ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
মানুষের রক্তদান
ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যর মধ্যে রয়েছে মায়া জনগোষ্ঠীর জীবনচর্যার নানাদিক। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অন্তরঙ্গ সাংস্কৃতিক দিক নাচ, গান, নাটকের মত সমবেত অভিনয় প্রার্থনা। বলিদান এই ধর্মের অনুষঙ্গ ছিল। এই বলিদান মানুষের বলি পর্যন্ত গড়াত।
পুরোহিত দেহের নানা অঙ্গ কান, জিভ, ঠোঁট খণ্ড-বিখণ্ড করে রক্ত বইয়ে দিত। এবং এই রক্ত উৎসর্গ করা হত তাদের ঈশ্বরকে। এক্ষত্রে দেবতাদের মধ্যে যার স্থান, মান যত উপরে তার রক্তের দাবিও বেশি। এ বাদেও আরেকটি ভয়ংকর দানপ্রথা চালু ছিল।
এই রীতি অনুযায়ী একজন-এর দেহ থেকে টাটকা কলজে বুকের হাড় ফালা ফালা করে কেটে বার করা হত। এবং এক্ষেত্রে ঐ মানুষটিকে একটা পিরামিড-এর আকার করা মঞ্চের উপর দাঁড় করানো হয় এবং তারপর ঐভাবে কেটে বার করা গরম কলজে (Heart)-টা আগুনে ফেলে পোড়ানো হয়।
এবং বিশ্বাস করা হয় এইরকমভাবে হৃদয় দান করলে দেবতা সন্তুষ্ট হন। মায়াদের ধর্মীয় বিশ্বাস-এর অনেকটা পৃথিবীর জন্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা। যেমন মায়ারা বিশ্বাস করে যে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে পাঁচবার তৈরি করা হয়েছে এবং চারবার ধ্বংস করা হয়েছে।
৯০০ খ্রিঃ থেকে মেসোআমেরিকান ধর্মেরও এই মূল ছিল। মায়া-দেবতাদের অধিকাংশ হল সরীসৃপ জাতির। এবং সবার মধ্যে দ্বৈত সত্তা ছিল। এই দুই সত্তার মধ্যে অন্যতম হল ভাল, মঙ্গলময় দিক এবং অপর সত্তা হল খারাপ, অমঙ্গলময় দিক। মায়া জনজাতির মানুষ পরজন্মের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে।
কিন্তু তারা এই সঙ্গে একথাও বিশ্বাস করে যে স্বর্গের আসন সবার জন্য নয়। মর্ত্যলোকে যাদের ফাঁসী হয়েছিল বা বলি দেওয়া হয়েছিল বা জন্মাবার পরই কোনো কারণে মারা গিয়েছিল তারাই স্বর্গলোকে বাস করতে পারবেন। মৃত্যুর রাজার আদেশে অন্য সবাইকে নরকে যেতে হয়।
(চলবে)
Leave a Reply