ফারহাত জাভেদ
(সতর্কতা: এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু কিছু পাঠকের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে)
ঘটনাটা ১৯৭৩ সালের ২৭ নভেম্বর রাতের।
হামলার সময় মুম্বাইয়ের কিং এডওয়ার্ডস কলেজে নার্স হিসেবে কাজ করতেন অরুণা শানবাগ। ২৬ বছরের এই যুবতীকে ধর্ষণ করে সেই হাসপাতালেই কর্মরত ওয়ার্ড অ্যাটেনডেন্ট সোহনলাল বাল্মীকি। তারপর তার গলায় কুকুরের গলার বেল্ট দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
আক্রমণের তীব্রতায় তার মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। প্রাণে বেঁচে গেলেও পরবর্তী চার দশক এই হাসপাতালে কোমায় আচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলেন অরুণা শানবাগ।
অভিযুক্ত সোহনলাল বাল্মীকিকে ‘হত্যা ও চুরির’ দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ধর্ষণের অভিযোগ চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
ভারতীয় সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী, জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি আবার একই শহরের অন্য একটা সরকারি হাসপাতালে চাকরি পেয়েছিলেন।
অন্যদিকে এই ভয়াবহ ঘটনার ৪২ বছর পর ২০১৫ সালে যে হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন অরুণা শানবাগ, সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
ভারতীয় গণমাধ্যমে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে ব্যাপকভাবে লেখালিখি হয়েছিল। তারপর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে এবং হাসপাতালে ডাক্তারও চিকিৎসা কর্মী, বিশেষত নারী কর্মীদের ওপর সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে।
সম্প্রতি কলকাতায় এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা কেন্দ্র করে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারত। এই আবহে পাকিস্তানের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, সেই বিষয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
বিবিসি পাকিস্তানের কয়েক ডজন চিকিৎসক ও নার্সের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছে। সেই সময় নারী চিকিৎসক এবং নার্সরা জানিয়েছেন যে পাকিস্তানে বিপুল সংখ্যক নারী স্বাস্থ্যকর্মী রোগী, তাদের দেখা-শোনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি এবং আত্মীয়দের দ্বারা শারীরিক ও মৌখিকভাবে হেনস্থার শিকার হন।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালেই সুরক্ষা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। শুধু তাই নয়, জবাবদিহি করার কোনওরকম প্রক্রিয়াও নেই।
তবে এই নারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অভিযোগ করেছেন তাদের কাছে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হলো হাসপাতালে তাদেরই অন্য সহকর্মীদের দ্বারা যৌন হেনস্থা ও নির্যাতন।
বিবিসি রিসার্চের হাত ধরে প্রকাশ্যে এসেছে এক বিপজ্জনক প্রবণতা। যেখানে দেখা গিয়েছে পাকিস্তানের হাসপাতালে যৌন হয়রানির ঘটনা নিয়ে ‘নীরবতা’, ‘লজ্জা’ ও ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ কিন্তু এখনও অব্যাহত রয়েছে।
এক ডজনেরও বেশি নারী চিকিৎসক ও নার্স বিবিসির কাছে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। সেখানে তারা বলেছেন গত কয়েক বছরে হাসপাতালে, বিশেষত সরকারি হাসপাতালে তারা বা তাদের সহকর্মীরা কীভাবে আক্রমণ ও নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন।
