শশাঙ্ক মণ্ডল
শিল্প-বাণিজ্য
তৃতীয় অধ্যায়
ঐ চারজনের মধ্যে দুজন মহিলা। বাড়ির কাজের অবসরে তারা তাঁতের কাজে অংশ নিচ্ছে। ৭ দিনের মজুরি হিসাবে তারা সকলে মিলে আয় করছে ৩ টাকা ৮ আনা। সে যুগে একটি পরিবারের ৭ দিনের সাড়ে তিন টাকা আয় অনেক স্বচ্ছলতার চিহ্ন হিসাবে বিবেচিত হত। উক্ত গ্রাম দুটি তাঁতি অধ্যুষিত। বিভিন্ন পরিবারের আর্থিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে Ralph Smith তাঁতিদের আর্থিক স্বচ্ছলতার ছবি খুঁজে পেয়েছেন। (১০) এসব তাঁতিরা উন্নতমানের কাপড় তৈরিতে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু সাধারণ তাঁতির অবস্থা ছিল খুবই অসহায়।
বুকানিন হ্যামিলটন উনিশ শতকের শুরুতে তাঁতিদের জীবনযাত্রা ও আর্থিক ভিত্তি পর্যবেক্ষণ করে মন্তব্য করেছিলেন-নানারকমের ঘুষ ও ব্যবসায়ীদের তুষ্ট করে প্রকৃত উৎপাদকদের হাতে যে অর্থ পৌঁছাত তাতে তার জীবন ধারণের সামান্য প্রয়োজনটুকু মিটতে পারতও উদ্বৃত্ত সম্পদ কিছু থাকত না। গোমস্তার দস্তুরি, জমিদারের ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে যাওয়া খাজনা, মহাজনের সুদের হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি, সব কিছু মিটিয়ে খুব সামান্যই উৎপাদকের হাতে পৌঁছাত।
১৮১৩- ১৫ খ্রীষ্টাব্দের হিসাবে (১৪) তাঁতি কার্পাসের সঙ্গে যুক্ত: স্বামী-স্ত্রী এবং মাঝে মাঝে অন্য একজন সহযোগীসহ একটি তাঁতে মাসে আয় করত ৭ টাকা।একজন তাঁত শ্রমিকের মাসিক মজুরি ছিল ২টা ৪ আঃ ৩টাঃ ৮ আঃ সুতা কাটুনির মাসিক আয় ছিল ৪ আনা। তখন অন্যান্য কাজের মজুরি:- ৫ টাকা রাজমিস্ত্রী মাসিক বেতন, কুলি (পুরুষ) ৩ টাকা, কুলি (বালক) ২ টাকা।
সমগ্র উনিশ শতক জুড়ে তাঁত শিল্পের নাভিশ্বাস দেখা দেয়, কার্পাস উৎপাদন কমছে- বিলাতি সুতার উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে বিদেশি কাপড়ের কলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তাঁতশিল্পীরা শুধু পিছু হটছে আর অন্য জীবিকার দিকে হাত বাড়াচ্ছে। স্বদেশি আন্দোলন এবং তার পরবর্তীকালে অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে তাঁতিদের তাঁতবস্ত্রের চাহিদা বাজারে সৃষ্টি হয়েছিল। তার ফলে মজুরি একটু বেড়েছিল। বাজারে কাপড়ের চাহিদা বাড়ার ফলে অনেকে আবার নতুন করে এই শিল্পের দিকে ঝুঁকেছিল। কিন্তু অনেকে দীর্ঘকাল তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত না থাকার ফলে পুরানো শিল্পের সূক্ষ্মতা হারিয়ে ফেলে।
Leave a Reply