বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

প্রকৃতিবিদের কাহিনী (কাহিনী-২৮)

  • Update Time : শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

পিওতর মান্তেইফেল

শাদা খরগোস

বসন্তে খরগোসেরা তাদের ‘ওভারকোট খোলে’, অর্থাৎ শীতে গজানো ঘন লম্বা লোম তার দলায় দলায় খসে পড়ে, তার জায়গায় দেখা দেয় গ্রীষ্মকালীন বাহারে পোষাক, অর্থাৎ লোম গজায় ছোটো ছোটো আর পাতলা। খরগোসদের লোম বদলায় মার্চ’, এপ্রিল, এমনকি মে মাসেও; কী রকম জল-বায়ুর পরিস্থিতিতে তাদের বাস, তার ওপর সেটা নির্ভর করে।

সারা গ্রীষ্ম শাদা খরগোসের গা ঢাকা থাকে লালচে-খয়েরী রঙের অপেক্ষাকৃত পাতলা লোমে। কিন্তু শরৎ এলে মনে হবে যেন লোম না বদলিয়েই তা ফের শাদা ও ঘন-লোমশ হয়ে ওঠে।

গ্রীষ্মোপযোগী ছোটো ছোটো পাতলা লোমের স্থলে এই শাঁতের লোমের বদলিটা হয় বেশ দ্রুত সাধারণত দু’তিন সপ্তাহের মধ্যে। মাঝে মাঝে খরগোসের মাথার সবটা শাদা হয় না, এমনকি শীতকালেও থাকে ছোপ-ছোপ। প্রায়ই শীতে শাদা খরগোসের কান, নাক, গাল আর চোখের ওপরটাতেই বাদামী-ধূসর দাগ থেকে যায়। যেসব খরগোসের গরমের লোম বদলিয়ে শীতের লোম গজায় বড়ো বেশি দেরি ক’রে, একেবারে ঠান্ডা পড়ার মুখে, রাত বড়ো হতে শুরু করার সময়, তাদের বেলাতেই এটা হয়।

হেমন্তের ছোটো দিনগুলোতেই শুরু হয় রঙ বদলানো আর শাদা লোম বাড়ার প্রক্রিয়া।

চিড়িয়াখানায় হেমন্তে খরগোসের রঙ বদলানো পর্যবেক্ষণ করে আমরা প্রশ্ন রাখি: কিন্তু গ্রীষ্মের লোমগুলোর দশা কী হল?

তা খসে পড়তে দেখা যায় কম।

তার জবাব আমরা পাই একটা পরীক্ষা চালিয়ে। জুলাইয়ের শেষে তিনটে শাদা খরগোসকে বাসমা’র রঙ, মেহেদীর রঙ আর হাইড্রোজেন পেরোক্সাইড মাখাই।

রঙ দাঁড়াল তাদের জ্বলজ্বলে বাদামী চেহারা, একেবারে হেমন্ত পর্যন্ত তারা এই অস্বাভাবিক রঙ নিয়ে গরব করে বেড়াল। কিন্তু নভেম্বরের মাঝামাঝি আসতেই

‘বাদামীরা’ হয়ে গেল একেবারে শাদা, শুধু কানের ডগাটি রয়ে গেল কালো। নতুন নতুন বহু লম্বা লম্বা শাদা লোম গজিয়ে গ্রীষ্মে রাঙানো লোমগুলোকে পুরোপুরি ঢেকে ফেললে।

গুণে দেখা গেল, গরমকালে রাঙানো প্রতিটি লোম পেছ গজিয়েছে ৮-১০টি করে শীতকালের লোম।

আরো দেখা গেল, কোনো কোনো শাদা লোমের ওপরটা রয়ে গেছে বাদামী। তার মানে, খরগোসের শীতের লোম গজাতে থাকে জুলাই থেকেই, যদিও প্রবলভাবে তা বাড়ে কেবল হেমন্তেই।

হেমন্তে শাদা লোম দ্রুত বেড়ে উঠে গ্রীষ্মের কালচে লোম ঢেকে ফেলে।

চুল আমরা গুণি খরগোসের পিঠ থেকে ছোটো এক টুকরো চামড়া চে’ছে নিয়ে। সেটা কাটার সময় খরগোসটার কোনোই ভাবান্তর হল না, যেন টেরই পায় নি যে তার গা থেকে ‘জীবন্ত ছাল ছাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে’। সত্যিই, শাদা খরগোসদের খুব একটা বৈশিষ্ট্য আছে, তাদের চামড়ার ওপরের স্তর (এপিতেলি) অনেকখানি চে’ছে নিলেও বড়ো একটা রক্ত বেরয় না। ধরে নিতে হয় যে বিশেষ যন্ত্রণাও বোধ করে নাসে।

একবার শিকারে জখম একটা খরগোসকে মাটি থেকে তোলা হয় তার লোম মুঠো করে চেপে।

বিষৎ পরিমাণ চামড়ার একটা পাতলা শুন্তর রয়ে গেল হাতে, কিন্তু চামড়ার অনাবৃত পুরু অংশটার কোথাও বিন্দুমাত্র রক্ত দেখা গেল না।

আরেকবার শীতে আমরা এক খরগোসের সন্ধান পাই, শেয়াল তাড়া করেছিল তার পেছনে।

শেয়ালটা খুব চেপে ধরেছিল খরগোসকে, থেকে থেকেই কোনাচি মেরে তার পথ আটকাচ্ছিল। দু’জায়গায় সে একেবারে এসে পড়েছিল তার শিকারের কাছাকাছি, তাহলেও দ্রুতগামী খরগোসটাকে সে ধরতে পারে নি: পাশ দিয়ে লাফিয়ে গিয়ে সে তার চামড়া কামড়ে ধরে…..

কিন্তু দাঁতে কেবল খরগোসের একটুকরো চামড়া নিয়েই তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। খরগোস ততক্ষণে অনেক এগিয়ে গেছে।

দু’বার দেখা গেছে, শেয়ালের পায়ের চিহ্নের কাছে লুটচ্ছে উগড়ে-ফেলা খরগোসের লোম আর চামড়া, কিন্তু বরফের ওপর এক ফোঁটা রক্তকেও টকটক করতে দেখা যায় নি। খরগোস ধরা পড়ে নি।

শাদা খরগোসরা বে’চে যায় তাদের চামড়ার আলগা উপরি-স্তরের দৌলতে, যেমন কিছু কিছু টিকটিকি বাঁচে তাদের সহজে খসে-আসা লেজ দিয়ে।

একই রকম ব্যাপার দেখা যায় হ্যাজেল-গ্রাউজদের বেলায়। প্রচন্ড ভয় পেলেই তার পালক ঝরে যায় খুব সহজে, অথচ বনে বেশ জোরে উড়ে গেলেও তা খসে না।

শিকারীর গুলি খেলেও তাই হয়: মৃত্যু খিচুনিতে ছটফট করে পাখিটা, আর তার চারিপাশে গড়ে ওঠে ঝরে পড়া পালকের বেষ্টনী। দ্রুত ঘনিয়ে আসা বিপদের মুখে হ্যাজেল-গ্রাউজ যত তাড়াতাড়ি পালক ছড়ায় তাতে বাজ বা অন্য কোনো শিকারী পাখির ছোঁ থেকে সে মাঝে মাঝে বে’চে যায়, উড়ন্ত পাখিটার নরম পালকের মেঘে লক্ষ্যচ্যুত হয় তারা। তাই, এই বৈশিষ্ট্যটাকে ধরা উচিত আত্মরক্ষা প্রতিযোজন ব’লে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024