এদের মধ্যে বেশিরভাগই পরিচয় গোপন করার শর্তে কথা বলেছেন। কারণ তারা তাদের পরিবারের কাছ থেকে হেনস্থা, চাকরি হারানোর ভয় বা ‘সম্মান হারানোর ভয়’ পেয়েছেন।
প্রতীকী ছবি- পাকিস্তানে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কর্মরত নারীকর্মী ও চিকিৎসকদের সুরক্ষা ব্যবস্থা উদ্বেগজনক।
করাচীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক নারী সিভিল সার্ভিস হাসপাতালের মেডিকো লিগ্যাল অফিসে (এমএলও) অফিসে পৌঁছান। সিন্ধের প্রথম অ্যান্টি রেপ সেন্টার বা ধর্ষণ বিরোধী কেন্দ্রও এখানেই অবস্থিত।
এমএলও অফিসের কর্মীদের কাছে তিনি রিপোর্ট জমা দেন এবং ১০ দিন আগে শহরের একটা বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনের সময় একজন সার্জন তাকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেন। এরপর তার শারীরিক পরীক্ষা করা হয় এবং তার রিপোর্টও প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু অভিযোগকারী সিদ্ধান্ত নেন- তিনি এই নিয়ে আর এগোবেন না।
বিবিসির সঙ্গে কথোপকথনের সময় একজন নার্স তার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তার মতে, ‘নার্সদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা হলো অপারেশন থিয়েটার।’
তিনি জানিয়েছেন অপারেশন থিয়েটারে সব সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসকরা উপস্থিত থাকেন জুনিয়র নার্সদের সঙ্গে। এখানে নার্সদের, বিশেষত তরুণ ও শিক্ষানবিশ নার্সদের কাজ হলো অপারেশনের সময় এই ডাক্তারদের সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম এগিয়ে দেওয়া এবং সহযোগিতা করা।
ওই নার্স বলেছেন, “সেই সময় আমরা খুব সতর্ক থাকি যাতে কোনো ভুল না হয়ে যায়। চাপও খুব বেশি থাকে। এই পরিস্থিতিতে আপনারই আশেপাশে থাকা কিছু চিকিৎসক যখন আপনাকে ভুলভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন, তখন আপনি বুঝতে পারেন না যে কী করা উচিৎ।”
আরেকজন নারী বিবিসিকে জানিয়েছেন কেন তাকে ইসলামাবাদে নার্সিং প্রশিক্ষণ ছেড়ে দিতে হয়েছিল। তার অভিযোগ, প্রশিক্ষণ ছেড়ে দেওয়ার কারণ অপারেশন থিয়েটারে এক চিকিৎসক তাকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন।
“আমাকে অশালীনভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা করা হতো। অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি দিতে গেলে আমার হাত স্পর্শ করত। বারবার আমার গা ঘেঁষে থাকত। কাঁধে কাঁধ ঘষে নানান অঙ্গভঙ্গি করত আর আমাকে এই সমস্ত কিছুই সহ্য করতে হতো।”
“কারণ বাবার মৃত্যুর পর তখন আমি সবেমাত্র ম্যাট্রিক পাশ করে স্কলারশিপ পেয়ে নার্সিং কোর্সে ভর্তি হয়েছি। ওই চিকিৎসক (অভিযুক্ত) একজন সিনিয়র ডাক্তার। আমি অভিযোগ করলেও কেউ শুনত না।”
একসময় এই হেনস্থার কারণে নার্সিং প্রশিক্ষণ ছেড়ে দেন তিনি।
এলিজাবেথ থমাস (নাম পরিবর্তন করা হয়েছে) নামের আরেক নার্স বিবিসিকে জানিয়েছেন রোগীদের আত্মীয়দের পাশাপাশি হাসপাতালের কর্মীদের হাতেও জুনিয়র এবং সিনিয়র নার্সদের হেনস্থা হতে হয়।
তার কথায়, “অভিযোগ করে লাভ নেই, কারণ কেউ শোনে না। আপনি যদি জুনিয়র নার্স হন তাহলে আপনার কথা শোনা হবে না। এখানে প্রচলিত সংস্কৃতিই হলো তদন্ত না করেই নার্সকে দোষারোপ করা। স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়- সিনিয়র চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করার সাহস আপনার হয় কী করে?”
