গ্রেস কাও
বিদেশে ভ্রমণ করার সময় নিজের দুই পায়ের দুটি গিট (Ankle) ভাঙা কখনোই ভালো সময় নয় আর যদি সেটা ঘটে বিদেশে। আমিকয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে এবং কে-পপ শিল্পের লোকদের সাথে দেখা করতে সিউলে ছিলাম। আমার বন্ধুরা ঠাট্টা করেছিল যে আমি লোকদের বলব যে আমি একটি কে-পপ দলের ব্যাকআপ ডান্সার হিসেবে কাজ করার সময় পড়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু সত্য হল যে একটি রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়ার সময় একটি ধাপ মিস করে আমি পড়ে গিয়েছিলাম। প্রথমে পা পিছলে একটি গিট ভেঙ্গেগিয়েছিল এবং তারপর অন্য গিটেতে ভর দিতে সেটাও ভেঙেছিল। সুংকুংকুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার আগে আমি পড়ে গিয়েছিলাম। সৌভাগ্যবশত, এটা ঘটার সময় আমি আমার কোরীয় বন্ধু ও আতিথেয়তাকারী অর্থনীতির অধ্যাপক জেসুং চই এবং দুই ছাত্রের সঙ্গে ছিলাম।
আমি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি হাঁটতে পারব না। আমি ধীরে ধীরে রেস্তোরাঁর সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলাম, কিন্তু যখন শেষ ধাপে পৌঁছালাম, তখন জেসুংয়ের গাড়ি যেখানে পার্ক করা ছিল সেই ফুটপাতে যাওয়ার কোন উপায় ছিল না। আমি এ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলাম কিন্তু আমাকে বলা হয়েছিল যে দুপুরের খাবারের সময় বলে কোন এ্যাম্বুলেন্স নেই। অবশেষে, রেস্তোরাঁ থেকে একজন ভদ্রলোক আমাকে তার পিঠে করে বহন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও অনেক কে-ড্রামায় আমি মাতাল মহিলাদের কারো পিঠে চড়ে যেতে দেখেছি, তারা সাধারণত ২০ এর দশকের পাতলা মহিলা – আমার চেয়ে অনেক ছোট এবং হালকা। এটা এমন একটা অভিজ্ঞতা যা আমি করতে চাইনি, কিন্তু জীবনে মনে হয় এমনই ঘটে।
শেষ পর্যন্ত, জেসুং এবং তার দুই ছাত্র আমাকে একটি অর্থোপেডিক ক্লিনিকে নিয়ে গেলেন (প্রথমটি দুপুরের খাবারের জন্য বন্ধ ছিল)। একমাত্র সমস্যা ছিল যে তাদের কাছে কোন ক্রাচ বা হুইলচেয়ার ছিল না, তাই আমরা ভাবতে পারছিলাম না আমি কীভাবে গাড়ি থেকে বের হয়ে ভবনের ৩য় তলায় অবস্থিত ক্লিনিকে যাব। জেসুং ক্রাচ ধার করতে সামসেওং-ডং বাসিন্দাদের কেন্দ্রে গিয়েছিলেন, কিন্তু আমি সেগুলো ব্যবহার করতে পারিনি কারণ, সেই সময় আমি জানতাম না যে, আমার দুটি গিটেই ভেঙে গেছে। তারপর তিনি ক্লিনিক থেকে একটি ল্যাব স্টুল (চাকাযুক্ত) ধার করলেন এবং তিনি ও তার ছাত্ররা আমাকে গাড়ি থেকে লিফটে এবং তারপর ক্লিনিকে ঠেলে নিয়ে যান।
আমরা ক্লিনিকে ঢোকার পর, আমার স্বামী জেফ রুবিজ আমাদের খুঁজে পেলেন। আমি চমৎকার চিকিৎসা পেয়েছিলাম। অর্থোপেডিস্ট গুরুতরভাবে ভেঙ্গে যাওয়া গিটের অংশগুলো ঠিক করেছিলেন। সমস্যা ছিল যে এক্স-রেতেই তিনি দেখিয়েছিল যে আমার একটি গিট সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে এবং অন্যটাও অনেকখানি ভেঙ্গে গেছে । তিনি আসলে ইংরাজি বলতে পারতেন না, তবে “দুই পায়েই ওজন দেবেন না” এবং “আপনার অস্ত্রোপচার প্রয়োজন” বলতে সক্ষম হয়েছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম অস্ত্রোপচারের আগে কতদিন অপেক্ষা করতে পারি এবং তিনি বলেছিলেন “দুই সপ্তাহ”। যেহেতু আমার ১০ দিনের মধ্যে কোরিয়া ছাড়ার কথা ছিল, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম অপেক্ষা করব।
তিনি আমার দুটি গিটেই স্প্লিন্ট পরিয়ে দিয়েছিলেন। আমার পা সোজা হয়ে থাকত। হুইলচেয়ার বা ক্রাচ না থাকার পাশাপাশি, অর্থোপেডিক ক্লিনিকের বাথরুমও প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযোগী ছিল না।
এরপর, আমরা ক্লিনিক ছাড়ার সমস্যার মুখোমুখি হলাম। আমাকে কোন পায়ে ভর না দিতে বলা হয়েছিল (এবং আমি চাইলেও, শারীরিকভাবে তা করতে অক্ষম ছিলাম)। যেহেতু ক্লিনিকে কোন হুইলচেয়ার ছিল না, জেসুং আবার প্রতিবেশী কেন্দ্রে গিয়ে একটি হুইলচেয়ার ধার করল। তিনি হুইলচেয়ারটি ক্লিনিকে এনে আমাকে তাতে বসালেন, এবং তার গাড়িতে নিয়ে গেলেন। তারপর আমরা সামসেওং-ডং বাসিন্দাদের কেন্দ্রে হুইলচেয়ারটি ফেরত দিলাম।
