মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান
ভালোবাসা। ছোট এই শব্দটির প্রভাব ব্যাপক। এর প্রভাব সৃষ্টির সময় থেকে। যুগে যুগে কালে কালে ভালোবাসা ছিল, আছে এবং থাকবে। অতি পুরানো এই বিষয়টি নতুন রূপে আমাদের সামনে হাজির হয়। ভালোবাসা প্রতিদিনের, প্রতি মুহূর্তের। তারপরও ‘প্রতীকী দিবস’ হিসেবে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে এবং বাংলাদেশে ‘ভালোবাসা দিবস’ পালিত হয়। অনেক ধরনের প্রস্তুতি ও প্রচার চলে দিনটিকে ঘিরে। দিনের পর দিন ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে উৎসব বেড়ে চলেছে।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ভালোবাসা দিবসের প্রচলন, প্রচার এবং প্রসারের পেছনে সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ নানা কারণ জড়িত আছে। একটি দিবস পালনের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এতো ধরনের ফ্যাক্টর সাধারণত কাজ করে না। এ দিনটির সূচনায় জানা যায় নানা রকম কাহিনী।
প্রাচীন রোমে প্রেম, বিয়ে এবং সন্তান উৎপাদন ক্ষমতার জন্য একাধিক উৎসব হতো। ‘লুপারকালিয়া’ এসব উৎসবের অন্যতম। রোমান দেবতা লুপারকাসের নামানুসারে এই উৎসবের নামকরণ করা হয়। রোমানরা বিশ্বাস করতেন, দেবতা লুপারকাস রোম শহরকে নেকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন। অনুষ্ঠানের দিন তরুণরা দৌড়াদৌড়ি করে নববিবাহিতাকে চাবুক দিয়ে আঘাত করতো। তারা মনে করতো, এতে সন্তান উৎপাদন সহজ হবে। ১৫ ফেব্রুয়ারি এই উৎসব হতো। তখন মনে করা হতো, এর আগের দিন অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি পাখিরা তাদের সঙ্গী বেছে নেয়। ফলে এই দিনটি প্রেম নিবেদনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। দিনটি পালনের সময় রোমানরা বাক্সের ভেতর নাম রেখে লটারি করে তাদের প্রিয়তম বা প্রিয়তমাকে বেছে নিতো। এই ধরনের উৎসব চলছিল নিয়মিত ভাবে। ৪০০ সাল থেকে দুই দিনের উৎসবের সময় কমিয়ে এক দিনে ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়।
পরবর্তী সময়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি সেন্ট ভ্যালেনটাই’স ডে হিসেবে পরিচিত হওয়ার পেছনে অবশ্য ধর্মীয় কারণ আছে। ভ্যালেনটাইন নামের ধর্মপ্রচারক বা সেন্টের নামে দিনটি প্রচলিত হয়। তিনি ছিলেন একাধারে একজন পাদরি এবং চিকিৎসক। রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের আদেশ ভাঙার অপরাধে যার মৃত্যুদণ্ড হয়। সে সময়ও রোমানরা দেব দেবীতে বিশ্বাস করতো।
ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে জানা যায়, ক্রিশ্চিয়ানিটির প্রথমদিকে অন্তত তিনজন সেন্ট পাওয়া যায়, যাদের নাম ছিল ভ্যালেনটাইন। এদের একজন ছিলেন রোমের প্রিস্ট, দ্বিতীয়জন টেরনি এলাকার বিশপ। তৃতীয়জন সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তার মৃত্যু হয় আফ্রিকায়। বিস্ময়কর ভাবে এই তিনজনের নামকে ঘিরেই সেন্ট ভ্যালেনটাইন’স ডে-র উদ্ভবের নানা কাহিনী প্রচলিত আছে।
অধিকাংশ গবেষক মনে করেন, ২৭০ খ্রীষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে রোমান প্রিস্ট ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন সম্রাট ক্লডিয়াস। এর দুটো কাহিনী প্রচলিত আছে। একটি ক্যাথলিকদের, অন্যটি প্রোটেস্টান্টদের মধ্যে।