পাকিস্তানে নারী চিকিৎসকদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনার কোনও সরকারি তথ্য পাওয়া যায় না।
করাচীর প্রধান পুলিশ সার্জন ডা. সুমাইয়া সৈয়দ জানিয়েছেন যে জবাবদিহি প্রক্রিয়ার প্রতি অবিশ্বাসই হলো এক্ষেত্রে সমস্যা।
“এমন নয় যে এ জাতীয় ঘটনা ঘটছে না। সমস্যা হচ্ছে সেগুলো রিপোর্ট করা হয় না। রোগীর দ্বারাও একজন নার্স হেনস্থা হতে পারেন। তার (নার্সের) সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হতে পারে যা মৌখিক ও শারীরিক দুই-ই হয়, তাকে অনুপযুক্তভাবে স্পর্শ করা বা যৌন হেনস্থা করা হতে পারে। আমাদের অনেক ঘটনা এসেছে, অনেক মামলা আছে।”
পাকিস্তানে নারী চিকিৎসকদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনার কোনও সরকারি তথ্য পাওয়া যায় না।
কিন্তু মার্কিন সংস্থা ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ’ তাদের প্রতিবেদনে বেসরকারি জরিপের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাদের সমীক্ষা বলছে, পাকিস্তানে ৯৫ শতাংশ নারী চিকিৎসা কর্মী মৌখিক নির্যাতন এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। ৫৯ শতাংশ নারী নার্স কর্মক্ষেত্রে হয়রানির এবং ২৯ শতাংশ যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ৩০ শতাংশ নারী চিকিৎসক কোনো না কোনোভাবে যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছেন।
পাকিস্তান ইকোনমিক সার্ভের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৪ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ পাকিস্তানে মাত্র ২ লক্ষ ৯৯ হাজার চিকিৎসক রয়েছেন, যার অর্ধেকেরও কম নারী। আর নার্সের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৭ হাজার।
চিকিৎসক ডা. সুমাইয়া সৈয়দ আরও একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করেছিলেন যেখানে একজন তরুণী নার্সকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
“সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক একজন নার্সকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে তার হোস্টেলে নিয়ে যান। তবে সেখানে তিনি একা ছিলেন না। সঙ্গে ছিল তার দুই বন্ধু চিকিৎসকও। ভবনের ছাদ থেকে ঝাঁপ দেন ওই নার্স। কোমায় চলে যান তিনি।”
“সেদিন ওই তরুণী নার্সকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে কোনও কিছুই সম্মতিতে হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই তরুণী অভিযোগ না করার সিদ্ধান্ত নেন।”
“পরে উনি চাকরি ছেড়ে চলে যান। আমি জানি না সেই নার্স আজ কোথায়। তবে তিনি যদি মামলা করতেন তাহলে তার বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ আনা হতো। সবচেয়ে বড় কথা হলো কে কার সঙ্গে লড়াই করবে! তাই তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন।”
এমন আরও ঘটনা রয়েছে। তারই একটার বিষয়ে ডা. সৈয়দ বলেন, “অন্য একটা সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসককে কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছিল। যে ব্যক্তি তাকে ব্ল্যাকমেল করেছিল তিনিও একজন চিকিৎসক যিনি হাসপাতালের শৌচাগারে লুকিয়ে ওই নারী চিকিৎসকের ভিডিও তৈরি করেছিলেন।”
“তবে ওই নারী তারই হাসপাতালের কয়েকজন সিনিয়র নারী চিকিৎসকের সাহায্য পেয়েছিলেন। তারা (সিনিয়র নারী চিকিৎসকরা) পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টা সমাধানের চেষ্টা করেন।”
