সারাক্ষণ ডেস্ক
দেশে চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতির তেমন উন্নতি নেই। সবচেয়ে বেশি ভুগছে ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহের মানুষ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য বলছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান সক্ষমতা ২৭ হাজার ৮৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে জ্বালানিস্বল্পতায় ৩ হাজার ৮৪৬ আর রক্ষণাবেক্ষণ ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ৩ হাজার ৮৩৫ মেগাওয়াট ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কয়লার অভাবে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুরোদমে উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটি থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে ৮০০ মেগাওয়াট।
পিডিবি সূত্র বলছে, বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পুরো সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। বাগেরহাটের রামপাল কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি বন্ধ ছিল কারিগরি কারণে। গতকাল থেকে দুটিই চালু হয়েছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী কেন্দ্রের একটি ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণে, তাই অর্ধেক সরবরাহ হচ্ছে।
বকেয়া জটিলতায় ভারতের ঝাড়খন্ডে নির্মিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট সরবরাহ কমেছে। ৮০ কোটি ডলারের পাওনা আদানির। এর মধ্যে ৫০ কোটি ডলার পরিশোধের সময় শেষ হয়ে গেছে আরও আগে। সরবরাহ কমার পর গত সোম ও মঙ্গলবার ১০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। গতকাল আরও ৫০ লাখ ডলার দেওয়ার কথা থাকলেও তা পায়নি আদানি। দিনে প্রায় ৩০ লাখ ডলার বিদ্যুৎ বিল পাওনা হয় তাদের।
রাশিয়ার আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে (আরএনপিপি) দুর্নীতি বিষয়ে বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য প্রচার বন্ধে প্রকল্পের ব্যয় সংক্রান্ত এক বিবৃতি দিয়েছে ঢাকার রুশ দূতাবাস। অ্যাম্বাসি অব দ্য রাশিয়ান ফেডারেশন অব বাংলাদেশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) এ কথা বলা হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আরএনপিপি’র দুর্নীতি বিষয়ে প্রচারিত সংবাদ ও তথ্যগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ ও ‘মিথ্যা’ উল্লেখ করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ বিষয়ে আরও অযৌক্তিক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাতে, রাশিয়ান রফতানি ক্রেডিট ব্যবহারের পদ্ধতি এবং রূপপুর এনপিপি নির্মাণে এরই মধ্যে ব্যয় করা অর্থের পরিমাণ স্পষ্ট করা প্রয়োজন বলে মনে করি।’
এতে বলা হয়, আরএনপিপি-তে যেকোনো দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে না তার প্রমাণ হলো, রাশিয়ান ফেডারেশনের আইন অনুযায়ী কোনো রাষ্ট্রীয় রফতানি ঋণ প্রদানে সার্বভৌম ঋণ গ্রহীতার কাছে সরাসরি টাকা স্থানান্তর করা হয় না। রফতানি চুক্তির অধীনে বিদেশী গ্রাহককে প্রদত্ত যেকোনো পণ্য, কাজ বা পরিষেবাগুলোর অর্থায়ন রাশিয়ান রুবেলে রুশ অর্থ মন্ত্রণালয় রুশ রপ্তানিকারক সংস্থাকে সরাসরি দেয়। রুশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রদত্ত নথি অনুযায়ী এ লেনদেনগুলো করা হয় এবং পূর্বে আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর ওপর বিশেষায়িত বৈধ এজেন্ট ভিইবি-আরএফ দ্বারা সে নথিগুলো অনুমোদিত হয়। রাষ্ট্রীয় রফতানি ঋণের ব্যবহৃত পরিমাণ রুশ ফেডারেশনের প্রতি বিদেশী রাষ্ট্র ঋণ গ্রহীতার ঋণ হিসাবে বিবেচিত হয়।
বিবৃতিতে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এ প্রকল্পে আর্থিক লেনদেন ও ব্যয়ের তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
দফায় দফায় বৈঠকের পরও শিল্পাঞ্চলে থামছে না শ্রমিক অসন্তোষ। আন্দোলনের মুখে অনির্দিষ্টিকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে আশুলিয়া এলাকার ৫৮টি কারখানা। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে ৩২টি কারখানা গতকাল বন্ধ রাখতে হয়েছে। গাজীপুরে বিগ বস নামে একটি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৪০-৫০টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ১২টি কারখানা। এ হিসেবে দুই শিল্প এলাকার ৭০টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর সাধারণ ছুটি দিয়ে গতকাল বন্ধ রাখা হয় অন্তত ৭০টি কারখানা। শিল্প পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার মুখে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে, দিনকে দিন যা বেড়েই চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শিল্প সুরক্ষায় ওই এলাকার অন্তত ৫৮টি পোশাক কারখানা শ্রম আইন ২০০৬ সালের ১৩ (ক) ধারায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে গতকাল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয় ৩২টি কারখানায়। এর মধ্যে রয়েছে পোশাক খাতের কারখানাও।
শিল্প পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবির মুখে মালিকপক্ষ আলোচনা করলেও কোনো ধরনের সিদ্ধান্তে যেতে পারেনি। ফলে গতকাল ১৩ (ক) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অনেকগুলো কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে অনন্ত, মেডলার, শারমিন গ্রুপ, ডেকো, এস টোয়েন্টিওয়ান, মন্ডল নিটওয়্যার লিমিটেড, ম্যাংঙ্গো টেক্স, এআর জিন্স, এনভয়, স্টাইলিং গ্রুপ, ভিনটেক্স, ইয়াগী বাংলাদেশ, ক্রস ওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, অরোনিমা, ডেবনিয়ার, দ্য রোজ, জেনারেশন নেক্সট, সিনসিন, ডিসান সোয়েটার, সিগমা ফ্যাশনসহ আরো বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের কারখানা। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে অনেকগুলো কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এগুলোর ছাড়া অবশ্য বাকিগুলোয় উৎপাদন চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