ভ্যালেনটাইনের জীবিত কালে রোমান সাম্রাজ্যের সুদিন শেষ হয়ে আসে। প্রশাসনের দুর্বলতা, শিক্ষাব্যবস্থার পতন, উচ্চ কর আদায়সহ নানা ধরনের অনিয়ম সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে দেয়। গল, স্লাভ, হুন, তুর্কসহ নানা জাতি বিরামহীন আক্রমণ করে রোমকে বিপর্যস্ত করে রাখে। সাম্রাজ্যের ভেতর নানা সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এর প্রতিরোধে রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। সে কারণে প্রচুর যোগ্য সাহসী তরুণের প্রয়োজন হয়। এই সময় সম্রাট ক্লডিয়াসের মনে হয়, বিয়ে মানুষকে আবেগপ্রবণ করে তোলে এবং পিছুটানের সৃষ্টি করে। বিয়ের পর পুরুষরা মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু যুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজন নির্ভীক ও দুঃসাহসী পুরুষের। যুদ্ধের সময় বিবাহিত সৈনিকেরা পরিবারের কথা ভেবে ঝুঁকি নিতে চায় না, যেটা অবিবাহিতরা সহজেই পারে। সাম্রাজ্যের পরিস্থিতি দেখে তিনি তরুণদের বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
এই ঘোষণা রোমানদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কিন্তু তারা ক্ষমতাধর সম্রাটের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নিতে পারে না। এ ছাড়া সে সময় রোমান সমাজে বহুগামিতার প্রচলন ছিল। মূর্তিপূজা নির্ভর পেগান ধর্মের প্রভাব থেকে খ্রিষ্টধর্মের প্রচারকেরা রোমান সমাজে ধর্মীয় অনুশাসন কায়মের জন্য চেষ্টা করছিলেন। সামাজিক অনাচার বন্ধে বিয়ের রীতি স্থাপনে তারা বিশ্বাসী ছিলেন। তরুণ যাজক ভ্যালেনটাইন সম্রাটের এই অনৈতিক সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেন নি। তিনি দেখতে পান কীভাবে অনেক তরুণের জীবনের স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছে। তিনি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদের পথ খুঁজছিলেন।
এই সময় বহু তরুণ তরুণী গোপনে তার সাথে দেখা করতে আসে। তিনি তাদের আশার বাণী শোনান। এক পর্যায়ে তিনি অতি গোপনে অনেক জুটিদের বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। বিষয়টি বেশি দিন গোপন থাকেনি। ‘প্রেমিকদের বন্ধু’ নামে পরিচিত ভ্যালেনটাইনের কথা জেনে যান সম্রাট ক্লডিয়াস। গ্রেফতার করা হয় ভ্যালেনটাইনকে।
তিনি এতো বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, যখন জেলে ছিলেন তখন ছোট ছেলেমেয়েরা জানালা দিয়ে ভ্যালেনটাইনকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে চিরকূট ছুঁড়ে মারতো। জেলের ভেতর থাকার সময়ও ভ্যালনটাইন ছিলেন নির্বিকার। তার অধ্যাত্মিক ক্ষমতার কথা জেনে যায় অনেকেই। কারাগারের প্রধান অ্যাসটেরিয়াসের মেয়ে ছিল অন্ধ। অ্যাসটেরিয়াস বন্দী ভ্যালেনটাইনের কাছে গিয়ে অনুরোধ করেন তার মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়ার।
এরপরের ঘটনায় ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টানটদের বিবরণে কিছু ভিন্নতা থাকলেও বলা হয়, ভ্যালেন্টাইন তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা ও চিকিৎসাবিজ্ঞান ব্যবহার করে অ্যাসটেরিয়াসের অন্ধ মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনেন। আরেকটি কাহিনী থেকে জানা যায়, এ ঘটনার পর অ্যাসটেরিয়াস খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন।
জেলপ্রধানের মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার খবর পেয়ে সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস জেল থেকে ডেকে পাঠান ভ্যালেনটাইনকে। সম্রাট তার কাজের প্রশংসা করেন এবং তার দরবারে সম্মানজনক পদ দিতে চান। কিন্তু ভ্যালেনটাইন কঠোর ভাষায় ক্লডিয়াসের বিয়ে নিষিদ্ধ করা রীতির সমালোচনা করেন। সম্রাট তাকে ‘দেবতার স্থান’ দিতে চান যা ভ্যালেনটাইনের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই সময় দু’জনের মধ্যে তীব্র মতদ্বৈততা দেয়। ক্ষিপ্ত সম্রাট ক্লডিয়াস তখন ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্র্দেশ দেন।