ডা. সৈয়দ জানিয়েছেন হেনস্থার শিকার ওই চিকিৎসক ঘটনার কথা কাউকে জানাতে চাননি। তার কথায়, “নারী চিকিৎসক চাননি বিষয়টা কেউ জানুক বা তার পরিবারের কাছে পৌঁছাক।”
আরেক তরুণী চিকিৎসকের ঘটনা তিনি জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে অবশ্য অভিযোগ দায়ের কথা হয়েছিল, কিন্তু তাতে বিশেষ সুরাহা হয়নি।
তিনি বলেন “একজন নারী চিকিৎসককে তার হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তার মারধর ও যৌন হেনস্থা করেন। স্বামী এবং শ্বশুরের সহায়তায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই নারী চিকিৎসক এবং পরবর্তী ছয় মাস ধরে ঘটনার তদন্ত চলতে থাকে।”
“চিকিৎসকেরা তদন্ত কমিটিকে পূর্ণ সহযোগিতা করলেও শেষ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। ওই নারী জানিয়েছিলেন এই পুরো সময় কীভাবে হাসপাতালের অন্যান্য সহকর্মীরা তার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন এবং তারা তাকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নও করে দেন।”
সরকারি হাসপাতালে কর্মরত এক নারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, হাসপাতালে কোনও আনুষ্ঠানিক কমিটি নেই যেখানে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন।
তার কথায়, “হয় হেনস্থার ঘটনায় জড়িত চিকিৎসকরা বা তাদের বন্ধুরা এইসব কমিটিতে রয়েছেন। ইয়ং ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন নামে আমাদের একটা প্লাটফর্ম আছে বটে। কিন্তু সেখানেও সেই একই লোক আছে। তাহলে অভিযোগ জানিয়ে কেউ কেন নিজের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলতে চাইবে?”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নারী চিকিৎসক ও নার্স তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বিবিসিকে জানিয়েছেন।
ডা. আমিনার (নাম পরিবর্তন করা হয়েছে) কাছে আট বছর আগে সরকারি হাসপাতালে রেসিডেন্ট ডক্টর হিসেবে কাজ করার চেয়েও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের ওয়ার্ড সামলানোটা বেশি মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী বিষয় ছিল। কারণ সেখানে (রোগীদের ওর্য়াডে) একজোড়া চোখ ছিল যা তাকে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করে যেত।
“লোকটা ডাক্তার হিসাবে আমার সিনিয়র এবং তার খুবই শক্তিশালী ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল। অকারণে আমার সাথে খোলামেলা হওয়ার চেষ্টা করত। ওয়ার্ডে রোগীদের পরীক্ষা করার সময় আমার কাছ ঘেঁষে দাঁড়াত। আমার হাতে কোনও ফাইল দেখলে সেটা ঝুঁকে পড়ে দেখত।”
“বড় বড় কথা বলে কোনও না কোনওভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা করত। সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল আমার নাইট শিফট। ভোর তিনটে-চারটের দিকে ওয়ার্ডে এসে আজেবাজে কথা বলার চেষ্টা করত।”
এই আচরণে বিরক্ত হয়ে ওই চিকিৎসক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। ডা. আমিনা বলেন, “অভিযোগ জানানোর পর আমাকে বলা হয়েছিল- আপনি এখানে এসেছেন সবে আট দিন হয়েছে। আপনার কাছে এর কী প্রমাণ আছে…আমরা এই ব্যক্তিকে সাত বছরেও শোধরাতে পারিনি। আপনার অভিযোগে কিছুই বদলাবে না আর আপনাকে কেউ বিশ্বাসও করবে না।”
