বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন

করোনায় চাকরি হারিয়ে সফল উদ্যোক্তা নিলুফা

  • Update Time : শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১.১২ পিএম

রেজাই রাব্বী

নিলুফা আক্তার। উদ্যোগের নাম নিসার শিল্প।  কাজ করছেন রান্না নিয়ে। তার উদ্যেক্তা জীবনের সংগ্রাম ও স্বপ্নের কথা বলেছেন সারাক্ষণ প্রতিবেদকের সঙ্গে।

এতো উদ্যোগ থাকতে এই উদ্যোগ বেছে নেওয়ার কারণ?

আমার হাতের রান্না করা খাবার আমার অফিস কলিগ, আত্নীয় স্বজনরা খুব তৃপ্তি নিয়ে খেতো। তখন থেকেই একটা আত্নবিশ্বাস কাজ করতো রান্নার উপর। আর সেজন্যই হয়তো খাবার নিয়ে কাজ করা আমার। নিলুফারের খাবারের তালিকায় আছে, বিভিন্ন ধরনের আচার (সিজনালি সব ফলের আচার), স্পাইসি গার্লিক পিনাট(আমার পেইজের ইউনিক একটা আইটেম), ঘি এ ভাজা লাচ্ছা সেমাই, বিভিন্ন ধরনের বিরিয়ানি (কাচ্চিটার রিপিট কাস্টমার অনেক),  ঘরোয়া কিংবা অফিসিয়ালি কোন অনুষ্ঠানে আমার খাবার যায়, শাহী রোস্ট, বিফ, মাটন ভুনা, খিচুড়ী, কাবাব, ফিরনী, জিরা পানি। খাবার ছাড়াও আমার পেইজে আরও আছে আমার হাতে বানানো হারবাল তেল, হারবাল সোপ।  খাবারের মতন তেল ও সাবানেরও রিপিট কাস্টমার অনেক আর কাস্টমার রিভিউ অনেক। আলহামদুলিল্লাহ।

উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প জানতে চাই?

স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই আমার জব শুরু। একটা স্কুলে শিক্ষকতা করতাম। বিয়ের পর শিক্ষকতা ছেড়ে বায়িং হাউজ+গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কমার্শিয়াল পদে নিযুক্ত হলাম। অফিসে সবসময়ই আমার রান্না করা খিচুড়ি,  বিরিয়ানি,  কেক, আচার নিয়ে যেতাম কলিগদের জন্য। সবাই খুব মজা করে খেতো আর তারিফ করতো আমার রান্নার। কলিগরা বলতো জবের পাশাপাশি  ফুড নিয়ে ওনলাইনে বিজনেস করতে। সময় আর সুযোগ হয়ে ওঠেনি তখন। অফিস শেষ করে বাড়ী ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যেতো। ফুড নিয়ে কাজ করা আর হয়ে উঠতোনা। করোনার ধাক্কায় যখন আমার জবটা চলে যায়। তখন ভেঙে পরেছিলাম একদমই। সাপোর্ট হয়ে পাশে ছিলো আমার বোন, বোন জামাই। এতিম ডিভোর্সি মেয়ের ভরসা হয়ে তারাই পাশে ছিলো আমার।  বোন,  বোন জামাই সান্তনা দিতেন আর বলতেন-+এতো টেনশানের কি আছে, আমরা আছিতো। আমি কারোর উপর বোঝা হয়ে থাকা মেয়ে নই। কিছু একটা করতে হবে আমার।

ভাইয়া(বোন জামাই) সবসময় বলতেন–তুমি অনেক সাহসী আর যোগ্যতা সম্পন্ন একটা মেয়ে। তুমি কিছু একটা করে দেখাতে পারবা এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ভাবতে লাগলাম কি করা যায় এই পেনডামিক সিচুয়েশনে।  তখন মাথায় ঘুরতে লাগলো খাবার নিয়ে কাজ করার প্রত্যয়টা।  আমের সিজন ছিলো তখন। বাজার থেকে কয়েক কেজি আম কিনে কয়েকপদের আচার বানিয়ে সুন্দর করে ফটোশেসন করলাম। (এখানে একটু বলে রাখি–নিসার শিল্প নামের ৩০০ র মতন মেম্বার নিয়ে একটা পার্সোনাল ফেইসবুক গ্রুপ  ছিলো আমার। আমরা দুবোন এখানে আমাদের হাতের বিভিন্ন কিছু বানিয়ে পোস্ট করতাম। যেমন–ক্রোসেটের পন্য, পেইন্টিং, রান্নাবান্নার ছবি সহ অনেক শৈল্পিক শিল্পর ছবি,  তো সেই আচারের পোস্ট করলাম ওই গ্রুপে। ক্যাপশনে লিখে দিলাম বিজনেস পারপাস। আলহামদুলিল্লাহ প্রথম পোস্টেই ভালো সাড়া পেলাম গ্রুপ মেম্বারদের কাছ থেকে। করোনাতেই তারা ঘরোয়া প্রোগ্রামের জন্য আমার কাছ থেকে খাবার অর্ডার করা শুরু করলো। একদিকে আচার অন্যদিকে বিরিয়ানি,  রোস্ট, মাংস এসব ডেলিভারি যাচ্ছিলো। ডেলিভারি তখন আমি আর ভাইয়া করতাম। ভাইয়ার বাইক থাকাতে অনেক সুবিধা হতো ডেলিভারিতে।  এভাবে চলতে লাগলো। প্রথম মাসেই লাভ হলো ৭০%।

উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবন্ধকতা জানতে চাই?

বিজনেসের যখন দেড় মাস বয়স। তখন আমার ফেইসবুক আইডিটা হ্যাক হয়ে যায়। আমি আমার বিজনেস গ্রুপেও ঢুকতে পারছিনা। আর পেইজ তখনও ওপেন করিনি। কারন সব সেইল আমার গ্রুপ থেকেই হতো। মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। আইডিটা রিকোভার করতেই পারছিলামনা৷ নতুন আইডিও ওপেন হচ্ছিলোনা। তখন বাধ্য হয়ে বোনের আইডি থেকে গ্রুপ চালাতাম। খাবারের পোস্ট করতাম। আলহামদুলিল্লাহ সেইল আবার শুরু হলো। প্রায় ১৫ দিন পর এক বন্ধুর সহযোগিতায় নতুন আইডি খুলতে পারি। তখন নিসার শিল্প নামে পেইজ ওপেন করি। আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে তা এখনও চলছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024