শশাঙ্ক মণ্ডল
দ্বিতীয় অধ্যায়
আজকের বিজ্ঞান পরাজয় মানবে না অতীতের বর্বর যুগে মানুষ আর ফিরে যাবে না- বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, ড্রেজিং-এর মধ্য দিয়ে আরও নতুন নতুন পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে নদীকে মানবকল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে এবং সুন্দরবন এলাকার প্রকৃতির এই সম্পদকে অবশ্যই কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে।
গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ এর নদীগুলির পুনরুজ্জীবন সম্পূর্ণ রূপে নির্ভর করছে সুন্দরবন এলাকার নদীগুলির মোহনামুখের সমস্যার সঠিক বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে। বিভিন্ন সময়ে নদীর উপরের দিকে অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তার নিম্নাংশের সমস্যাকে যথাযথ অনুধাবন না করে। নদীর মোহনাকে অবহেলা করে নদীর উপরের অংশের পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। নদীর উপরাংশ এবং মোহনার সমস্যা উভয়কে একই দৃষ্টিতে পর্যালোচনা করে নদীশাসনের বিষয়টা চিন্তা করা উচিত।
হলান্ড তার জুডার জী (Zuder Zea) পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে দশ লক্ষ florins খরচ করে হলান্ডের কৃষিযোগ্য ভূমির অংশ সমুদ্রগর্ভ থেকে বের করে এনেছে যার পরিমাণ প্রায় ৬ লক্ষ একর। হলান্ডের কৃষি-উৎপাদনে এই জমি এক বিরাট ভূমিকা গ্রহণ করেছে। সুন্দরবনের কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে সমুদ্র-সন্নিকটবর্তী নদীগুলিকে যথাযথ কাজে লাগানোর জন্য নদী-পরিকল্পনা, নিচু জমিকে বাঁধের সাহায্যে সমুদ্রের ঝড় নিয়ন্ত্রণ, সুষ্ঠুভাবে জলনিকাশী পরিকল্পনণা- নিচু জমিকে বাঁধের সাহায্যে সমুদ্রের জলস্ফীতি থেকে রক্ষা করে কৃষির উন্নতির প্রশ্নটি গুরুত্ব পেয়েছিল।
পরাধীন ভারতে কিন্তু তা কার্যকারী করা হল না। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য জলনিকাশী খাল কেটে জলাজমিকে চাষের আওতায় আনা হয়েছে; পূর্ববঙ্গাগত বিশাল জনস্রোত সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে বসতি গড়েছেন। ডাঃ বিধান রায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময় সুন্দরবন- এর ব্যাপারে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য ডেনিশ মিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হল। তারা ৬০০ কোটি টাকার এক বিশাল পরিকল্পনা পেশ করেন কিন্তু তা বাস্তবায়িত হল না, সে এক অন্য প্রসঙ্গ। সুন্দরবনের নদীপথ পুনরুদ্ধার, নদী-শাসনের বিষয়টি সুন্দরবনের উন্নয়নের স্বার্থে একান্ত অপরিহার্য এবং সবসময় এই বিষয়টি সামনের সারিতে উঠে আসবেই।
Leave a Reply