শ্রী নিখিলনাথ রায়
আর এক দল সৈন্য মেজর গবর্ণরের অধীনতায় তাঁহাদের সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিল। অবশিষ্ট সৈন্ত শিবিররক্ষায় নিযুক্ত থাকিল। আভিং ঝিল’ পার হওয়ার চেষ্টা করিলেন বটে, কিন্তু রাত্রিকালে সেই অল্পগভীর স্থানের নির্ণয় করিতে তাঁহার সৈন্তুদিগকে অত্যন্ত কষ্ট ভোগ করিতে হইয়াছিল। অবশেষে তাহারা অনেক কষ্টে ঝিল অতিক্রম করে। কিন্তু নবাবসৈঙ্গ এ বিষয় জানিতে পারিলে, তাহাদিগকে চির দিনের জন্য ঝিলের জলে বিশ্রামলাভ করিতে বাধ্য করিত। অভিংএর অধীন ইংরেজসৈরগণ ক্রমে ক্রমে প্রাচীরের তলে আসিয়া উপস্থিত হইল।
তথায় যে সমস্ত প্রহরী ছিল, তাহাদিগকে বেয়নেট দ্বারা মৃত্যুমুখে পাতিত করিয়া, তাহারা প্রাচীরের উপরে উঠিয়া বসিল। এই সময়ে নবাবস্যৈগণ জাগরিত হইয়া, ব্যাপার অনুসন্ধান করিতে না করিতে, ইংরেজ সৈন্যগণ পীরপাহাড় অধিকার করিয়া লইলেন। সহসা মশাল প্রজ্বলিত হইয়া, অন্ধকারময়ী রজনীকে আলোকময়ী করিয়া তুলিল। এই সময়ে মোরানের কামানও গর্জন করিয়া উঠিল।
মোরানের সৈন্যগণ সেই কামানের ঘুমে আচ্ছন্ন হইয়া, ‘নদীর সন্নিহিত প্রবেশপথের নিকট ইংরেজদিগের কৃত ভগ্নাংশের নিকট উপস্থিত হইল; পরে অনেক কষ্টে পরিখা পার হইয়া প্রাচীরের উপর উঠিয়া দাঁড়াইল। যদি মীর কাশেমের সৈন্যেরা সামান্যমাত্রও সতর্কতা অবলম্বন করিত, তাহা হইলে, মোরান কদাচ পরিখা পার হইয়া প্রাচীরে উঠিতে পারিতেন না। মোরানের সৈন্যেরা পীরপাহাড় হইতে অবতীর্ণ আর্ভিংএর সৈন্যের সহিত করমর্দন করিয়া, নবাবশিবিরধ্বংসে প্রবৃত্ত হইল।
নৈশ নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া ইংরেজ কামানধ্বনি উধুয়ার পর্ব্বতশ্রেণীকে বিকম্পিত করিয়া তুলিল; গঙ্গাসলিলরাশি আন্দোলিত হইয়া তীরে আঘাত করিতে লাগিল। রজনীর অন্ধকার ভেদ করিয়া, মেঘবক্ষস্থ সৌদামিনীর ন্যায় কামান ও বন্দুক হইতে অগ্নি জ্বলিয়া উঠিল; নবাবসৈন্যগণ যুদ্ধার্থ সজ্জিত হইবার অবকাশ পর্য্যন্ত পাইল না। তাহাদের কিয়ৎসংখ্যক সৈজ উধুয়ানালার পত পারে সেতুর নিকট দণ্ডায়মান হইয়া, ক্রমাগত ইংরেজাধিকৃত আপনাদিগের শিবির লক্ষ্য করিয়া গোলাবৃষ্টি করিতেছিল।
Leave a Reply