শ্রী নিখিলনাথ রায়
ফতেজঙ্গের বাটীর ভগ্নাবশেষ আজিও রাজমহলে দেখিতে পাওয়া যায়। মানসিংহস্থাপিত বারদুয়ারী, জুম্ম। মসজেদ, শিবমন্দিরপ্রভৃতি অদ্যাপি বিরাজ করিতেছে। এই জুম্মা মজ্জেদে একটি প্রকাণ্ড ইন্দারা আছে; তথায় সমস্ত দ্রব্য প্রস্তরীভূত হইয়া যায়। রাজমহল হইতে রাজধানী ঢাকায় অন্তরিত হয়; অনন্তর সুলতান সুজা পুনর্ব্বার রাজমহলে রাজধানী স্থাপন করেন। সুজা, অনেক মনোহর অট্টালিকা নির্মাণ করিয়া রাজমহলকে অধিকতর শোভাশালী করিয়াছিলেন।
তাঁহার নির্মিত অট্টালিকার মধ্যে সিংদালান নামে একটি বাটীর কিয়দংশ আজিও গঙ্গাতীরে বিদ্যমান আছে। উহার কৃষ্টি- প্রস্তরনির্মিত অনেকগুলি স্তন্তু আজিও সুজার শিল্পানুরাগের পরিচয় দিতেছে। সুজার পর রাজধানী পুনর্ব্বার ঢাকায়, পরে তথা হইতে মুর্শিদা- বাদে অন্তরিত হয়। মীর কাশেম মসনদে বসিয়া মুর্শিদাবাদ একরূপ ত্যাগই করিয়াছিলেন। তিনি মুঙ্গেরে অবস্থিতি করিতেন এবং বিহারের খাবতীয় স্থান তিনি সুরক্ষিত ও সুশোভিত করিতে যত্ন পাইয়াছিলেন। রাজমহলে নির্জনবাস করিবার জন্য তিনি নাগেশ্বরবাগ নামক রমণীয় উখানে একটি মনোরম অট্রালিকা নির্মাণ করেন।
রমণীপরিবৃত হইয়া বিশ্রামমুখ অনুভব করিবার জন্ত ইহা নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। কিন্তু তিনি সে বিশ্রাম ভোগ করিবার অবকাশ পান নাই। রাজমহলকে তিনি সুরক্ষিত করিতেও চেষ্টা করিয়াছিলেন। উধুয়ানালা রাজমহলের নিকটেই অবস্থিত, উধুয়ার উপত্যকা সৈন্যগণের অবস্থানের একটি সুন্দর স্থান। ইংরেজদিগের সহিত বিবাদ আরম্ভ হইলে, মীর কাশেম উবুন্নার পার্বত্যপথ অধিকার করিয়া সেই সুদৃঢ় স্থানে সৈন্যসমাবেশপূর্বক, ইংরেজদিগের বিহার প্রবেশের বাধাপ্রদানে ইচ্ছা করিয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহার সে ইচ্ছার পূরণ হয় নাই।
মীর কাশেম প্রথমতঃ ইংরেজদিগের সাহায্যেই বাঙ্গলার সুবেদারী লাভ করিয়াছিলেন। মীরজাফরের প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়ায়, ইংরেজেরা মীরজাফরকে নামমাত্র নবাব স্বীকার করিয়া, প্রথমে মীরকাশেমকে তাঁহার সহকারিরূপে রাজ্যশাসনের ভার দিতে ইচ্ছা করেন। কলিকাতার গবর্ণর ভান্সিটার্ট সাহের সেই জন্য মুর্শিদাবাদে আসিয়া মীরজাফরকে অনুরোধ করিলে, তিনি তাহাতে অস্বীকৃত হওয়ায়, ইংরেজেরা বলপূর্ব্বক মীর কাশেমকে সিংহাসন প্রদান করেন। মীরজাফর অগত্যা মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করিয়া কলিকাতায় বাস করিতে বাধ্য হন। মীরকাশেম সিংহাসনে আরোহণ করিয়া বিহার অভিমুখে যাত্রা করেন, সেই সময়ে বাদশাহ আলম-। গীরের পুত্র আলি গওহর (পরে শাহ আলম), বিহার আক্রমণের চেষ্টা করিতেছিলেন।
Leave a Reply