স্বদেশ রায়
সরকার Code of Criminal Procedure, 1898 section 12(1) অনুযায়ী সেনাবাহিনীর কমিশণ প্রাপ্ত অফিসারদেরকে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্টেটের ক্ষমতা দিয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের এই ক্ষমতা দেয়া এ মুহূর্তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও সঠিক সিদ্ধান্ত। দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যগন এ ক্ষমতা নিয়ে মাঠে নামলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিরাজমান নানান বিশৃঙ্খলা দ্রুত কেটে যাবে বলে দেশের মানুষ আস্থা রাখে। মানুষের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ সব ক্ষেত্রেই সেনাবাহিনী তাদের কঠোর পরিশ্রম ও যথাযথ দ্বায়িত্ব পালন করে দেশেকে দুর্যোগ থেকে বের করে এনেছে।
জুলাই আগষ্ট জুড়ে যেভাবে বহু নিষ্পাপ প্রান গিয়েছে এবং প্রচুর সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বাস্তবে সেনাবাহিনীকে এই ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে ওই সময়েই দ্বায়িত্ব দিলে এগুলো ঘটতো না। তারপরেও সে সময়ে সেনাবাহিনী মাঠে নামানোর পরে ২৬ জুলাই এই কলামে লিখেছিলাম, “ বাংলাদেশের সেনাবাহিনী শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগে নয়, যে কোন দুর্যোগে দেশের সম্পদ। ……মানুষ এখন সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ দিচ্ছে”।
বাস্তবে এখনও মনে করি, ওই সময়ে যদি সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ক্ষমতা দেয়া হতো এবং তাদের আরো দ্বায়িত্ব পালন করার সুযোগ দেয়া হতো- তাহলে বাংলাদেশে যে পরিবর্তন এসেছে এটা শান্তিপূর্ণ উপায়ে ঘটতো। এত মানুষ নিহত হতো না। এত পরিবার আজ অসহায় হয়ে পড়তো না। দেশের এত সম্পদও নষ্ট হতো না।
যা হোক অতীতের অনেক ভুল বর্তমানে বসে সংশোধন করা যায় না। তবে যে ভুলগুলো হয়ে গেছে সব সময়ই তার থেকে বের হয়ে এসে ভবিষ্যতকে এগিয়ে নেবার সিদ্ধান্তই গুরুত্বপূর্ণ।
এ মুহূর্তে দেশের ভবিষ্যতকে এগিয়ে নিতে হলে কয়েকটি বিষয় জরুরী প্রয়োজন। এক, মানুষকে নিরাপত্তার অভাব বোধ থেকে বের করে আনা। দুই, দেশের ব্যবসা বানিজ্য ও শিল্প উত্পাদনে নিরাপত্তা। তিন, দেশে পণ্য সরবরাহ ও আমাদানী – রফতানির সাপ্লাই চেইন নিরাপদ ও নিরবিচ্ছিন্ন রাখা। এগুলো সাধারণ মানুষের জন্যে একান্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশের মানুষের সব থেকে বড় গুন সে কখনও কারো ওপর নির্ভর করে না। নিজেই বাঁচার চেষ্টা করে। এবং নিজেই পথ খুঁজে নেয়। তাছাড়া যে সাধারণ মানুষ এই দেশটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যারা সারাক্ষণ কোন না কোন উত্পাদনের সঙ্গে জড়িত- তাদের চাহিদাও খুবই কম। এমনকি দেখা যায় যে এদেশে অধিকাংশ প্রকৃত উদ্যোক্তা ব্যংক ঋনের ওপর নির্ভরশীল নয়, আর কৃষক তো মোটেই নয়। তারা শুধু চায় কেউ যেন তাদের কাজের বাধা না হয়। তার চলার পথে সে যেন বাধা না পায়। তাহলে নিজস্ব শক্তিতে এগিয়ে যেতে পারে। বাস্তবে এ শুধু আমাদের দেশের মানুষের গুন নয়, পৃথিবী জুড়ে সাধারণ মানুষের চরিত্র এটাই। তাই দেখা যায় বেশিক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কাছে সব দেশের মানুষের মূল চাহিদা থাকে সে যেন নিরাপদে তার কাজটি করতে পারে।
অন্যদিকে শ্রম সুলভ হবার কারণে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে অনেক বেশি বিনিয়োগ আসবে। বাস্তবে সেই বিনিয়োগই দেশকে আরো উন্নত অবস্থানে নিযে যাবে। আর সে বিনিয়োগ আসার পরিবেশ সৃষ্টি একান্ত জরুরী- কারণ, দেশের জনসংখ্যা যেভাবে বেড়েছে তাতে যত দ্রুত সম্ভব দেশকে শিল্প নির্ভর দেশ করতে হবে। এবং সেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্র’র দিকে নজর দিতে হবে। পোষাক সহ যে শিল্পগুলো আছে তার বাইরেও দেশের শিল্প ক্ষেত্রকে আরো প্রসারিত করতে হবে।
শিল্প সহ দেশের নানা ক্ষেত্রে কাজের জন্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উন্নতমানের শিক্ষা ছাড়া বিকল্প নেই। গ্লোবালাইজেশানের এ যুগে শিক্ষিত জনশক্তি ছাড়া শরীর নির্ভর জনশক্তি দিয়ে একটি দেশ একটা পর্যায়ের পর আর এগুতে পারে না।
তাই সাধারন মানুষের নিজ জীবন যাপন থেকে শুরু করে কৃষি, বানিজ্য, শিল্পও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব কিছুর জন্যে সব সময়ই প্রয়োজন হয় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্যে প্রকৃত ক্ষমতাসহ সেনা সদস্যরাই এ মুহূর্তে দেশের মানুষের আস্থার স্থল।
একটু দেরী হলেও সেনা কর্মকর্তাদের এই নির্বাহী ক্ষমতা দেয়ার পরে নিঃসন্দেহে দেশের সব সেক্টরের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।
স্বদেশ রায়, সম্পাদক, সারাক্ষণ ও The Present World.
Leave a Reply