সৌভাগ্যবশত, জেফ এবং আমি একটি বড় চেইন হোটেলে থাকছিলাম। আমরা তাদের ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম তাদের কাছে হুইলচেয়ার আছে কিনা (তারা হ্যাঁ বললো!) এবং তারা আমাদের একটি হুইলচেয়ার-বান্ধব রুমে সরাতে পারবে কিনা (এটাতেও তারা হ্যাঁ বললো!)। সেই সন্ধ্যার জন্য, আমরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলাম। হোটেলের কল্যাণে, সিউলে থাকাকালীন বাকি সময়ের জন্য আমাদের কাছে হুইলচেয়ার ছিল।
তবে, ব্যথার জন্য টাইলেনল ছাড়া দুটি ভাঙা গিটের ব্যথা সহ্য করা কঠিন ছিল। আমার অনেক কোরীয় বন্ধু (এমনকি তাদের আত্মীয়রাও) সামসুং মেডিকেল সেন্টারে আমার ফলো-আপ অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিল। ভ্রমণের সময় মেডিকেল ইমার্জেন্সিতে সাহায্য করে এমন একটি সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল SOS এর কাছ থেকেও আমি সাহায্য পেয়েছিলাম, যার সাথে অনেক আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় সাবস্ক্রাইব করে। কয়েকদিন পর, আমার ছাত্রী মিরা চই এবং আমার স্বামী জেফ আমাকে সামসুং হাসপাতালে নিয়ে গেল।
সেখানে প্রবেশের পর, আমার মনে হয়েছিল যেন আমি একটি চরম ব্যস্ত বিমানবন্দরে আছি চারিদিকে মানুষ আমাদের পাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল। একজন অর্থোপেডিক সার্জন আমাকে দেখেছিলেন । কোরিয়ায় আমার বাকি সময়টুকু থাকাকালে, কোরিয়ার অন্য একটি পত্রিকায় আমার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল, তাই সেই লেখার ছবিতে আপনি আমাকে হুইলচেয়ারে দেখতে পারবেন। আমি KAIST-এও একটি Zoom বক্তৃতা দিয়েছিলাম।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার দিন, আমাদের একটি তৃতীয় ফ্যাসিলিটিতে পাঠানো হয়েছিল — এটি আমাদের হোটেলের ঠিক পাশেই ছিল এবং ছিল একটি ছোট কিন্তু পূর্ণ পরিসেবাযুক্ত হাসপাতাল — যাতে আমাদের ফ্লাইটে রক্তের জমাট বাঁধা আরও প্রতিরোধ করতে আমি ইনজেকশন নিতে পারি। এটি একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা ছিল। এখানে ভিড় ছিল না, ভালভাবে স্টাফ ছিল এবং হুইলচেয়ার অ্যাক্সেস ছিল।
অবশেষে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি ফিরে এলাম, যেখানে আমার অস্ত্রোপচার হল এবং আঘাত থেকে সুস্থ হতে অনেক মাস সময় লাগল।
যদিও কোরিয়ার মেডিকেল সিস্টেম সম্পর্কে আমার কোন প্রকৃত জ্ঞান নেই, আমি শুধু এর মুখোমুখি হয়েছি। আমি যে মেডিকেল পেশাদারদের দেখেছি তারা দক্ষ ছিলেন এবং আমার খুব যত্ন নিয়েছিলেন। ইয়েলের আমার চমৎকার অর্থোপেডিক সার্জন, ইরভিন ওহ, আমাকে বলেছিলেন, “আপনি সিউলে আমার উপদেষ্টাকে দেখেছেন!” তবে, সিউলে সরঞ্জামের অভাব রয়েছ এখনও অনেক ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, আমি যে প্রতিটি হাসপাতালে গিয়েছি সেখানে রোগীদের ব্যবহারের জন্য অনেক হুইলচেয়ার এবং আপনাকে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্টাফ রয়েছে। পাবলিক বিল্ডিংগুলোতে প্রবেশযোগ্য বাথরুম (হুইলচেয়ারকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরানোর অনুমতি দেয়) এবং প্রবেশদ্বার থাকতে হবে। ফুটপাতে কার্ব কাট থাকে যাতে হুইলচেয়ার এবং স্ট্রোলার চালনা করা যায়। নিউ হ্যাভেনে আমার হুইলচেয়ারে আমার গাড়ি থেকে ক্যাম্পাস অফিসে যাওয়ায় আমার কোন সমস্যা হয়নি।
আমি ভাগ্যবান যে আমার হুইলচেয়ারে থাকার সময় সংক্ষিপ্ত ছিল, কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তি সংখ্যক কোরীয়দের ক্ষেত্রে এমনটি হবে না। কোরিয়ায় পাবলিক স্থানগুলোতে মেডিকেল ফ্যাসিলিটি এবং প্রবেশযোগ্যতা বৃদ্ধি এবং উন্নত করা আবশ্যক।
ইতিমধ্যে, আমি কোন কে-পপ গ্রুপের জন্য নাচ এড়াতে চেষ্টা করব (মজা করছি!) এবং কোরিয়ায় থাকাকালীন সিঁড়িওয়ালা রেস্টুরেন্টে যাওয়া এড়াব।
গ্রেস কাও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান এবং জাতি, বর্ণ ও অভিবাসন বিষয়ে আইবিএম অধ্যাপক।
Leave a Reply