নারী চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা অভিযোগ করতে গেলে তাদের ‘নিরুৎসাহিত’ করা হয় বলেও তার অভিযোগ।
“বহু নারী চিকিৎসক এবং নার্স ঘটনার ভিডিও তৈরি করে প্রমাণসহও অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ঘটনা তেমন কিছুই হয়নি। হেনস্থার ঘটনায় অভিযুক্ত ডাক্তারকে দুই-তিন মাসের জন্য অন্য ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে এবং তারপর তিনি আবার ফিরে এসেছেন।”
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “নারী চিকিৎসকরা এ ধরনের আচরণ ও যৌন হেনস্থার অভিযোগ করতেন কিন্তু তাদের বলা হতো প্রমাণ নিয়ে আসতে।”
বিবিসির সঙ্গে কথোপকথনের সময় অনেকেই জানিয়েছেন বেশ কয়েক ক্ষেত্রে নারীদের নিশানা করার নির্দিষ্ট প্রবণতা দেখা গিয়েছে কারণ তারা ‘নারী এবং সুন্দরী’।
ডা. সাদিয়া, যিনি এখন একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত, তার কর্মজীবনের সেই দিনগুলোর কথা জানিয়েছেন যখন তিনি সরকারি হাসপাতালে কাজ করতেন।
তার কথায়, “আমি যখন মেডিসিন ওয়ার্ডে ছিলাম, তখন আমাদের একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডাক্তার ছিলেন। তিনি এই ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা ডাক্তারদের ডিউটির শিফটের তালিকা তৈরির সময় নিশ্চিত করতেন যে ডিউটিতে অবশ্যই একজন মেয়ে থাকবে এবং তিনি সুন্দর হবেন।”
“এরপর হাউস অফিসার অব দ্য মান্থ পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পুরস্কারের শর্ত এবং নিয়ম ছিল প্রাপক নারী চিকিৎসক হবেন এবং তাকে সুন্দরীও হতে হবে। সেই সময় আমরা শুনতে পেতাম অমুকের বিয়ে হয়ে গেছে, সে আর আমাদের কোনও কাজে আসবে না তাই তাকে পুরস্কার দেওয়ার কোনও মানে হয় না- জাতীয় কথা।”
এই নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কিছু হয়নি বলে জানান মিজ সাদিয়া, “কিছুই হয়নি, কেউ মাথায় ঘামাননি। অভিযুক্ত ডাক্তারদের কোনও ফল ভোগ করতে হয়নি। তাদের আগামী পথও মসৃণই ছিল।”
পাকিস্তানের একটা হাসপাতালের ছবি।
একদিকে যেমন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নারী চিকিৎসক ও কর্মীদের তাদের সহকর্মীদের হাতে হেনস্থা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তেমনই রোগীর আত্মীয়-পরিজনের কাছেও নিগৃহীত হওয়া নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।
বিবিসির সঙ্গে কথোপকথনের সময় অন্তত তিনজন নারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, হামলাকারীরা কোনও রোগী বা অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন না, বরং সাধারণ নাগরিক ছিলেন যারা মদ্যপ অবস্থায় হাসপাতালে এসেছিলেন।
তাদের অভিযোগ, হাসপাতালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় যে কোনও নাগরিক হাসপাতালে ঢুকে পড়তে পারে। এবং সেদিক থেকে সরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থা আরও খারাপ।
ডা. সাদিয়া বলেন, “সরকারি হাসপাতাল জনগণের সম্পত্তি, তাই এই হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা, পুরুষ বা নারী যেটিই হন না কেন, তাদের সবাইকেই জনগণের সম্পত্তি হিসাবেই মনে করা হয়। অর্থাৎ কাউকে যদি কাচ ভাঙতে হয়, তিনি সেটা আমার মাথাতেই ভাঙতে পারেন।”
তার নারী সহকর্মীদের অভিজ্ঞতার কোথায় জানিয়েছেন ডা. সাদিয়া।
