শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫০ অপরাহ্ন

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-৮)

  • Update Time : সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৮.২৯ পিএম

ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি এবং ধ্বংসের আরেক বিশ্বাস

মায়াদের মধ্যে পৃথিবীর জন্ম ধ্বংস সম্পর্কে অন্য একটি বিশ্বাস বা মতের কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। উত্তর ও ইউকাতান অঞ্চলের মায়ারা মনে করে এর আগে আরো কয়েকটি পৃথিবীর অস্তিত্ব ছিল। এবং এর প্রত্যেকটি কোনো এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বংস হয়েছিল। উত্তর ইউকাতান অঞ্চলের মানুষ এখনো বিশ্বাস করে এর আগে তিনবার পৃথিবীর জন্ম হয়েছিল।

প্রথম বারের পৃথিবীতে কেবল বেঁটে বা বামন (Dwarfs)-রা বাস করত। অন্য নাম হল সৈয়াম উইনিকব (Saiyam Uinicob) এই সময়কাল হল হিন্দু- সভ্যতার সত্যযুগ। প্রথম বিশ্ব সারাবিশ্বের জল বিপর্যয়ে অবলুপ্ত হয়েছিল। এর নাম হল হাইভোকোকাল (Haivococal)। দ্বিতীয়বারের পৃথিবীতে বাস করত ডলব (Dzolb) বা মাজ্জভালব (Mazchvalob) গোষ্ঠীর মানুষজন।

এইবারের বিশ্বকে ধ্বংস করেছিল ভয়াবহ বন্যা। যাকে মায়াশব্দে বলা হয় হুনসিল (Huncil) বা বুলকোবাল (Bulkobal)। বুলকোবাল শব্দটির অর্থ হল ‘যা ডুবছে’। এক্ষেত্রে আমরা হিন্দুধর্মীয়শাস্ত্রর কথা উল্লেখ করতে পারি। সেখানেও চারটি যুগের কথা বলা হয়েছে। এইগুলি হল সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর এবং কলি (Satya, Treta, Dwapara, Kali)।

এবং এই চারটি যুগ নানা কারণে ধ্বংস হয়েছিল। মায়াদের মঙ্গল, অমঙ্গল (Sacred, Profane) তত্ত্ব বলে যে ভাল দেবতা এই জগতে নিয়ে আসে বৃষ্টির অবারিত জল। সূর্যালোক যা জমিতে সোনার ফসল নিয়ে আসে। আর অমঙ্গল খারাপ দেবদেবী নিয়ে আসে মৃত্যু ও ধ্বংস। এবং এর ফলে মহামারী, খরা, যুদ্ধবিগ্রহ দেখা দেয়। সমাজকে বিপন্ন করে তোলে।

মায়ারা এইসঙ্গে পৃথিবীতে তেরটি স্তরে বিভক্ত স্বর্গের কথা বিশ্বাস করে। এর মধ্যে সবচেয়ে নীচের স্তরে রয়েছে পৃথিবী (Earth)। প্রত্যেক স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করত তের জন দেবতার একজন। এই উঁচু স্তরের পৃথিবীকে মায়ারা বলত ওকসাউনতিকু। মায়া-ভাষায় এই শব্দটির অর্থ হল কু (Ku)। এর নীচে ছিল ৯টি স্তর। এবং এই নয়টির প্রতিটিতে রাজত্ব বা নিয়ন্ত্রণ করত বোলনতিকু (Bolontiku)। নবম বা সবচেয়ে নীচের পৃথিবীকে বলা হত মিতনাল (Mitnal)।

এর শাসক দেবতা হলেন আ পুচ (Ah Puch)। মায়াদের পুজো করার মধ্যে প্রধান উদ্দেশ্য হল নিজেদের জীবনকে সুস্থ রাখা এবং স্বাস্থ্য ভাল রাখা। মায়ারা নিজেদের উপাসনা বা দেবদেবীর প্রার্থনায় একথা বলেন, “তুমি সর্বশক্তিমান, তোমার কাছে আমরা যে বলিদান অর্পণ করি, যে হৃদয়কে উৎসর্গ করি তার মধ্যে এই আশাই যুক্ত থাকে যে তুমি আমাদের জীবন দাও, প্রাণ দাও এবং অস্থায়ী হলেও নিশ্চিন্ত ভাল কিছু দাও।” বলিদান করা হয় যাতে সাধারণ মানুষ অপাক কিছু খাবার গ্রহণ করতে পারে।

(চলবে)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-৭)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-৭)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024