শ্রী নিখিলনাথ রায়
রেনেলের কাশীমবাজার দ্বীপের মান- চিত্রে বড়নগরের প্রাধান্য প্রতিপাদনের জন্য তাহার নাম বৃহদক্ষরে লিখিত হইয়াছে। বড়নগর তৎকালীন মুর্শিদাবাদের একরূপ প্রান্ত- দেশে অবস্থিত ছিল; অষ্টাদশ শতাব্দীর মুর্শিদাবাদ প্রায় বড়নগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। রাজা উদয়নারায়ণের ধ্বংসের পর রাজশাহী জমীদারী নাটোর-রাজবংশের করায়ত্ত হইলে, বড়নগর তাঁহাদের মুর্শিদাবাদের বাসস্থানরূপে নির্দিষ্ট হয়। রাজধানী মুর্শিদাবাদে তৎকালে’ বঙ্গের প্রায় সমস্ত জমীদারদিগেরই এক একটি বাসস্থান ছিল।
বিশেষতঃ নাটোর- রাজবংশের আদিপুরুষ রঘুনন্দন মুর্শিদাবাদে নায়েব-কাননগোর কার্য্য করিতেন বলিয়া, তাঁহাকে মুর্শিদাবাদেই থাকিতে হইত। রঘুনন্দন প্রথমতঃ পুঁটিয়া রাজসংসারে সামাঞ্জকর্ম্মে নিযুক্ত হন; পরে পুটিয়ার ‘রাজা দর্পনারায়ণ তাঁহাকে পুঁটিয়ার উকীল নিযুক্ত করিয়া, প্রথমে ঢাকায় নবাবদরবারে পাঠাইয়া দেন। তথা হইতে তিনি মুর্শিদকুলী খাঁর সহিত মুর্শিদাবাদে আগমন করেন। রঘুনন্দন স্বীয় বুদ্ধিমত্তায় ‘ ক্রমে নায়েব কাননগোর পদ প্রাপ্ত হন এবং মুর্শিদকুলী খাঁর প্রিয়পাত্র হুইয়া, তাঁহার অনুগ্রহে অনেক জমীদারী লাভ করেন।
এই সমস্ত জমী- দারী তাঁহার ভ্রাতা রামজীবনের নামে গৃহীত হইয়াছিল। রামজীবনের পুত্র কুমার কালিকাপ্রসাদ, রামকান্তকে দত্তক পুত্র গ্রহণ করেন এবং তাঁহার জনককে চৌগ্রাম ও ইলামাবাদ নামে দুই পরগণার জমীদারী প্রদান করেন। রামজীবনের মৃত্যুর পর কালু কোঙার অল্পবয়সে পরলোকগত হইলে, রামকান্ত নাটোরের সমস্ত জমীদারী ও ঐশ্বর্য্যের অধীশ্বর হন। এই রামকান্তের পত্নীই ভারতবিখ্যাতা প্রাতঃস্মরণীয়া -মহারাণী ভবানী। রাণী ভবানী রাজসাহী জেলার অন্তঃপাতী ছাতিম গ্রামের আত্মা- রাম চৌধুরীর কন্যা; তাঁহার মাতার নাম জয়দুর্গা।
নাটোর রাজ- সংসারে দয়ারাম নামে একজন তিলিজাতীয় কর্মচারী ছিলেন; তাঁহারই চেষ্টায় নাটোর রাজবংশের অসীম সম্পত্তির সুবন্দোবস্ত হইয়া ছিল। দয়ারাম বহুদিন পর্য্যন্ত নাটোর রাজসংসারে কার্য্য করিয়া- ছিলেন। এই। দয়ারামই বর্তমান দীঘাপতিয়া রাজবংশের আদি- গুরুষ। রামকান্ত বাঙ্গলা ১১৫৩ সালে পরলোকগত হইলে, রাণী ভবানী তাঁহার সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হইয়া, বাঙ্গলার জমী- দারদিগের শ্রেষ্ঠস্থান অধিকার করিয়া বসেন। তাঁহার সমস্ত জমীদারী হইতে প্রায় দেড় কোটা টাকা কর আদার হইত; তন্মধ্যে ৭০ লক্ষ সরকারের রাজস্ব দেওয়া হইত।
Leave a Reply