সারাক্ষণ ডেস্ক
ভারতকে শান্তিপ্রিয় দেশ উল্লেখ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকতে বলেছেন। গত বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডারদের প্রথম যৌথ সম্মেলনে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের পাশাপাশি বাংলাদেশের পরিস্থিতির উল্লেখ করে এ কথা বলেন। তিনি জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের এসব ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণেরও পরামর্শ দেন।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে রাজনাথ সিংয়ের এ বক্তব্য তুলে ধরা হয়। গত বৃহস্পতিবার বিবৃতিটি ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি) প্রকাশ করেছে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এমন মন্তব্য করা অনুচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।
কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বাংলাদেশে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির ঘটনা ভারতকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। দেশটির বিজেপি নেতৃত্ব শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি সমর্থনের কথা প্রকাশ্যে বলেছে। ফলে বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি তাদের বিচলিত করেছে।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দিন কী কী হয়েছিল-এ বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) মইন ইউ আহমেদ তার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে নিজের ভাষ্য তুলে ধরেন। ওই ঘটনায় এবারই প্রথম কথা বললেন বিদেশে অবস্থানরত মইন।
ভিডিওর শুরুতেই জুলাই-আগস্ট মাসের নিহতদের মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থ কামনা এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রার্থনা করে বলেন সরকার-ছাত্রজনতা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসার হত্যাকাণ্ড নিয়ে মইন ইউ আহমেদ বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার আমি যখন তদন্তের আদেশ দেই, তখন আমাকে বলা হয় যখন সরকার এই বিষয়ে তদন্ত করছে, তখন আমাদের এর প্রয়োজনটা কী? এই তদন্ত করতে সরকারের কাছ থেকে যে সাহায্য প্রয়োজন তা আমরা পাইনি।
সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী (বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা)। তিনি তার কাজ সঠিভাবে সম্পন্ন করতে পারেননি, কারণ অনেকে জেলে ছিল, অনেককে প্রশ্ন করা সম্ভব হয়নি। আমার কাছে এসে বেশ কয়েকবার তার সমস্যার কথা তুলে ধরেন। আমি আশা করি, তিনি এখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হয়েছেন। তিনি এই তদন্ত কমিটি পুনর্গঠিত করে জড়িতদের বের করতে সক্ষম হবেন। আমি সরকার গঠনের পর তাকে এই বিষয়ে অনুরোধ করেছি।
ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে পটুয়াখালীর পায়রা নদীর রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা বাড়াতে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর বেশির ভাগই নির্বাহ হয়েছে রিজার্ভের অর্থ দিয়ে গঠিত বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ) থেকে নেয়া ৫০০ মিলিয়ন (৫০ কোটি) ডলারের মাধ্যমে। খননের মাধ্যমে গত বছরের মার্চের মধ্যেই গভীরতা সাড়ে ১০ মিটারে উন্নীত করা হয়। কিন্তু এরপর প্রকল্পের খনন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার আগেই পলি পড়ে ভরাট হতে থাকে রাবনাবাদ চ্যানেলের তলদেশ। খনন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে চলতি বছরের ১৪ আগস্ট। আর সর্বশেষ ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৩ মিটারে। মাস শেষ হওয়ার আগেই তা ৭ মিটারের নিচে নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে এ চ্যানেল দিয়ে বড় জাহাজ চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বড় জাহাজ চলাচলের জন্য চ্যানেলটির অন্তত ৮ দশমিক ৭ মিটার গভীরতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় দেশে ডলার সংকটের মধ্যেও চ্যানেলটি খননে বিআইডিএফের মাধ্যমে রিজার্ভ থেকে দেয়া ৫০ কোটি ডলারের পুরোটাই অপচয় হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে মতপার্থক্য দূর করতে সরকার কাজ করবে উল্লেখ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের মতপার্থক্য দূর করতে তার সরকার কাজ করবে। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকায় কোনো দেশেরই লাভ হচ্ছে না। ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। ঢাকায় নিজ সরকারি বাসভবনে এই সাক্ষাৎকার দেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টনের সমস্যা অবশ্যই আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সমাধান করা উচিত। বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর এ বিষয়ে অধিকার রয়েছে। আমাদের আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। পানিবণ্টন ইস্যুটি ঝুলিয়ে রেখে কোনো উদ্দেশ্য সাধন হচ্ছে না উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভাটির দেশগুলোর কিছু অধিকার আছে এবং আমরা সেই অধিকার চাই। এই ইস্যুটি (পানিবণ্টন)…. ঝুলিয়ে রেখে কোনো উদ্দেশ্য সাধন হচ্ছে না। আমি যদি জানি, আমি কতটুকু পানি পাব, সেটা ভালো হতো।
এমনকি পানির পরিমাণ নিয়ে যদি আমি খুশি নাও হই, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। এই বিষয়টি সমাধান হতেই হবে। দ্রুত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির জন্য ভারতকে অন্তর্বর্তী সরকার চাপ দেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘চাপ একটি বড় শব্দ। আমি এটা বলছি না। তবে আমাদের একসঙ্গে বসে সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, এটা নতুন কোনো সমস্যা নয়, অনেক পুরনো সমস্যা। এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার কথা বলেছি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় পাকিস্তান আমলে। আমরা সবাই চেয়েছিলাম এই চুক্তি হোক, এমনকি ভারত সরকারও এর জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এর জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমাদের এটি সমাধান করতে হবে। সমপ্রতি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভয়াবহ বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে ঢাকার গণমাধ্যমের খবরের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের সংকটে আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একসঙ্গে কাজ করে এর সমাধান করতে পারি।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বগ্রহণ করার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা সাক্ষাৎ করেন। বিষয়টি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভারতের হাইকমিশনার যখন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন, আমি বলেছি যে কীভাবে বন্যা মোকাবিলা করা যায় সে ব্যাপারে আমরা আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের সমন্বয়ের জন্য কোনো চুক্তিরও প্রয়োজন নেই। মানবিক দিক বিবেচনা করেই এই সমস্যা সমাধানে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। কেননা, এটি গণমানুষের দুর্দশা লাঘব করবে। এ ধরনের মানবিক পদক্ষেপ সত্যিকার অর্থেই সহায়তা করবে। সীমান্ত হত্যার নিন্দা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, হত্যাকাণ্ড কোনো সমাধান নয়। কাউকে হত্যা করা কোনো সমাধান নয় কারণ এটি মোকাবিলার আইনি উপায় রয়েছে। সীমান্ত হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা একতরফা ব্যাপার। আপনার দেশ দখলের জন্য কেউ সীমান্ত অতিক্রম করছে না।
Leave a Reply