শশাঙ্ক মণ্ডল
দ্বিতীয় অধ্যায়
কলকাতার বণিকসভা ১৮৫৩ সালে ডালহৌসির সরকারের কাছে আবেদন রাখল কলকাতা বন্দরের যে কোন মুহূর্তে বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। হুগলী নদীতে যে ভাবে চড়া পড়েছে তাতে আগামী দিনে কোন জাহাজ এই বন্দরে ভিড়তে পারবে না। সুতরাং অবিলম্বে বিকল্প বন্দরের প্রয়োজনে মাতলা নদীর বর্তমান ক্যানিং-এ বন্দর গড়ে তোলার প্রস্তাব করল বণিকসভা। বিদ্যাধরী, করতোয়া, আঠারবেকী সেদিন প্রবল স্রোতস্বিনী- এদের মিলনে মাতলার সৃষ্টি; বিশাল জলধারা নিয়ে মাতলা ক্যানিং-এর পাশ দিয়ে সমুদ্রে মিলেছে। ডালহৌসির আমলে ১৮৫৩ খ্রীষ্টাব্দে ৫৪ নং লাটে ১১০০০-০০ টাকার বিনিময়ে মাতলা নদীর পশ্চিমতীরে ২৫০০০ বিঘা জমি সংগ্রহ করা হল।
এই জমির মধ্যে ৩৫০/৪০০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ হত। বাকিটা জঙ্গল। বন্দর করার জন্য ৬৫০- একর জমি সংরক্ষিত করা হল। অতি দ্রুত একটি কমিটি করা হল এরা বন্দরের উপযোগী প্ল্যান ও সার্ভে করে সরকারকে রিপোর্ট দেবেন। সব ব্যাপারটা করতে দুই বৎসর লেগে গেল। ১৮৫৮ খ্রীষ্টাব্দে কাজ শুরু করা হল। সিপাহী বিদ্রোহের জন্য দেরি হয়ে গেল। লর্ড ক্যানিং এর নামে এই নতুন বন্দরের নাম হল কিন্তু লর্ড ক্যানিং কোম্পানির এই পরিকল্পনাকে সুনজরে দেখেননি। ১৮৫৯ এর মার্চে ছোট লাট স্যার জে. পি. গ্রান্ট ক্যানিং পরিদর্শন করেন। তাঁর মন্তব্যে গুরুত্ব দেওয়া হল(১১) স্বাদু জলের ব্যবস্থা করতে হবে এবং কলকাতার সঙ্গে উপযুক্ত যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। অবশ্য এর আগেই নতুন রাস্তা করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্বাদু পানীয় জলের জন্য দুটি পুকুর (৫০০ × ৩০০ ফুট) খনন করার জন্য ১৬০০০ টাকা মঞ্জুর করা হল। কলকাতা থেকে মাতলা পর্যন্ত রাস্তাকে সাধারণ রাস্তা হিসাবে না ধরে রাজকীয় পথ- রয়্যাল রোড হিসাবে গণ্য করার ব্যবস্থা করা হল। মাতলাকে বিকল্প বন্দর হিসাবে গড়ে তোলার জন্য জরুরি উদ্যোগ নেওয়া হল। বারুইপুর থেকে মাতলা পর্যন্ত রাস্তাকে পিচের রাস্তায় পরিণত করা হল, গড়াই নদীতে ব্রীজ করার ব্যবস্থা হলো-পিয়ালী নদীতে ঘাট তৈরি করা হল। এই রাস্তার কাজ করার জন্য ইতিপূর্বে কনভিক্ট লেবার ফান্ড থেকে ৮৫১৭ টাকা খরচ করা হল এবং রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য আরও ৫২১০ টাকা তিন আনা খরচ করা হল।
১৮৬২- এর জুন মাসে ক্যানিং-কে মিউনিসিপ্যালিটির মধ্যে নিয়ে এসে সমস্ত জমি মিউনিসিপ্যালিটির হাতে তুলে দেওয়া হল। মিউনিসিপ্যালিটির পক্ষে ক্যানিং শহর গড়ে তোলার জন্য ২০ লক্ষ টাকার পরিকল্পনা গ্রহণ করল। এর মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা শেয়ার মানি হিসাবে সংগ্রহ করার প্রস্তাব নেওয়া হল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেয়ার বাবদ সংগৃহীত হল ২ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। ১৮৬৪ তে মিউনিসিপ্যালিটির পরিচালক ফার্দিনান্দ স্কিলারের উৎসাহে দ্য পোর্ট ক্যানিং ল্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট রিক্লামেশান অ্যান্ড ডক্ কোম্পানি গঠিত হল। ৬৬-তে সরকারের পক্ষে ৪৫ হাজার পাউন্ড বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হল। সরকার এগিয়ে আসার ফলে পোর্ট ক্যানিং কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা বেড়ে গেল। শেয়ার কেনার ব্যাপারে বোম্বাই কলকাতার বণিকদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি হল।(২০)
Leave a Reply