শ্রী নিখিলনাথ রায়
উক্ত সড়ককে বিভক্ত করায়, নবাব কয়েক মাস পূর্ব্বে উধুয়ানালার উপর ইষ্টক ও প্রস্তর দ্বারা এক সেতু নির্মাণ করিয়া রাখেন। নবাব- সৈন্যেরা এই সেতুকে অত্যন্ত সুরক্ষিত করিয়াছিল।
গিরিয়ার পরাজয়বার্তা শ্রবণ করিয়া মীর কাশেম আরাটুন্ নামে একজন আর্ম্মেণীয়ের অধীন ইউরোপীয় রণকৌশলে শিক্ষিত ৪ হাজার সৈন্য ও দেশীয় সেনাপতি মীর নজফ খাঁ, মীর হেম্মত আলি ও মীর মেহেদী খাঁ প্রভৃতির অধীন ১২ হাজার অশ্বারোহী, পদাতি ও গোলন্দাজ সৈন্য উধুয়ানালায় পাঠাইয়াছিলেন।। গিরিয়া হইতে পরাজিত সমরু, মার্কার, আসাদ উল্লা প্রভৃতির অধীন সৈন্যসমূহ তাহাদের সহিত যোগ দিয়া ৪০ সহস্রেরও অধিক করিয়া তুলে। মেজর আডাম্স গিরিয়াতে দুই দিন বিশ্রাম করিয়া, ৪ঠা আগষ্ট উধুয়ানালা অভিমুখে অগ্রসর হইয়া, ১১ই উধুয়া হইতে প্রায় দুই ক্রোশ দক্ষিণপূর্ব্বে ফুকিপুর নামক স্থানে শিবির সন্নিবেশ করেন। §.
ইংরেজদিগের শিবিরের দক্ষিণে গঙ্গা ও বামে ঝিল বা বকাইয়ের দাঁড়া ছিল। ইংরেজেরা পরিখা খনন করিয়া তথায় বুরুজ নির্মাণ করেন। ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ বলিয়া থাকেন যে, মেজর আডাম্সকে তিন সপ্তাহ কাল বুরুজাদি’ নির্মাণে ব্যস্ত থাকিতে হইয়া ছিল। চতুবিংশতিতম দিবসে তিনি তিনটি বুরুজ হইতে নবাবশিবির লক্ষ্য করিয়া গোলাবৃষ্টি আরম্ভ করিলেন। কিন্তু তাহাতে নবাবশিবিরের কিছুই করিয়া উঠিতে পারেন নাই। কেবল নদীর সন্নিহিত প্রবেশপথের নিকট পরিখা প্রাচীর অতি সামান্যভাবে ভগ্ন হইয়াছিল।
উধুয়ানালায় ইংরেজদিগের সহিত নবাবসৈন্তের প্রকৃত যুদ্ধ হয় নাই। ইংরেজেরা নবাবশিবির ভেদ করিতে সহস্র চেষ্টা করিয়াও কৃতকার্য্য হইতে না পারিয়া, অবশেষে চতুরতা অবলম্বনপূর্ব্বক শিবিরে প্রবেশ করিয়াছিলেন। আমরা ক্রমে তাহার উল্লেখ করিব। তৎপূর্ব্বে একটি ঘটনার উল্লেখ করা যাইতেছে; ঘটনাটি ক্রম, ম্যালিসন প্রভৃতি ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেন নাই। উধুয়ার সুন্দর অবস্থান দেখিয়া মীর কাশেমের সেনাপতিগণ নির্ভীকচিত্তে অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। তাঁহারা সুরাপানে বিভোর হইয়া নর্তকীবৃন্দের কণ্ঠসঙ্গীতশ্রবণে শিবির মধ্যে রজনীযাপন করিতেন।।
Leave a Reply