(স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে অঞ্চলভিত্তিক পরিবেশবান্ধব পর্যটন প্রকল্প “অতিথি”)
সারাক্ষণ ডেস্ক
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়গুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ব্র্যাক ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) উদ্যোগে কমিউনিটি ভিত্তিক ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন প্রসারের লক্ষ্যে “অতিথি” নামের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে মানুষের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি এই উদ্যোগ দেশের পর্যটন খাতের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নেও সহায়ক হবে। স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং তাদের সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দায়িত্বশীল পর্যটনের বিষয়গুলো প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ “অতিথি”।
“অতিথি” প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে মানুষের সামনে তুলে ধরা, শহুরে প্রজন্মকে তাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হওয়া সত্ত্বেও স্বল্প পরিচিত পর্যটন এলাকাগুলোকে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের নজরে নিয়ে আসা।
রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে গতকাল মঙ্গলবার ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে ব্র্যাক ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসব কথা জানানো হয়। বিটিবি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের এবং ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন সাধন এই সমঝোতা স্মারকের অন্যতম উদ্দেশ্য।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বাংলাদেশে পর্যটন খাতের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বলেন, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো পর্যটনের এমন একটি মডেল তৈরি করা যা স্থানীয় মানুষকে সহায়তার পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব ও টেকসই পর্যটন নিশ্চিত করবে। এটি শুধুমাত্র ট্যুর অপারেটর পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকেও সম্পৃক্ত করা হবে এবং এই পর্যটনের লভ্যাংশের ভাগ তারাও পাবে। এই উদ্যোগে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের যুক্ত হওয়াকে স্বাগত জানিয়ে তিনি “অতিথি’ প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারি সহায়তা ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান।
বিটিবি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, আমরা ২০২৪ থেকে ২০৪০ পর্যন্ত বাংলাদেশে পর্যটনের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছি। এই পরিকল্পনার একটি মূল দিক হল কমিউনিটি ভিত্তিক পর্যটনের প্রচার ও প্রসার। সরকারের মাস্টার প্ল্যানের অধীনে দেশের পাঁচটি স্থানে এটি নিয়ে কাজ চলছে।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিটিবির পক্ষ থেক আরো উপস্থিত ছিলেন সালেহা বিনতে সিরাজ, পরিচালক প্রশাসন ও অর্থ (যুগ্মসচিব); মহিবুল ইসলাম, উপ-পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং) এবং মোঃ মাজহারুল ইসলাম, উপ-পরিচালক (গবেষণা ও পরিকল্পনা)। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে আরো উপস্থিত ছিলেন ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ; ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা ড. মো. জাফর উদ্দীন; মৌটুসী বিশ্বাস, কনসালটেন্ট, অতিথি প্রকল্প; তাপস কুমার রায়, সিনিয়র ম্যানেজার, এডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেইঞ্জ; কাজী প্রত্যয় আহমেদ, সিনিয়র ম্যানেজার; তিথী দেব, রিসার্চ এন্ড ইনসাইটস স্পেশালিস্ট, সোশ্যাল ইনোভেশন ল্যাব।
প্রকল্পের পটভূমি: বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং ঐতিহাসিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি দেশ
হলেও আমাদের পর্যটনব্যবস্থা স্থানীয় বা বিদেশি পর্যটকদের সেভাবে আকৃষ্ট করতে পারেনি। যদিও বাংলাদেশে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য রয়েছে অবারিত সম্ভাবনা, কিন্তু অঞ্চলভিত্তিক পর্যটন শিল্প গড়ে না উঠা, পর্যটন শিল্পের সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে না পারা, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সম্পর্কে তথ্যের ঘাটতি এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগের কারণে অপার সম্ভাবনাময় এই খাতের খুব বেশি উন্নয়ন ঘটেনি। এই সম্ভাবনাগুলোকে তুলে ধরার লক্ষ্যে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে “অতিথি” নামের এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি দেশের স্থানীয় জনসাধারণ ও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মর্যাদা রক্ষা এবং তাদের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে বিশ্বব্যাপী এই সংস্কৃতিগুলোকে তুলে ধরা “অতিথি” প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং তাদের অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ “অতিথি”।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ, তাদের বৈচিত্রময় সংস্কৃতি আর জীবনযাত্রার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে “অতিথি” পর্যটকদের একটি ভিন্ন ধারার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ভ্রমণে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রাকে কাছ থেকে দেখা, অনুধাবন করা এবং তাদের সাথে একটি সংযোগ স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
Leave a Reply