শশাঙ্ক মণ্ডল
শিল্প-বাণিজ্য
তৃতীয় অধ্যায়
বণিকরা সবসময় প্রচলিত ব্যবস্থার পক্ষে ছিল, সামন্ততান্ত্রিক কৃষি-অর্থনীতিকে পরিবর্তন করার কোন প্রয়োজন তাদের কাছে অনুভূত হয়নি। লাভটাই ছিল তাদের মুখ্য বিষয়। তারা ছিল সেদিন পরশ্রম আত্মসাৎকারী- সামান্য পুঁজি থেকে বৃহৎ পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করত কিন্তু শিল্পের ক্ষেত্রে তৎকালীন ব্যবস্থা পরিবর্তন করে নিজস্ব উদ্যোগে কারখানা চালানোর ঝুঁকি তারা নেয়নি। এখানেই ইউরোপীয় বণিকদের সঙ্গে এদের পার্থক্য।
ইউরোপের ক্ষেত্রে বণিকরা নিজেদের আর্থিক রাজনৈতিক ভিতটাকে মজবুত করে তুলেছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে তারা প্রভূত সম্পদ ও ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছিল। আমাদের বণিকরা সবসময় কৃষি অর্থনীতির পক্ষেই ছিল। রাষ্ট্র বা ভূমিজ স্বার্থের সঙ্গে কোন সংঘাত দেখা দেয়নি মানদণ্ড রাজদণ্ডে পরিণত করার বাসনা তাদের জাগেনি। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোন পরিবর্তন বা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে কোন পরিবর্তন করার কথা তারা ভাবেনি। দাম নিয়ে বিরোধ থাকত বাজার ওঠানামা করত বা তাদের সুতো টানাটানিতে জিনিসের দাম কমে যেত।
তাঁতি এবং অন্যান্য কুটির শিল্পীদের তারা বাধ্য করত সামান্য মজুরিতে পণ্য তৈরি করতে। বাজারের মার খেয়ে কুটির শিল্পীরা সাময়িক কালের জন্য পুরানো পেশা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হত নূতন পেশা গ্রহণের সুযোগ ছিল না বললেই চলে। শিল্পজাত দ্রব্যের মান ঠিক রাখা ছিল সে যুগে একটা সমস্যা- ইউরোপীয় বণিকরা অভিযোগ করেছে উন্নত মানের কাপড় পাওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিমত কাপড় তাঁতিরা দিচ্ছে না, কাপড়ের টানা ও পড়েন নিয়ে সব সময় অভিযোগ থাকত।
নির্ধারিত মান বজায় রাখার জন্য ব্রিটিশ রাজত্বের শুরুতে কোম্পানি নিজস্ব কারখানা. স্থাপন করেছিল কিন্তু এ প্রচেষ্টা সর্বত্র সফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত এ দেশীয় পদ্ধতি তারা গ্রহণ করল, নিজস্ব তদারকিতে কারখানা না চালিয়ে দালাল ফড়ে পাইকারদের মাধ্যমে প্রাথমিক উৎপাদকের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করা শুরু করল। বণিক ও প্রাথমিক উপাদকের মধ্যে নানা ধরনের দালাল ফড়িয়া প্রভৃতি মধ্যস্তরের লোকগুলিকে অস্বীকার করে ইউরোপীয় বণিকরা কোনদিন প্রাথমিক উৎপাদকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে পণ্য সংগ্রহ করতে পারেনি।
Leave a Reply