তিনি বলেছেন, “এই ঘটনায় হাসপাতালের কর্মী বা কোনও রোগীর আত্মীয়রা জড়িত ছিল না। জড়িত ছিল মদ্যপ অবস্থায় হাসপাতালে ঢুকে পড়া ব্যক্তি। উদাহরণস্বরূপ, এক সন্ধ্যায় আমার সহকর্মী অন্য কয়েকজন ডাক্তারের সাথে অন্য ওয়ার্ডে যাচ্ছিলেন যখন একজন মদ্যপ ব্যক্তি উত্ত্যক্ত করে।”
“আরেকবার আমার এক চিকিৎসক বন্ধুকে আক্রমণ করা হয়। সেই সময় সেখানে উপস্থিত অন্য চিকিৎসকরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধাওয়া করেন। কিন্তু এই সমস্ত ঘটনার সময় কিন্তু কোনও নিরাপত্তারক্ষী ছিল না।”
তার অভিযোগ, করাচীর একটা বড় সরকারি হাসপাতালেই ঘটেছিল এই ঘটনাগুলো।
অন্যদিকে, এলিজাবেথ থমাস জানিয়েছেন, মদ্যপ অবস্থায় হাসপাতালের নারী কর্মীদের নিশানা করার ঘটনা প্রায়শই ঘটে।
তিনি বলেন, “একবার একজন মদ্যপ ব্যক্তি হাসপাতালে এসেছিল। আমরা দূর থেকেই গন্ধ পাচ্ছিলাম। ওই ব্যক্তি বারবার নারী চিকিৎসকদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। আমাদের স্পর্শ করার, হাত ধরার চেষ্টা করেছিল।”
“আমার সঙ্গে থাকা এক চিকিৎসকের ওড়না টেনে নেয় লোকটা। সেই সময় খুব ভয় পেয়েছিলাম যে কী করব- নিজেকে বাঁচাব না কি এর চিকিৎসা করব? খুব অসহায় লাগছিল।”
লাহোরের এক বেসরকারি হাসপাতালের এক দন্ত চিকিৎসকও বিবিসির সঙ্গে কথোপকথনের সময় একই ধরনের ঘটনার কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, “হাসপাতালে আমার কক্ষে একবার একটা ব্যক্তি এসেছিল, সে মদ্যপ অবস্থায় ছিল। দাঁত পরীক্ষা করতে বলে সেই ব্যক্তি। আমার মনে হয়েছিল কিছু একটা গণ্ডগোল আছে কিন্তু রোগীকে পরীক্ষা করতে বললে একজন ডাক্তার হিসাবে না বলতে পারি না।”
“আমি তাকে বসতে বলে পরীক্ষা করতে যেতেই ওই ব্যক্তি আমার গায়ের উপর পড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমার স্বামীও একই ঘরে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি লোকটিকে দেখেছিলেন। আমার স্বামী এবং অন্যান্য কর্মীরা দৌড়ে এসে লোকটিকে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যান। এই ঘটনার কথা আজ পর্যন্ত ভুলিনি।”
বেশিরভাগ হাসপাতালেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ।
পাকিস্তান ইকোনমিক সার্ভে ২০২৩ অনুযায়ী, পাকিস্তানে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা মাত্র ১২৮৪টি। কিন্তু এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই নিম্নমানের এবং অধিকাংশ হাসপাতালে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই, বা সংখ্যায় কম অথবা একেবারেই কাজ করে না।
প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী এবং তাদের পরিবার এই সমস্ত হাসপাতালে আসেন এবং এখন চিকিৎসাকর্মীদের উপর আক্রমণ ‘সাধারণ বিষয়’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডা. সুমাইয়া সৈয়দ জানিয়েছেন কর্মজীবনের প্রথম ছয় বছরের মধ্যেই তিনি হিংসাত্মক গণআক্রমণের শিকার হন।
তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে বহু হিংসাত্মক আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এতে যেমন রোগীর আত্মীয়-স্বজন শামিল ছিলেন তেমনই কিছু ঘটনায় আমার সহকর্মী চিকিৎসকরাও ছিলেন।”
