শশাঙ্ক মণ্ডল
দ্বিতীয় অধ্যায়
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ভাঙড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত লঞ্চ চলত। ১৯২০/২৫ এ লক্ষ করা যাচ্ছে যাত্রী প্রতি ভাড়া ছিল চার আনা। ভাঙড় কাটা খাল দিয়ে শ্যামবাজার থেকে কুলটি মোটর লঞ্চ চালানোর জন্য শ্যামবাজার মোটর লঞ্চ সিন্ডিকেট দু-খানি লঞ্চ এর ব্যবস্থা করেছিল আলিপুর মহকুমা শাসকের অনুরোধে। ভাঙড় হাইস্কুলের জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে ২ পয়সা স্কুল বৃত্তি আদায় করত। তৎকালীন মোটর লঞ্চ সিন্ডিকেটের কর্তাব্যক্তি কালিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কাজে নানাভাবে সাহায্য করতেন। শ্যামবাজার মোটরলঞ্চ সিন্ডিকেট হাড়োয়া, ক্যানিং, মগরাহাট প্রভৃতি এলাকায় লঞ্চ সার্ভিস চালু করেছিল। খুলনা থেকে বরিশাল হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত স্টীমার সার্ভিস চালু হয় ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দে।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে এই পথে স্টীমার চালানোর চেষ্টা হয়েছিল। “সরোজিনী” সে যুগে স্বদেশপ্রেমের প্রতীক হিসাবে বিদেশি কোম্পনির স্টীমারের বিকল্প হিসাবে পূর্ব বাংলার মানুষের সামনে আশার আলো জ্বেলেছিল। বিলাতি ফ্লোটিলা কোম্পানি স্বদেশি এই প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেবার জন্য অর্ধেক ভাড়া নিয়ে স্টীমার চালাত। কিন্তু নদীতীরবর্তী মানুষরা বিলাতি কোম্পানির স্টীমারে না উঠে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করত স্বদেশী জাহাজের জন্য। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কোম্পানির নাম ছিল – Inland river steam service – এঁরা ৫ খানি ছোটো জাহাজ সংগ্রহ করেন। স
রোজিনী, বঙ্গলক্ষ্মী, স্বদেশ, ভারত, লর্ডরিপন কয়েকবছর চলার পর কোম্পানির একটা জাহাজ হাওড়াব্রীজের তলায় ডুবে যায় এবং ইংরেজ কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছু হটতে বাধ্য হয়। শেষে উত্তরপাড়ার জমিদার প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতায় বিলাতি কোম্পানি ফ্লোটিলার সাথে এক চুক্তিতে জাহাজের ব্যবসা থেকে উঠে গেলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর।(২০) ১৮৯০ এর শুরুতে রায় ধনপতি সিংহ-এর দুখানা স্টীমার একখানা কেষ্ট চাঁদপুর – ঝিকেরগাছার মধ্যে যাতায়াত করত আর একটা ঝিকেরগাছা থেকে কপোতাক্ষ দিয়ে কপিলমুনির মধ্যে যাতায়াত করত কিন্তু পরবর্তীকালে কেষ্টচাঁদপুর থেকে ঝিকেরগাছার স্টীমারটি কেষ্টচাঁদপুর থেকে তারপুর পর্যন্ত যেতে পারতকারণ নদীপথ মজে যাওয়ার ফলে স্টীমার পুরো পথ যেতে পারত না।
খুলনা থেকে যশোর পর্যন্ত ভৈরব নদী দিয়ে উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে ছোট ছোট লঞ্চ যাতায়াত করত। বরিশাল ছিল উনিশ শতকের শেষে লঞ্চ পরিবহণের একটি উল্লেখযোগ কেন্দ্র। অসংখ্য লঞ্চ এখান থেকে পূর্ববাংলার বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। লঞ্চগুলি সারাই ও মেরামত করার ব্যবস্থা বরিশালে ছিল। বরিশাল থেকে তুর্কী নদী দিয়ে লঞ্চ চলাচল করত। আর একটি পথ ছিল বরিশাল থেকে তুষখালি পর্যন্ত। বরিশাল থেকে ঢাকা নোয়াখালি যাবার স্টীমার পাওয়া যেত। বরিশাল জেলার উত্তরে নদীগুলিতে স্টীমার চলতে পারত না নদীতে মাঝে মাঝে চড়া পড়ার জন্য সে জন্য ছোট লঞ্চ জেলার সর্বত্র যাতায়াত করত। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বাখরগঞ্জ-এর সাহাবাজপুর এলাকায় কোন লঞ্চ- এর ব্যবস্থা ছিল না। মানুষরা দেশি নৌকা ব্যবহার করত। সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নদীবাঁধ-এর ওপর দিয়ে তারা যাতায়াত করত।
Leave a Reply