শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ অপরাহ্ন

‘এখনো প্রকাশ করার অনেক কিছু আছে, মিডিয়া সব প্রকাশ করছে না’

  • Update Time : রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১.৪৭ পিএম
বাংলাদেশে অধিকাংশ গণমাধ্যম সরকারের প্রচারমাধ্যম হিসাবে কাজ করে বলে মনে করেন অনেকে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে সংবাদ মাধ্যমের অবস্থা নিয়ে৷

ডয়চে ভেলে: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের এখন পরিস্থিতি কী?

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান: আগে যেটা ছিল সেটা তো ‘গদি মিডিয়া’৷ আগে তো বাংলাদেশে সেই অর্থে সাংবাদিকতা আমরা দেখিনি৷ সাংবাদিকতা যেটা একটা চ্যালেঞ্জিং, সেটা তো ছিল না৷ তবে এখন পর্যন্ত আমি তার কোনো পরিবর্তন দেখছি না৷ আগের মতোই৷ এখনো তো আমরা মিডিয়ায় অনেক কিছু দেখছি না৷ জানি না সরকারের এখানে ভূমিকা কী৷ মিডিয়া , সাংবাদিক যে ফ্রিডম এনজয় করে সেটা এখানো আসেনি৷ মনে হয় সেটা হতে আরো সময় লাগবে৷

কী বৈশিষ্ট্যের কারণে আগের এবং এখনকার মিডিয়া আপনার কাছে একই মনে হয়?

আমার মনে হয় আমাদের মিডিয়াগুলো আগে থেকেই প্রো-পাওয়ার হয়ে গেছে৷ সেল্ফ সেন্সরশিপ আরোপের যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তা থেকে তারা বের হতে পারেনি৷ তারা আগের সরকারের অন্যায়-অনাচার চেপে রাখতো, প্রকাশ করতো না৷ আর এখনো প্রকাশ করার অনেক কিছু আছে, কিন্তু মিডিয়া সব কিছু প্রকাশ করছে না৷ এই যে মেরে ফেলা, মব জাস্টিস মিডিয়ায় ঠিক মতো আসছে না৷ তবে আমি মনে করি, যত সময় যাবে, মিডিয়া হয়ত আরো স্বাধীন হবে৷

তাহলে এখন সংবাদ মাধ্যম কি নিরপেক্ষভাবে সবকিছু প্রকাশ করছে না?

আপনি দেখেন লিঞ্চিং, মব জাস্টিস সবখানে হচ্ছে৷ এটা কেন হবে? এটা সংবাদমাধ্যমে আরো ডিটেইল আসা উচিত৷ সরকার, সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তো এখানে ব্যর্থতা বলবো না, বিচ্যুতি  আছে৷ আমার মনে হয়, প্যাটার্নগুলোর পরিবর্তন হয়নি৷ ক্ষমতায় এক সরকার আসবে, সরকার যাবে শুধু এটা হলেই তো হয় না৷

আপনি বলছিলেন মিডিয়ায় এখনো সেল্ফ সেন্সরশিপ আছে৷ এটা কেন? কোনো সমস্যা আছে?

মিডিয়া, মিডিয়া পার্সোনালদের মধ্যে এক ধরনের ভয় থাকে৷ সেই জন্য তারা সেল্ফ-সেন্সর করে৷ আর এর আগে যেটা হয়েছে, মিডিয়া উলঙ্গভাবে সরকারকে সমর্থন করেছে৷ এটা তো কোনো সাংবাদিকতা হতে পারে না৷

আগের ভয়ের অভিজ্ঞতা থেকে কি মিডিয়া এখনো সেল্ফ-সেন্সর করছে?

আমার মনে হয় আগের ভয়ের অভিজ্ঞতা থেকে তারা পর্যবেক্ষণ করছে৷ তারা  হয়তো একটু দেখে শুনে এগোতে চায়৷

আগে প্রাইভেট টেলিভিশনগুলো সরকার পরিচালিত বিটিভির নিউজ দেখাতে বাধ্য হতো৷ এখন তো সেই বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে৷

বিটিভির নিউজ বর্জন এক কথা, কিন্তু আমি মনে করি বিটিভির একটা নিউজ দেখানো উচিত৷ তারা তো ন্যাশনাল ব্রডকাস্টার৷ এটা বরং দেখালে মানুষ জানতে পারবে, বিটিভি কি দেখায় আর প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কী দেখায়৷ জনগণ বুঝতে পারতো যে পার্থক্যটা কোথায়৷

যাকে ‘বাতাবি লেবুর’ বাম্পার ফলনের টিভি বলা হয়, সেই বিটিভির এখন কী অবস্থা? কোনো উন্নয়ন হয়েছে?