এরই মধ্যে ভ্যালেনটাইনের সাথে জেলপ্রধানের মেয়ের একটি সুন্দর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। মেয়েটি কোনোভাবেই মানতে পারছিল না যে তার নতুন ‘দৃষ্টিদানকারী’ ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। জেলপ্রধানের জন্যও বিষয়টি ছিল বেদনাদায়ক।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে ভ্যালেনটাইন একটি কাগজ ও কলম চান মেয়েটিকে চিঠি লেখার জন্য। তিনি চিঠির শেষে লেখেন, ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন।’ এই কথাটি পরবর্তী সময়ে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে প্রেমিক প্রেমিকাদের মধ্যে।
আরেকটি কাহিনীতে বলা হয়, জেলে থাকার সময় ভ্যালেনটাইন সেই মেয়েটির প্রেমে পড়েন। তবে অনেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চান না। এই ঘটনা নিয়ে প্রচলিত ধর্মীয় কাহিনীগুলোতে এটাই বোঝানো হয় যে, বিষয়টি যতোটা না মানব-মানবীর প্রেমঘটিত তারচেয়ে বেশি ধর্মীয় প্রেমের প্রকাশ। কারণ ধর্মীয় রীতি অনুসারে প্রিস্ট বা যাজকদের প্রেম বা বিয়ে করা নিষিদ্ধ। ধর্মীয় বিশ্বাস অক্ষুণ্ন রাখতেই ভ্যালেনটাইন মাথা নত করেন নি- এমনটিই বলা হয়। তিনি ক্লডিয়াসের ধর্মবিরোধী প্রস্তাবে রাজি হন নি বলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ বিশ্বাসে দৃঢ় থেকে রোমের সর্বোচ্চ ক্যাথলিক কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর পর ভ্যালেনটাইনকে সেন্ট হিসেবে সম্মানিত করে। ধারণা করা হয়, ২৭০ সালের যে দিনটিতে ভ্যালেনটাইনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়, সেই তারিখটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি।
লুপারকালিয়া উৎসব এবং অন্যান্য পেগান বিশ্বাস থেকে মানুষের মনকে খ্রিষ্টধর্মের দিকে ফিরিয়ে আনতে রোমান পোপ গেলাসিয়াস ৪৯৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’স ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন।
যদিও দিনটিকে ধর্মীয় প্রেমের দিন হিসেবে পরিণত করার চেষ্টা করা হয় কিন্তু তরুণ তরুণীরা একে মানব-মানবীর প্রেমের দিনে পরিণত করে। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুর পর থেকেই প্রেমিক প্রেমিকাদের কাছে ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি বিশেষ দিন হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ তাদের কাছে ভ্যালেনটাইনের বড় পরিচয়- তিনি তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রেরণাদায়ী ব্যক্তি। এরপর থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি রোমান তরুণেরা তাদের প্রেমিকাদের কাছে কাগজে চিঠি লেখার সময় শেষে জুড়ে দিতো, ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন।’ তেমনি প্রেমিকারা উত্তরে লিখতো, ‘টু মাই ভ্যালেনটাইন’।
চতুর্দশ শতাব্দীতে সেন্ট ভ্যালেনটাইন’স ডে ধর্মীয় অনুভূতির চেয়ে প্রেমেরে ‘প্রতীক দিবস’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
মধ্যযুগ বিষয়ক স্কলার হেনরি অ্যানসগার কেলি তার ‘চসার অ্যান্ড দি কাল্ট অফ সেন্ট ভ্যালেনটাইন’ বইয়ে দেখিয়েছেন, চসার হলেন প্রথম লেখক যিনি ভ্যালেনটাই’স ডের সাথে রোমান্সকে জড়িয়েছেন।
প্রাচীন যুগের মতো মধ্য যুগেও ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে বিশ্বাস করা হতো যে, ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ পাখিরা একে অপরের সাথে মিলিত হয়। হেনস, চসার প্রমুখ লেখক তাদের লেখায় প্রেমের প্রতীক হিসেবে পাখিকে ব্যবহার করতেন। চসারের ‘দি পার্লামেন্ট অফ ফাউলস’ কবিতায় সেন্ট ভ্যালেনটাইস ডে এবং পাখিদের কথা বলা হয়েছে।
