শশাঙ্ক মণ্ডল
শিল্প-বাণিজ্য
তৃতীয় অধ্যায়
আবার গ্রীষ্মের দিনে আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য জলের পাত্র নীচে রেখে সুতা তৈরি করত। এত সূক্ষ্মভাবে কাজ করতে হত বলে উন্নতমানের সুতার উৎপাদন খুবই কম হত। বেশি বয়স হলে মেয়েদের চোখের দৃষ্টির স্বচ্ছতা কমে গেলে ঐ সব মেয়েরা সূক্ষ্ম সুতার কাজ করতে পারত না। একজন মহিলা প্রতিদিন সকালে বিকালে দু তিন ঘন্টা পরিশ্রম করে সারা মাসে আধ তোলা বা ৯০ গ্রেন (only half a tola or ninety grains or only three grains a day) সুতা উৎপাদন করতে পারত।
সাধারণ মানের সুতা তৈরির ক্ষেত্রে পুরুষরা এবং অন্যান্য মেয়েরা চরকার সাহায্যে সহজে তা করতে পারত। অভিজাত মানুষদের জন্য মসলিন ও অন্যান্য সূক্ষ্ম কাপড় তৈরি হত। ব্রিটিশ রাজত্বের পরবর্তীকালে সমগ্র অষ্টাদশ শতাব্দী জুড়ে যশোর, ঝিনাইদহ, বাঘেরহাট, ভাঙর, বসিরহাট প্রভৃতি এলাকায় তাঁতিদের উল্লেখযোগ্য অংশ বসবাস করত। এসব এলাকার তাঁতিরা মোটা সুতার কাজে বিশেষভাবে পারদর্শী ছিল। আর সূক্ষ্ম সুতার কাজ, মসলিন কাপড় উৎপাদন ছিল শহরগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ।
কারণ এই কাপড় সাধারণ ক্রেতার আর্থিক ক্ষমতার বাইরে ছিল। নুরজাহানের সময়ে একখানা আবই-রেওয়ান (Ab-1- rawan) running water মসলিন কাপড় ১০ হাত ২ হাত ও ওজন মাত্র ৯০০ গ্রেন ৪০০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। আওরঙ্গজেবের জন্য তৈরী বিশেষ ধরনের একটা ঢাকাই জমিদানী বিক্রয় হচ্ছে ২৫০ টাকায়। সুন্দরবনের তাঁতিদের মধ্যে হিন্দু-মসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষরা ছিল। হিন্দুদের মধ্যে যুগী এবং মুসলমানদের মধ্যে জোলা সম্প্রদায়ের মানুষরা কার্পাস শিল্পের সঙ্গে বেশি করে যুক্ত ছিল। এদের সঙ্গে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরাও যুক্ত হত।
ধোপারা কাপড় কাঁচত, ব্যাপারিরা মাল বাইরে পাঠানোর জন্য ধোপাদের দিয়ে কাপড় পরিষ্কার করিয়ে নিত; কাপড়ে কোন ক্ষতি হলে বা সূতা কোন কারণে সরে গেলে নুরুদিয়া বা রিপুদাররা তা ঠিক করে দিত। বেল বাঁধার কাজে এরা ব্যাপারিদের সাহায্য করত। ধোপারা কাপড় কাঁচা ছাড়া ব্যাপারিদের নানা ভাবে সাহায্য করত। তাঁতিরা মাল দেবার সময় ধোপারা তা পরীক্ষা করে নিত। অনেক সময় তাঁতিরা কম সুতা দিয়ে কাপড় তৈরি করে ব্যাপারিদের ঠকাবার চেষ্টা করত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে কলকাতা কুঠির ধোপা বৃন্দাবনকে অতিরিক্ত মাসিক ১০ টাকা দিয়ে তাঁতিদের কাপড় ঠিকমত দেখে নেবার জন্য নিয়োগ করছে তা আমরা লক্ষ করেছি। (২)
Leave a Reply