শ্রী নিখিলনাথ রায়
জাফরাগঞ্জ
জাফরাগঞ্জ সিরাজের বধ্যভূমি, বাঙ্গলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীনতার সমাধি। এই স্থানের ভূমি বিশ্বাসঘাতকের তরবারির আঘাতে কলুষিত হইয়াছিল; তাই যে ভবনে সেই শোচনীয় হত্যাকাণ্ড সম্পাদিত হয়, মুর্শিদাবাদবাসিগণ অদ্যাপি তাহাকে “নেমকহারামী দেউড়ী” কহিয়া থাকে। যাহার অগ্নে, যাহার গৃহে প্রতিপালিত হইয়া, বিশ্বাসঘাতকগণ সংসারে সুপরিচিত হইয়াছিল, আপনাদিগের বাসভবনে তাহারই রক্ত- পাতের দ্বারা কৃতজ্ঞতার পরিচয় প্রদান করিয়াছিল! যে হতভাগ্য প্রত্যেকের পদতলে বিলুন্ঠিত হইয়া প্রাণভিক্ষা চাহিয়াছিল, পাশবিক হত্যাকাণ্ডে তাহার সে প্রার্থনা পূর্ণ করা হয়।
বসুন্ধরা এই রক্তপাত কিরূপে ধারণ করিয়াছিলেন বলিতে পারি না; বোধ হয় তিনি সে রক্ত- প্রবাহ নিজ অঙ্গে মিলাইতে পারেন নাই; বিশ্বাসঘাতক কর্তৃক পাতিত রক্ত তাঁহার পবিত্র অঙ্গে কদাচ মিশিয়া যাইতে পারে না; অথবা তিনি সর্ব্বংসহা,-সমস্তই সহ্য করিতে পারেন। যে গৃহে সেই শোচনীয় হত্যাকাণ্ড সংসাধিত হইয়াছিল, সে গৃহ চূর্ণ বিচূর্ণ হইয়া অণুপরমাণুতে মিশিয়া গেলেও, তাহার স্থানের লোপ হয় নাই। আজিও সে স্থানে উপস্থিত ছেলে, বিশ্বাসঘাতকগণের প্রতি আন্তরিক। স্বর্ণা ও হতভাগ্য সিরাজের প্রতি সহানুভূতির উদয় হইয়া থাকে।
জাফরাগঞ্জ আবার বঙ্গের শেষ সর্যাব-নাজিমগণের সমাধিভবন। এই স্থানে নবাব জাফর আলি খাঁ খা মীরজাফর হইতে তদ্বংশীয় অন্যান্য নবাব-নাজিমগণ চিরনিদ্রায় মিলিত আছেন। জাফর আলির প্রিয়তমা ভার্য্যা মণিবেগম ও বন্ধু বেগমও সেই সমাধিভবনে শান্বিত। এই ‘রাজ-সমাধিভবন মুর্শিদাবাদের একটি দর্শনীয় স্থান। সিরাজের বধ্যভূমি ও নবাব নাজিনগণের সমাধিভবণের জন্য জাফরাগঞ্জ ঐতিহাসিকের নিকট নিতান্ত উপেক্ষার স্পমন্ত্রী নহে। আফরাগঞ্জ ভাগীরথীর পূর্ব তীরে ও মুর্শিদাবাদ কেল্লা হইতে প্রায় অর্দ্ধক্রোশ উত্তরে অবস্থিত।
Leave a Reply