ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
মায়া হস্তশিল্প, কাঠ–এর কাজ
মায়া সভ্যতার ইতিহাস এবং শিল্পের সুষমা, বৈশিষ্ট্য আমাদের মধ্যে এক স্বপ্নিল নিজস্বতার প্রাসাদ তৈরি করে। এই শিল্প হল হস্তশিল্প, কাঠ-খোদাই, মূর্তির চমক লাগানো পদ্ধতি। এছাড়া বাড়ি, অট্টালিকার স্থাপত্যর গম্ভীর সুর-মেশানো ছন্দ সবকিছুই আছে। মায়া সভ্যতা আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগে বেশ সপ্রতিভ ছিল। এখনও তার নানা সুর, গমক যেন কথা বলে যায়।
সম্প্রতি আবিষ্কৃত পাথরের খোদাই করা দেওয়ালচিত্রর ভাষা পড়া সম্ভব হয়েছে। বর্তমান গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, বেলিজ এবং দক্ষিণ মেক্সিকোতে মায়া রাজা এবং সামন্ত প্রভুরা বসবাস করত। এই সময়টা আনুমানিক ৬৫০-৮০০ খ্রিস্টাব্দ। এইসব অঞ্চলের ঘর-বাড়ির নানা শিল্প পাথরের কাজ-এর মধ্যে শিল্প সুষমা এখনো পর্যটকদের চোখ ও মনকে অনাবিল খুশিতে ভরিয়ে দেয়।
এই স্থাপত্য ও শিল্প মহিমার মধ্যে আধুনিকতার অহংকার নেই, আছে প্রাচীনতা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শান্ত আত্মনিবেদন। পুরাতত্ত্ববিদরা এখনো এইসব অঞ্চলে লুকিয়ে থাকা নানা শিল্প-সৌন্দর্য্যের অন্বেষণ করে যাচ্ছেন। প্রস্তরলিপি বিশ্লেষকগণ মায়া অঞ্চলের পাথরে খোদাই করা লিপি উদ্ধারে কিছুটা সফল হচ্ছেন। এবং এই সাফল্য মায়া সভ্যতার অনেক অজানা তথ্য আমাদের কাছে উপস্থিত করছে।
বর্তমানে দক্ষিণ মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকায় মায়াদের উত্তরসূরীদের বসবাস করতে দেখা যায়। এবং এই প্রজন্মের মায়ারা এখনো তাদের পূর্বপুরুষদের লোকাচার, ধর্মীয় আচার-বিচার পালন করে চলেছে। মায়াদের আত্মা-সংক্রান্ত ধর্মীয় বিশ্বাস-এর দুটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু হল শস্য এবং চকোলেট (Corns and Chocolate)। এই দুটি জিনিস তারা এখনো খায় এবং বেশ আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করে।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত ন্যাশনাল গ্যালারি অব আর্ট-এর একটি অংশে আলাদাভাবে মায়াদের প্রাচীন শিল্প নিয়ে গ্যালারি করা আছে। এই অংশে বিস্তৃতভাবে প্রাচীন মায়া শিল্প-সংস্কৃতির নানা উদাহরণ দেখা যায়। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল ভাস্কর্য, মূর্তি, উৎসব-অনুষ্ঠানের নানা সামগ্রী।
এদের মধ্যে একটা অংশ এই প্রথম আমেরিকায় দেখানো হচ্ছে। এই প্রদর্শনশালায় মায়াদের পাথরের নানা ধরনের মূর্তি, মাটির পাত্র, নানা ধরনের মুখোশ যা মায়াদের নানা উৎসব অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হত তার একটি সুন্দর পরিবেশ উপস্থিত করা আছে।
(চলবে)
Leave a Reply