে না।”
ডিডাব্লিউডটকম
Leave a Reply