“একবার আমাকে তিনজন নারীর দেহের ময়নাতদন্ত করতে হয়েছিল। কিন্তু পরিবার বাধা দেয়। হঠাৎই ৫০-৬০ জন লোক আমাকে ঘিরে ধরে দেওয়ালে ঠেলে দেয়। আমি বললাম- ঠিক আছে ময়নাতদন্ত করব না, আমাকে যেতে দাও। কিন্তু ওরা আমাকে সেখান থেকে বের হতে দিচ্ছিল না।”
তবে এমন ঘটনা নতুন নয় বলেই জানিয়েছেন তিনি।
ডা. সুমাইয়া সৈয়দ বলেন, “এখানে মব অ্যাটাক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আমাদের হাসপাতালগুলোতে হয় কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই আর যদিবা থাকে তাহলে তা খুবই ত্রুটিপূর্ণ। এই মুহূর্তে সিন্ধ সরকার কিছু নিরাপত্তা চৌকি বসিয়েছে, কিন্তু তা সংখ্যায় খুবই কম।”
এই চিকিৎসক অভিযোগ করেছেন যে সহকর্মীদের হাতেও হেনস্থা হতে হয়েছে তাকে।
“একবার আমার সহকর্মী চিকিৎসকরাই আমাকে একটা ঘরে আটকে রেখেছিলেন। একটা রিপোর্টে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করতে চেয়েছিল। ওরা বলল রিপোর্টে সই করো। নয়তো তোমার কী অবস্থা হতে পারে কল্পনাও করতে পারবে না।”
“সেদিন বাইরের লোকজন আমার ঘরের দরজায় ধাক্কা দিয়ে আমাকে টেনে বের করে আনে, নাহলে কী হতো জানি না। আমি এখনও এই ঘটনার কথা বলতে পারি না। আমি আর কখনও ওই কক্ষে আর ফিরে যেতে পারব না। আমি মামলা করেছি, সব জায়গায় গিয়েছি কিন্তু আজ পর্যন্ত ন্যায়বিচার পাইনি।”
ডা. সাদিয়া বলেছিলেন যে একবার তাকে নিজের জীবন বাঁচাতে লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল। তার অভিযোগ, এক রোগীর আত্মীয় তাকে আক্রমণ করেছিল কারণ তিনি রোগীকে একটি নির্দিষ্ট ইনজেকশন দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
“ওই ব্যক্তি (আক্রমণকারী) খুব লম্বা ছিল এবং আমার উপর চিৎকার করছিল। আমি দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আমাকে ওই ব্যক্তি হুমকি দিচ্ছিল। বলছিল- এখনই ইনজেকশন দাও, নাহলে মেরে ফেলব।”
পাকিস্তানে নার্সিং কর্মীদের একটা বড় অংশই অমুসলিম নারী-পুরুষ। নার্স হিসাবে কর্মরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারীদের ক্ষেত্রে সমস্যা বহুগুণ। কয়েকজন নারী জানিয়েছেন তাদের প্রায়ই অতিরিক্ত শিফটে কাজ করতে হয়, বিশেষত যখন মুসলমান নার্সরা তাদের উৎসবের সময় ছুটিতে যান বা রমজান মাসে যখন তাদের শিফট সংক্ষিপ্ত করা হয়।
নার্স এলিজাবেথ থমাস বলেন, অমুসলিম নার্সদেরও ধর্মের ভিত্তিতে চরম অশোভন আচরণের শিকার হতে হয়। “আমি এমন অনেক নার্সকে চিনি যাদের হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে এবং তারা যদি কথা না শোনে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনার হুমকিও দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে তারা কী করবেন?”
“আপনি যদি সুন্দরী নার্স হন, তাহলে সহজেই বলা যায় যে আপনার ধর্ম পরিবর্তন করা উচিত। এমন হলে সেই মুহূর্তে আমি ভাবতে থাকি যে এর জবাব কীভাবে দেওয়া যায়। কারণ ইতিবাচক সাড়া না দিলে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ করবে। আর সেটাই হয়েছে বহু নার্সদের সঙ্গে।”
নারী চিকিৎসক ও কর্মীরা অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের একাধিক ওয়ার্ডে শৌচালয় নেই।