মধ্যযুগে ভ্যালেনটাইন ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেন্টে পরিণত হন। এক পর্যায়ে কোথাও কোথাও দিনটি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।
ষোড়শ শতাব্দী থেকে কাগজের কার্ড বিনিময় শুরু হয়। আঠারো শতকে ইংল্যান্ডে এই দিনটিতে হাতে তৈরি কার্ড বিনিময় করার একটি ধারা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই কার্ডে লেইস, রিবন ব্যবহারের পাশাপাশি প্রেমের দেবতা কিউপিড ও হার্টশেপ ছবি আঁকার প্রচলন শুরু হয়। এক সময় ভ্যালেনটাইন’স ডের কার্ড শুধু খ্রিষ্টসমাজেই বিনিময় হতো। পরবর্তীকালে এই ধারা সব ধর্মের এবং সব ধরনের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
১৭০০ সালের দিকে ইংরেজ রমণীরা কাগজে তাদের পরিচিত পুরুষের নাম লিখে পানিতে ছুড়ে মারতো কাদা মাটি মিশিয়ে। যার নাম প্রথম ভেসে উঠতো সেই হতো প্রকৃত প্রেমিক। ১৮০০ সালে তামার প্লেটে একই ডিজাইনের অনেক কার্ড ছাপা হয়।
ভ্যালেনটাইন’স ডের সবচেয়ে পুরানো হিসেবে বৃটিশ মিউজিয়ামে যে কার্ডটি প্রদর্শিত হচ্ছে সেটি ১৪১৫ সালের। এই কার্ডের প্রেরক ছিলেন ডিউক অফ অরলিয়ন হিসেবে পরিচিতি চার্লস। তিনি টাওয়ার অফ লন্ডনে বন্দী থাকার সময় তার স্ত্রীকে কার্ডটি পাঠিয়েছিলেন।
ইংল্যান্ডের প্রভাবে তাদের কলোনি আমেরিকাতেও সেন্ট ভ্যালেনটাইন’স ডে পালন করার রীতির সূচনা হয়। ১৮৪০-এর দিকে ই. এ. হাওল্যান্ড নামের এক নারী আমেরিকায় ভ্যালেনটাইন’স ডে নিয়ে প্রচারণায় নামেন। তিনি প্রথম ভ্যালেনটাইন’স ডের শুভেচ্ছা কার্ড ব্যাপক ভাবে তৈরি করেন। তাকে আমেরিকার ‘মাদার অফ ভ্যালেনটাইন’ বলা হয়।
প্রতি বছর আমেরিকায় ভ্যানেটাইন’স ডে একটি বাণিজ্যিক সাফল্য নিয়ে আসে। ২০১৬ সালে আমেরিকার গ্রিটিংস কার্ড অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে সারা বছর তাদের বিক্রি হওয়া কার্ডের কমপক্ষে চার ভাগের এক ভাগই হলো ভ্যালেনটাইন’স ডের কার্ড। শুধু কার্ড নয়, সেন্ট ভ্যালেনটাইন’স ডে সারা বিশে^ গোলাপসহ নানা ফুল, চকোলেট, উপহার সামগ্রী, পর্যটন, মিডিয়া, বিনোদন সহ নানা ব্যবসাকে লাভজনক করে তুলেছে ও ব্যাপক মাত্রায় রূপ নিয়েছে। শুধু আমেরিকাতেই ১৪ ফেব্রুয়ারি এক দিনে ২৬ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়।
সেন্ট ভ্যালেনটাইনস ডে বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে ভালোবাসা দিবস হিসেবে প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে পালিন হয়। সাংবাদিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব শফিক রেহমান তার সম্পাদিত সাপ্তাহিক যায়যায়দিন-এর মাধ্যমে ভালোবাসা দিবসের প্রচলন করেন। প্রথমে ১৯৯৩ সালে যায়যায়দিন পাঠকের লেখা নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। এবং পরের বছর বইমেলায় যায়যায়দিন স্টলে হার্টশেপ কুশন, ভালোবাসর বই, কার্ড ইত্যাদি বিক্রি ও লাল গোলাপ বিলি করে দিবসটিকে জনপ্রিয় করে তোলা হয়। বর্তমানে এটি সারা দেশে ব্যাপক ভাবে পালিত হচ্ছে। ভালোবাসা দিবসের ক্ষেত্র বাংলাদেশে শুধু প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়-বন্ধু -প্রিয়জনের মধ্যে দিনটি বিশেষ ভাবে জায়গা করে নিয়েছে। এমনকি পশুপাখির প্রতি প্রেম, দেশপ্রেমের মতো বিষয়ও এই দিবসে আলোচিত হয়।
যদিও কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে এটির নাম ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ করা হয় নি। ভালোবাসা দিবস এক ধরনের জাতীয় দিবসে পরিণত হয়েছে। এই ঘোষণা কোনো কর্তৃপক্ষের নয়, বরং ভালোবাসাকে ভালোবেসে অসংখ্য তরুণ তরুণী এই দিনটিকে আপন করে নিয়েছে। একই সঙ্গে সব বয়সের মানুষের কাছে দিনটি হয় ওঠে পরম কাঙ্খিত এবং আক্ষরিক অর্থেই ভালোবাসার দিন।
……………………………………………
Leave a Reply