শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৩৬)

  • Update Time : শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

শশাঙ্ক মণ্ডল

শিল্প-বাণিজ্য

তৃতীয় অধ্যায়

কেন্দ্রীভূত মূলধন কোনদিন প্রাথমিক উৎপাদককে সংহত করতে পারেনি। উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাত্রা ক্ষুদ্রই থেকে গেছে- এ ব্যাপারে প্রধান বাঁধাগুলি হল সামাজিক বর্ণভেদ, যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, পুঁজির অভাব, শিক্ষা ও মধ্যবিত্তের অনুপস্থিতি, স্থানান্তরে যাবার অনীহা, দীর্ঘ যুগ ধরে অসংখ্য আঞ্চলিক দেবদেবীর ওপর নির্ভরশীলতা এবং অদৃষ্টনির্ভরতা- এ ধরনের অনেকগুলি কারণের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ব্রিটিশ রাজত্বে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য পুঁজি শিল্পপুঁজিতে রূপান্তরিত না হয়ে জমিদারিতে নিয়োজিত হল পুরানো সামন্ততান্ত্রিক ধারার অনুবর্তনে দীর্ঘ যুগ কাটিয়ে দিল।

অবশ্য সে যুগে কার-টেগর কোম্পানি এবং দ্বারকানাথ ঠাকুরের শিল্পসাম্রাজ্য মুখ থুবড়ে পড়ায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের আর্থিক ভিত্তি অক্ষুণ্ণ ছিল বিভিন্নস্থানের জমিদারির জন্য। এই অভিজ্ঞতা বাঙালি বেনিয়াদের সামনে একটা জ্বলন্ত উদাহরণ হিসাবে উপস্থিত হল। শিল্পের পিচ্ছিল পথ পরিত্যাগ করে জমিদারির স্বাচ্ছন্দ্যময় পথ ধরে বাণিজ্য-পুঁজি জমিদারিতে নিয়োগের প্রবণতা আমরা পরবর্তীকালে লক্ষ করলাম।

* তাঁত শিল্প

ব্রিটিশ-পূব যুগেই বাংলা তার ভূমির উর্বরতা ও শান্তি-শৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে কৃবি ও শিল্পের ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখাতে পেরেছিল। সারা পৃথিবীতে বাংলার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল তার কার্পাস ও রেশম শিল্পের জন্য। ১৮৩৫ খ্রীষ্টাব্দে Baines তার বিখ্যাত পুস্তক History of Cotton Manufacture in Great Britain এ উল্লেখ করেছেন প্রাচীন কালে পৃথিবীতে ভারতেই প্রথম কার্পাস শিল্পের জন্ম হয়েছিল।

বাংলা গর্ব করতে পারে কার্পাস ও রেশম শিল্পের জন্য। সামান্য বাঁশের তৈরি কয়েকটা প্রাথমিক ধরনের যন্ত্রপাতি নিয়ে কার্পাস শিল্পের ক্ষেত্রে যে সূক্ষ্মতা নিয়ে এসেছিল তা আজ আধুনিক প্রযুক্তির দিনেও আমাদের বিস্মিত করে। দীর্ঘকাল বংশানুক্রমিক চর্চার মধ্য দিয়ে সূক্ষ্ম শিল্পের পারদর্শিতা এরা অর্জন করেছিল। সূক্ষ্ম সুতা তৈরির ব্যাপারে মেয়েরাই ছিল অগ্রণী। বিশেষ করে ১৩ থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েরা সূক্ষ্ম কাপড়ের জন্য সুতা হাতে বানাত। সকালে এবং সন্ধ্যার পূর্বে বাতাসের আর্দ্রতার সুযোগ নিয়ে আঙুলের সাহায্যে সুতা তৈরি হত। প্রচণ্ড বৃষ্টির দিনে আর্দ্রতা কমানোর জন্য উনুনের তাপের সাহায্য নিত।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024