শ্রী নিখিলনাথ রায়
ভবানীর, কন্যা তারা অত্যন্ত রূপবতী ছিলেন। কথিত আছে, এক- দিবস। তিনি বড়নগরের প্রাসাদশিখরে স্নানান্তে উন্মুক্তকেশে পাদচারণ করিতেছিলেন, এমন সময়ে বড়নগরের প্রান্তবাহিনী ‘ভাগীরথীবক্ষঃ দিয়া সিরাজের সাধের তরণী হাসিতে হাসিতে ভাসিয়া যাইতেছিল। সিরাজ, তরণী হইতে তারার অপরূপ রূপলাবণ্য, দর্শনে উন্মত্ত হইয়া পড়েন, এবং মুর্শিদাবাদে গমন, করিয়া, তারাকে হরণ করিবার জন্য কতকগুলি, ** লোকজন পাঠাইবার চেষ্টা করেন।
সিরাজের লোকজন আসিবার পূর্ব্বে রাণী ঊষানী এই হৃদয়বিদারক দুঃসংবাদ অবগত হইয়াছিলেন। ইহাতে তিনি অন্ত্যন্ত ব্যথিত ও চিন্তিত হইয়া পড়েন। তৎকালে বড়নগরের পর- পারে সাধকবাগে মস্তারাম বাবাজী নামে জনৈক রামোপাসক বৈষ্ণবের আখড়া ছিল। সাধকবাগের সে আখড়া অ্যাপি বিদ্যমান আছে। বাবাজী রাষ্ট্র ভবানীর নিকট হইতে যথেষ্ট সাহায্য প্রাপ্ত হইতেন। তিনি এই সংবাদ অবগত হইয়া, স্বীর আখড়াস্থিত বহুসংখ্যক রামোপাসক বৈষ্ণবকে অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত করিয়া সিরাজের লোকজনকে বাঁধা দিবার জন্য বড়নগরে পাঠাইয়া দেন।
এই সংবাদ পাইয়া, সিরাজ উদ্দৌলা আর তারাকে হরণ করিতে সাহসী হন নাই।প্রবাদ এই ঘটনাটিকে এতদূর অতিরঞ্জিত করিয়াছে যে, মস্তারাম বাবাজী নাকি তপোবলে বৈষ্ণবসৈন্তের সৃষ্টি করিয়াছিলেন! এক্ষণে এই গল্পটির সম্বন্ধে আমাদের দুই একটি কথা বক্তব্য আছে। প্রথমতঃ অষ্টাদশ শতাব্দীর বড়নগর বর্তমান বড়নগরের ন্যায় অরণ্যানী- সমাবৃত ছিল না, তাহা একটি প্রধান আড়ঙ্গ ছিল; তথায় ইউরোপীয়গণ পর্য্যন্ত ক্রয়বিক্ৰয়ার্থে উপস্থিত হইতেন।
তৎকালে বড়নগরে লোকের এরূপ বাস ছিল যে, তথায় তিলমাত্র স্থান পড়িয়া থাকিতে পাইত না। সেই বড়নগরে বঙ্গের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ সম্ভ্রান্তবংশের কন্যা, দিবসে স্নানান্তে প্রাসাদশিখরে সহস্র সহস্র লোকের দৃষ্টিসমক্ষে পাদচারণ করিবেন, ইহা বিশ্বাসযোগ্য কি না? দ্বিতীয়তঃ বড়নগরের প্রাসাদ যেস্থানে অবস্থিত ছিল, অদ্যাপি তাহার কিয়দংশ বিরাজ করিতেছে। গঙ্গাবক্ষঃ হইতে সে প্রাসাদশিখরের উপরিস্থিত লোক দৃষ্টিগোচর হওয়া সুকঠিন।
Leave a Reply