চিকিৎসকরা বিবিসিকে তাদের কর্মরত সময়ে অন্যান্য সমস্যা যেমন দীর্ঘ শিফট এবং কোনও সুযোগ-সুবিধার অভাবের বলেছেন। তারা জানিয়েছেন চিকিৎসকদেরও বিশ্রামের জায়গা নেই। করিডোরে, হলঘরে বা হাসপাতালের এক ব্লক থেকে অন্য ব্লকে যাওয়ার পথে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও নেই বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ডে মহিলা চিকিৎসকদের জন্য শৌচাগার নেই। আর যদি থেকেও তাহলে তা সঠিকভাবে বন্ধ হয় না। ডিউটিরত অবস্থায় অন্য ব্লকে থাকা শৌচাগারে যাওয়া সবসময় সম্ভবও হয় না।
পাঁচ বছর আগে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একটা সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে ডা. আমিনা বলেছিলেন, “প্রত্যন্ত এলাকায়, নিরাপত্তা তো দূরের কথা, হলওয়েতে কোনো আলোর ব্যবস্থা ছিল না। আমার মনে আছে যে আমি সরকারি হাসপাতালের করিডোর দিয়ে রাতে তো বটেই দিনের বেলাতেও যেতে ভয় পেতাম।”
“সব ধরনের মানুষ সেখানে আসত। কোনও নিরাপত্তা ছিল না, কিছুই ছিল না। শল্যচিকিৎসার ওয়ার্ডগুলোতে দিন-রাত, পুরো সপ্তাহ কাটাতে হতো।”
অন্যদিকে করাচীর একটা বড় সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে ডা. সাদিয়া বলেন, দীর্ঘ শিফটে তিনি সহকর্মী চিকিৎসকের গাড়িতে বিশ্রাম নিতে যেতেন, কারণ সেখানে চিকিৎসকদের বিশ্রামের কোনো জায়গা ছিল না।
“আমরা এমন পরিস্থিতিও দেখেছি যেখানে আমাদের ৩০ ঘণ্টা ডিউটিতে বিশ্রামের কোনও জায়গা ছিল না। আমরা সহকর্মীর গাড়িতে আধ ঘণ্টা বা পনেরো মিনিট বিশ্রাম নিতাম।”
“হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও শৌচাগার ছিল না। সেখানে ১৪ ঘণ্টা ডিউটি করার সময় আমরা শৌচাগারে যেতে পারতাম না কারণ সেটা ছিল অন্য ব্লকে। সেখানে দিনের বেলা যাওয়ার সময় থাকত না আর রাতে যাওয়া বিপজ্জনক ছিল। পিরিয়ড চলাকালীনও আমরা শৌচাগারে যেতে পারতাম না।”
ডা. সাদিয়ার মতে, হাসপাতালে কর্মরত কর্মীদের সম্পূর্ণ বায়োডাটা নেই।
তিনি বলেন, “আমরা জানি না, কে এই সাফাইকর্মী। যে ব্যক্তি ওয়ার্ডে সাফাই করছেন তিনি সত্যিই কর্মী না কি সেজে আছেন? তাদের গলায় কোনো পরিচয়পত্র বা অফিস কার্ড থাকে না।”
“অনেক সময় এমন হয়, কর্মীদের কাউকে চলে যেতে হয়েছে এবং তিনি তার জায়গায় অন্য কাউকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেই পরিস্থিতিতে আমরা জানতেই পারি না আমাদের চারপাশের মানুষগুলো কারা।”
সম্প্রতি কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার পর পাকিস্তানে নারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে বিপুল আলোচনা শুরু হয়েছে।
ডা. সাদিয়া জানিয়েছেন এই ঘটনা তার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং তিনি তার কাজের রুটিন পরিবর্তন করেছেন।
“আমি আমার রুটিন পরিবর্তন করেছি। আমি আর অন্ধকার বা ফাঁকা জায়গায় যাই না। আগে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার চেষ্টা করতাম, কিন্তু এখন নিরাপত্তার জন্য লিফ্ট ব্যবহার করি।”
এলিজাবেথ থমাস বলেন, এই ঘটনার পর তার ঘুমাতে কষ্ট হচ্ছে। “আমার সাত বছরের একটা মেয়ে আছে, সে প্রায়ই বলে আমি ডাক্তার হব। কিন্তু আমি ভাবছি, এই দেশে একজন ডাক্তার নিরাপদ কি?”
অষ্টাদশ সংশোধনীর পর পাকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন প্রদেশগুলোর নিয়ন্ত্রণে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে প্রাদেশিক মন্ত্রী ও রাজধানীর স্বাস্থ্য সমন্বয়কারীকে প্রশ্ন করা হলেও এর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
বিবিসি উর্দু, ইসলামাবাদ
Leave a Reply