বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকায় ঝুম বৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই প্রায় একই অবস্থা। আবহাওয়া অফিস বলছে, সারাদিন থেমে থেমে এমন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
এই আবহাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ইতোমধ্যে তিন নম্বর এবং দেশের সকল নদীবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সকালে চেষ্টা এই সতর্ক সংকেত তুলে নেওয়ার ভাবনা ছিল; কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় তোলা যায়নি।”
তবে তিনি আশা করছেন, আজ বিকালের পর এই সতর্ক সংকেত তুলে নেওয়া হতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখানো হচ্ছে
বিকাল নাগাদ সমুদ্র ও নদীবন্দরের সতর্ক সংকেত তুলে নেওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছে আবহাওয়া অফিস; কারণ আজ সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমতে পারে।
আগামীকাল শুক্রবার থেকে বৃষ্টিপাত আরও কমে আসবে। তারপর তাপমাত্রা বাড়তির দিকে যাবে, বলছিলেন আবহাওয়াবিদ মি. হক।
তবে গত কয়েকদিন ধরে যে মাত্রায় গরম পড়ছিলো, ততটা গরম পড়বে না বলে জানান তিনি।
এখানে উল্লেখ্য, সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেওয়ার অর্থ হলো, বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে।
সেক্ষেত্রে বন্দরের নৌযানগুলোর দুর্যোগ কবলিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অনূর্ধ্ব ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের নৌযান, মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয় নিতে হবে।
আবহাওয়ার নতুন সতর্ক সংকেত দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী, নদীবন্দরের জন্য এক ও দুই নম্বর সতর্ক সংকেত নেই। কিন্তু বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির জন্য দৃষ্টিগ্রাহ্যতা কমে গেলে নদীর নৌযানগুলোকে সাবধানে চলাচল করার উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে এমন সতর্কবার্তা ঘোষণা করা হয়।
বৃষ্টিতে খেলছে শিশুরা
ঢাকায় আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা নাগাদ ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে এই বৃষ্টির প্রায় পুরোটাই হয়েছে সকাল ৯টার পর।
এর আগের তিন ঘণ্টায় ঢাকায় মাত্র দুই মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
ঢাকায় সকাল সকাল এত কম সময়ে এত ভারী বৃষ্টিতে অফিস ও স্কুলগামী মানুষ বিপাকে পড়ে।
আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক বলছেন, সারাদিন ঢাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলেও দিনের বাকিটা সময়ে এর পরিমাণ কমবে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায়ও ঢাকায় ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে দিনাজপুরে। সেখানে ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় মোট ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এই সময়ে রংপুরে ৭০ ও সৈয়দপুরে ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে, বিশেষ করে চট্টগ্রামে কম বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে।
যদিও আজ সকালের পূর্বাভাস অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে খুলনার কুমারখালীতে, ১০৪ মিলিমিটার।
আজ ঢাকায় ছয় ঘণ্টায় ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে
গত মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের একটি সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিলো।
তখন বলা হয়েছিলো, ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা, অর্থাৎ আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে “মোটামুটি ভারী থেকে অতি ভারী” বর্ষণ হতে পারে।
সেইসাথে, তার দুইদিন আগে সমুদ্রে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার কথাও বলেছে অধিদপ্তর।
“সমুদ্রে লঘুচাপ তৈরি হয়, গত ২২শে সেপ্টেম্বর। পরবর্তীতে এটি ভারতের ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্তু বাংলাদেশে কনভিক্টিভ ক্লাউড বা পুঞ্জীভূত মেঘ তৈরি অব্যাহত থাকে,” বলেন মি. হক।
পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তার আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং মৌসুমী বায়ুর অক্ষের সাথে মিলিত হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মি. হকের ভাষ্য, “বাংলাদেশে বর্তমানে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় অবস্থায় আছে। লঘুচাপ ও সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর মিলিত হওয়ার প্রভাবেই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে দেশে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবার সকালের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মৌসুমী বায়ু এখন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায়ও মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল, ফাইল ছবি
বাংলাদেশে গত দু’দিন ধরেই থেমে থেমে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক বলেছেন, এই ধরনের টানা বৃষ্টির একটি ভালো দিকও আছে।
“যদি বৃষ্টি টানা হয়, তখন যদি সমুদ্রেও এরকম বৃষ্টি হয়, সাগর ঠান্ডা থাকবে। সাগর যত বেশি ঠান্ডা থাকবে, ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কাও কমে,” বলছিলেন মি. হক।
“কিন্তু এক্ষেত্রে এমন ঘটবে না। কারণ, আগামীকাল থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যেতে পারে,” যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশে মার্চ থেকে মে এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বর- এই সময়টা ঘূর্ণিঝড়প্রবণ।
এখন যেহেতু সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ চলছে, তাই নিকট ভবিষ্যতে কোনও ঘূর্ণিঝড় হওয়ার শঙ্কা আছে কি না, জানতে চাওয়া হয়েছিলো এই আবহাওয়াবিদের কাছে।
তিনি বলেছেন, “ক্লাইমেট মডেল অনুযায়ী, আপাতত সেরকম কিছু দেখা যাচ্ছে না।”
গত বছর অক্টোবরের শেষভাগেই বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় হামুন।
ঝড়টি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বাতাসের গতি নিয়ে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে।
ওই ঝড়ে কক্সবাজারে দেয়াল ধসে এবং গাছ চাপা পড়ে দুইজনের মৃত্যুও হয়েছে।
হামুন নামটি ইরানের দেওয়া। যার অর্থ হচ্ছে সমতল ভূমি বা পৃথিবী।
বিবিসি নিউজ বাংলা
Leave a Reply