জানতে চাইলে শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম গতকাল রাত ১০টার দিকে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আশুলিয়া এলাকায় ৫৮টি কারখানা ১৩(ক) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আরো ৩২টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে যৌথ বাহিনী।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দাবির প্রেক্ষিতে সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি এই ঘোষণা দেন। আধাঘণ্টার বেশি সময় স্থায়ী প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। ভাষণে ড. ইউনূস চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া, শিল্প-কারখানার বর্তমান পরিস্থিতি, নিত্যপণ্যের দাম কমানো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, আর্থিক খাত, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, শিল্প-কারখানা বন্ধ হলে অর্থনীতিতে বিরাট আঘাত পড়বে, সমস্যার সমাধান বের করবো, কারখানা খোলা রেখে অর্থনীতির চাকা সচল রাখুন। ন্যায্যতা এবং সমতার ভিত্তিতে ভারতসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্র সমূহের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমাদের দেশ যেন বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়, কোনো নেতা বা দল নয়, দেশের পরিকল্পনা যেন মানুষকেন্দ্রিক হয়। দেশের মানুষকে আর ফাঁকি দেয়া চলবে না। কর্মসংস্থান তৈরি করবে এমন প্রকল্পগুলোকে সরকার অগ্রাধিকার দেবে। লুটপাট ও পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যের দাম কমাতে শুল্কহার হ্রাসে এনবিআর’কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভাষণে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ারও আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণ-অভ্যুথানে শহীদদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। আহত শিক্ষার্থী, শ্রমিক, জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। এই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার ‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন’- প্রতিষ্ঠা করেছে। সকল শহীদ পরিবার এবং আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসহ তাদের পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এই ফাউন্ডেশন গ্রহণ করছে।
ফেনীসহ কয়েকটি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা নিয়ে তিনি বলেন, গত মাসে কুমিল্লা-নোয়াখালী সিলেট অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা এসব এলাকার মানুষকে হতভম্ব করে দিয়েছে। এখানে বেশির ভাগ এলাকায় কোনোদিন বন্যা হয়নি। তারা বন্যা মোকাবিলা করায় অভ্যস্ত নন। দেশপ্রেমিক সশস্ত্রবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে বন্যা আক্রান্ত সবাইকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ কম হয়েছে। এর পরপরই এনজিও এবং সাধারণ মানুষ দেশের সকল অঞ্চল থেকে দলে দলে এগিয়ে এসেছে। আমি বিশেষ করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দেশের সকল দুর্যোগকালে তারা সবসময় আন্তরিকভাবে এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে বন্যা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে তাদের সৈনিক এবং অফিসাররা দিনের পরদিন যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছে তার কোনো তুলনা হয় না। জনজীবনে স্বস্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাদের ভূমিকা অনন্য। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে আমি ধন্যবাদ জানাই তাদের সততা, ত্যাগ ও অসীম দেশপ্রেমের জন্য। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বন্যা, খরা, ঝড়, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় সহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে আপনারা সকলের শেষ ভরসার স্থান। দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে আপনারা দেশের মানুষের পাশে থেকেছেন। দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, সার্বভৌমত্বের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দেশ গঠনেও আপনারা সবার আগে এগিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, বন্যা এখন চলে গেছে। কিন্তু পুনর্বাসনের কঠিন কাজ আমাদের সামনে রয়ে গেছে। সকলের সহযেগিতায় আমরা পুনর্বাসনের কাজটি সফলভাবে সমাধান করতে চাই।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যেসব ভাই-বোনেরা তাদের গত ১৬ বছরের বেদনা জানিয়ে তার প্রতিকার পাওয়ার কর্মসূচি দিচ্ছেন আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের ন্যায্য আবেদনের কথা ভুলে যাবো না। আমরা সকল অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের দায়িত্বকালে যথাসম্ভব সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। আমি আবারও অনুরোধ করছি আপনার যাতায়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি থেকে বিরত থাকুন। জাতি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।
Leave a Reply