শ্রী নিখিলনাথ রায়
তথায় নবাবের সহিত তিনি এইরূপ বন্দোবস্ত করিয়া আসেন যে, যেখানে ইংরেজেরা শতকরা ৯ টাকা মাশুল দিবেন, দেশীয়দিগকে তথায় শতকরা ২৫ টাকা দিতে হইবে এবং ইংরেজদিগের অনুমতিপত্র ইংরেজ অধ্যক্ষগণের স্বাক্ষরিত হইয়া নবাবের রাজস্ব-কর্মচারিগণ কর্তৃকও পুনঃস্বাক্ষরিত হইবে। ভান্সিটার্ট মুঙ্গের হইতে কলিকাতায় আসিয়া কাউন্সিলে এই সমস্ত বিষয় বিবৃত করিলেন; কিন্তু সভ্যগণ তাহাতেও স্বীকৃত হইলেন না। তাঁহারা লবণের জন্য শতকরা ২০০ টাকা মাত্র মাশুল দিতে চাহিলেন এবং যেখানে তাঁহাদের লোকের সহিত নবাবের লোকের গোলযোগ হইবে, ইংরেজ অধ্যক্ষেরাই তাহার বিচার করিবেন বলিয়া প্রকাশ করিলেন। মীর কাশেম কাউন্সিলের এইরূপ মত শুনিয়া অত্যন্ত বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হইলেন।
অতঃপর তিনি রাজ্যমধ্যে বিনাশুল্কে বাণিজ্য করিবার জন্য কি দেশীয়, কি বিদেশীয় সমস্ত বণিদিগকে আদেশ দিলেন। বলা বাহুল্য, ইহাতে ইংরেজদিগের সর্ব্বনাশ উপস্থিত হইল। কাউন্সিলের সভ্যেরা পুনর্জার আমিয়ট ও হেসাহেবকে নবাবের নিকট পাঠাইলেন, কিন্তু কোন বিষয়েরই মীমাংসা হইল না। ক্রমে উভয় পক্ষের মধ্যে বিবাদ গুরুতর হইয়া উঠিলে, পরস্পরে যুদ্ধসজ্জায় প্রবৃত্ত হইলেন। সেই সময়ে নবাবের কোন কোন, কর্মচারী বন্দী-অবস্থায় কলিকাতায় অবস্থিতি করিতেছিল। আমিয়ট ও হেসাহেব নবাবের নিকট হইতে বিদায় চাহিলে, নবাব ঐ সকল কর্মচারীর মুক্তিপর্য্যন্ত হেসাহেবকে মুঙ্গেরে থাকিতে বলেন। হেসাহেবকেও বাধ্য হইয়া মুঙ্গেরে থাকিতে হয়।
‘আমিয়ট নৌকাযোগে মুঙ্গের হইতে কলিকাতায় রওনা হইলেন। নবাব রাজ্যের চতুদ্দিকে ইংরেজদিগের সহিত বিবাদের ঘোষণা করিয়া দিলেন। কলিকাতায় আগমন কালে আমিয়ট মুর্শিদাবাদে নবাবের লোকদ্বারা হত হইলেন। এদিকে পাটনার অধ্যক্ষ এলিস্ পাটনা অধিকার করিয়া বসিলেন, কিন্তু মীর কাশেমের দৈন্যগণ তাহা পুনরধিকার করিয়াছিল। যখন উভয় পক্ষের বিবাদ গুরুতর হইয়া উঠে, তখন উভয়েই পরস্পরকে বাধা দিবার জন্য ক্রমশঃ অগ্রসর হইতে আরম্ভ করিলেন। মেজর আডাসের অধীন ইংরেজ সৈন্য রণমদে উন্মত্ত হইয়া ধাবিত হইল।
মীর কাশেম সৈন্যদিগকে ইউরোপীয় রণকৌশলে সুশিক্ষিত করিয়াছিলেন। তিনি মুঙ্গেরে কারখানা করিয়া কামান, বন্দুক, গোলা প্রভৃতি নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। তাঁহার নির্মিত বন্দুক ইউরোপীয় বন্দুক অপেক্ষা উৎকৃষ্ট হইয়াছিল বলিয়া কোন ইংরেজ ঐতিহাসিক উল্লেখ করিয়াছেন।। -সমরু নামে এক জন ইউরোপীয় এবং গর্গিন খাঁ ও মার্কার প্রভৃতি কয়েক জন আর্মেনীয় তাঁহার সৈন্যদিগকে সুশিক্ষা প্রদান করিতে প্রবৃত্ত হন। গগিন্ খাঁ প্রধান সেনাপতির পদে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিলেন। গগিন খাঁ খাজা পিক্রস্ নামে কলিকাতার একজন আর্ম্মেীয় সওদাগরের ভ্রাতা। পিক্রসের দ্বারা গগিন খাঁর সহিত ইংরেজদিগের গোপনে পরামর্শ চলিত, এইরূপ সন্দেহ হওয়ায় অবশেষে নবাবের আদেশে গর্গিন খাঁ নিহত হন।
Leave a Reply