মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন।
মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে।
তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু।
তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক
মাহমুদুল হক
‘ফাঁক পেলেই তুই আমার কান ম’লে দিতিস, আর আমি মা’র কাছে নালিশ করতাম–
‘তখন তোর কানজোড়া বেজায় ছোটো ছিলো, টেনে টেনে আমিই লম্বা করেছি!’
‘গুলবাজ! নিজের কথা মনে নেই তোর? বুড়ো ধামড়া হয়েও তুই বিছানায় পেচ্ছাব করতিস। একবার তোকে কাপে ক’রে পেচ্ছাব খাওয়ানোও হয়েছিলো, মা’র মুখে তোর সব কেচ্ছাই আমি শুনেছি।’
‘আর কেন্নো দেখলেই তুই যে চিংড়ি ভেবে গল্প ক’রে গালে পুরতিস, তারপর ক্যাঁচ্যাঁচ চিবিয়ে খেতিস–‘
‘ইশ, সত্যি বলছিস দাদা?’
‘তবে কি? গাল ফুলে যেত, জিভ ফুলে যেত, চুন লাগিয়ে দিতো মা। তুই কি কম জ্বালিয়েছিস মাকে?’
‘আহা, নিজে কতো লক্ষ্মী ছেলেটিই না ছিলে। ন্যাড়ারাজামার্কা গিনি দিয়ে চিনেবাদাম কিনে খেয়েছিলো কে? কেমন পিটুনি পড়েছিলো পিঠে?
এমন গবামার্কা ছিলি যে ইস্কুলের ক্লাসে ব’সে ব’সে গাল বন্ধ ক’রে খোসাসুদ্ধ চিনেবাদাম খেতিস, যাকে বলে একদম গাধা।’
‘তোর পায়ে একবার কাঁকড়াবিছে কামড়েছিলো, মনে আছে?”
‘ইশ, সেকি হুলস্থুল কাণ্ড! মা ফিট হ’য়ে পড়ে গিয়েছিলো, ভেবেছিলো বুঝি সাপে কামড়েছে।”
অনেকক্ষণ পর খোকা বললে, ‘তোর ভয় করছে?’
‘তোর?’
‘তোর জন্যে আমার ভয়। চল কোথাও রেখে আসি তোকে–‘
রজু হেসে বললে, ‘পায়ের নখ কেটে দেবে কে তাহলে?’
‘সময় হ’লে আমি কেটে দিয়ে আসবো।’
‘আমাকে কাটাতে পারলে তোর বোধহয় মস্ত সুবিধে হয়, তাই না? ইচ্ছেমতো খোকামি ক’রে বেড়াতে পারবি–‘
‘একশোবার–‘
‘বুড়োধাড়ি হ’লেও এখনো তুই নিজেকে খোকা মনে করিস, এটাই তোর দোষ!’
‘আর তোর দোষ কোন্টা জানিস, ওর উল্টোটা। একফোঁটা পুঁচকে ছুঁড়ি তার আবার এতো কথা কিসের।’
Leave a Reply