বিটিভি তো আমি দেখি না৷ তারপরও আমার মনে হয় না যে, তেমন কোনো পরিবর্তন এসেছে৷ বিটিভি বঙ্গবন্ধু ন্যাশনালাইজ করেন৷ তারপর থেকেই এটা প্রো-পাওয়ার টেলিভিশন৷ সরকারের প্রচার যন্ত্র হিসেবে কাজ করছে৷ যারা যখন সরকারে ছিল, তারাই কেউই চায়নি যে বিটিভি স্বাধীনভাবে পরিচালিত হোক৷

ভয়ের একটা বিষয় তো ঢুকে গেছে৷ তাহলে করণীয় কী? অন্তবর্তী সরকারের কোনো সিগনাল দেয়ার দরকার আছে? প্রধান উপদেষ্টা তো স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করতে বলেছেন৷

সরকারের সিগনাল দেয়ার বিষয় আছে৷ সরকার পেশাদার সাংবাদিকতা উৎসাহিত করবে, সহায়তা করবে৷ আগে কিন্তু চাপের মুখেও কেউ কেউ স্বাধীন সাংবাদিকতা করেছেন৷ আপনারা যেমন করেছেন৷ আপনারা পেরেছেন, কারণ, আপনারা প্রভাবশালী বিদেশি সংবাদমাধ্যমে কাজ করছেন৷ সরকার মিডিয়া পিপলের সঙ্গে যত বেশি ডায়ালগ করবে, আমার মনে হয় সংবাদ মাধ্যম তত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পরবে৷

সরকার কিন্তু এখনো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যেটা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে অন্যতম বাধা, সেটা এখনো বাতিল করেনি৷ এটা বাতিলের দাবি ছিল সাংবাদিবসহ বিভিন্ন মহলের৷

আমার মনে হয় সরকারের এই আইনটি বাতিল করে দেয়া উচিত৷ আমি ভলতেয়ারের সেই কথাটা বিশ্বাস করি- আমি তোমার মতের সাথে ভিন্নতা পোষন করতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশের জন্য আমার কল্লাটা দিয়ে দিতে পারি৷ এটাই সভ্য সমাজের নীতি৷ সরকারের এই ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত৷

সম্পাদক পরিষদ  সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা না করে ঢালাও মামলার সমালোচনা করেছে৷ তারা চাটুকার সাংবাদিকতারও সমালোচনা করেছে৷

আমিও ঢালাও মামলার বিরোধিতা করি৷ এটা বৈষম্য হয়ে গেল না? আপনি বলছেন, আগের চেয়ে ভালো অবস্থার কথা৷ আগেও আমরা ঢালাও মামলা দেখেছি৷ এখনো সেটা হলে তো আর হলো না৷ এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ আমরা মনে হয়, এই সরকার ভিন্নমত প্রকাশে ভয় পায় কিনা৷ ভিন্নমত আসুক না৷ ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে৷

‘দালাল সাংবাদিকের’ তালিকা প্রকাশ মুক্ত সাংবাদিকতার পথে বাধা? যে ‘দালাল’, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়৷ মানুষ তাকে প্রত্যাক্ষাণ করবে৷ কিন্তু কোনো সংগঠন এই তালিকা প্রকাশ করতে পারে?

এভাবে কোনো তালিকা প্রকাশ আমি সমর্থন করি না৷ যে অপরাধী, তাকে আপনি আইনের মাধ্যমে ধরেন৷ ইনফর্মেশন অ্যাডভাইজার বলেছেন, যারা এর সঙ্গে জড়িত সাংবাদিক, লেখক, সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ একজন দায়িত্বশীল মানুষ এভাবে বলতে পারেন না৷ আপনি প্রমাণসহ ধরেন৷

সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ দায়ের না করে এভাবে কথা বললে তা সাংবাদিকদের জন্য আগের মতো ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করবে না?

এভাবে ঢালাও কথা, ঢালাও মামলা কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না৷ তাহলে তো আইনের শাসন হলো না৷
স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা কী করতে পারেন?

সাংবাদিকদের যে কোনো পরিবেশে ডিগনিটি ও বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করতে হবে৷ আর এটা নিয়ে সরকারকে বলতে হবে৷ ডায়ালগ করতে হবে৷ স্বাধীন সাংবাদিকতার দাবি সব সময় জারি রাখতে হবে৷

ডিডাব্লিউডটকম

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024