বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৫০)

  • Update Time : বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

মোবারক উদ্দৌলা মীরজাফরের অন্যতমা ভাৰ্য্যা বন্ধু বেগমের গর্ভজাত। মোবারক নাবালগ অবস্থায় নিজামতী প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। তাঁহার অভিভাবক নিধুক্ত হইবার জন্ম তাঁহার মাতা বন্ধু বেগম প্রার্থনা করিয়াছিলেন; কিন্তু গবর্ণর হেষ্টিংস সাহেব তাঁহার আবেদন অগ্রাহ্ন করিয়া মোবারকের বিমাতা মণিবেগমের নিকট হইতে উৎকোচ গ্রহণপূর্ব্বক তাঁহাকেই নাবালগ নবাব-নাজিমের অভিভাবক নিযুক্ত করেন। এই সময়ে মহারাজ নন্দকুমারের পুত্র রাজা গুরুদাস নবাবের দেওয়ান নিযুক্ত হন। মোবারক উদ্দৌলার নিজামতী প্রাপ্তির সময় নিজামতের বৃত্তি ৩১,৮১, ৯৯১ টাকায় নিদ্দিষ্ট হয়; অবশেষে তাহা ১৬ লক্ষ টাকায় পরিণত হইয়া যায়।

১৭৭২ খৃঃ অব্দের জানুয়ারী মাস হইতে নবাব-নাজিমগণ এই ১৬ লক্ষ টাকা বরাবরই পাইয়া আসিয়া- ছিলেন। নবাব মনসুর আলি খাঁর পর হইতে তাহার অন্যরূপ বন্দোবস্ত হয়। ১৭৯৬ খৃঃ অব্দে নবাব মোবারক উদ্দৌলার মৃত্যু ঘটে। মোবারক উদ্দৌলার পশ্চিমে পঞ্চম নবাব-নাজিম বাবর জঙ্গের সমাধি। বাবর জঙ্গ মোবারক উদ্দৌলার পুত্র; তিনি দিলার জঙ্গ বা দ্বিতীয় মোবারক উদ্দৌলা উপাধি গ্রহণ করিয়াছিলেন। ১৬১০ খৃঃ অব্দে তিনি পরলোকগত হন। তাঁহারই পার্শ্বে ষষ্ঠ নবাব-নাজিম আলিজা বা সৈয়দ জৈনুদ্দিন আলি খাঁ শায়িত।

আলিজা বাবর জঙ্গের পুত্র; ১৮২১ খৃঃ অব্দে তাঁহার মৃত্যু হয়। আলিজার পার্শ্বে তাঁহার ভ্রাতা সপ্তম নবাব নাজিম ওয়ালাজার সমাধি; ওয়ালাজা ১৮২৫ খৃঃ অব্দের প্রথমেই প্রাণত্যাগ করেন। ওয়ালাজার পার্শ্বে অষ্টম নবাব-নাজিম হুমায়ুজা চির নিদ্রাসুখ ‘সম্ভোগ করিতেছেন; ইহাই সর্ব্বশেষ সমাধি। হুমায়ুজা ওয়ালাজার পুত্র। হুমায়ুজার সময় মুর্শিদাবাদের বর্তমান নবাব-প্রাসাদ নির্মিত হয়। এই পরম সুন্দর প্রাসাদটির নির্মাণ-কার্য্যে ন্যূনাধিক নয় বৎসর লাগিয়াছিল। ১৮৩৭ খৃঃ অব্দে ইহার নিষ্প্রাণ শেষ হয়।

ইঞ্জিনিয়ার জেনারেল, ম্যাক্সিয়ডের তত্ত্বাবধানে কেবল দেশীর লোকদিগের দ্বারা এই প্রাসাদ নির্ম্মিত হইয়াছিল। প্রাসাদটির নির্মাণে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা ব্যয়িত হয়। প্রাসাদে নবাব নাজিমগণের এবং বর্তমান নবাব বাহাছর ও তদ্বংশীয়গণের অনেক চিত্র আছে। এই সুসজ্জিত সুরম্য প্রাসাদ মুর্শিদাবাদের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা দর্শনীয় পদার্থ। ইহাতে যে সকল চিক্র আছে, ভারতের প্রায় কোথাও সেরূপ চিত্র দেখিতে পাওয়া যায় না। এই প্রাসাদকে সাধারণতঃ হাজারদুয়ারী কহিয়া থাকে। হাজারদুয়ারী ভাগীরথীতীরেই অবস্থিত। হুমায়ুজা নির্জনবাস ভাল বাসিতেন; এই জন্য তিনি একটি মনোহর বৃক্ষবাটিকা নির্মাণ করেন; তাহার নাম মোবারক- মঞ্জিল বা হুমায়ু মঞ্জিল।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024