মানুষটিকে মনে না করিলেও দিব্যি দিন ও রাত্রি চলিয়া যায়। তবুও কেন যেন শুধুমাত্র তাঁহার জম্ম বা মৃত্যু দিনে নহে, জীবনের চলার পথে বারংবার তিনি সম্মুক্ষে আসিয়া হাজির হন।
কোন কিছু লিখিতে বসিলেই মনে পড়িয়া যায়, কর, খল, ঘট, জল। আ কার ই কার হ্রসকার দীর্ঘ ঈ কার সবই বাদ দিয়া শুধুমাত্র দুটি করিয়া বর্ণ পাশাপাশি বসাইয়া একটি শব্দ তৈরি করিয়া শিশুকে শেখানোর জন্যে তিনি লিখিয়াছিলেন। আমাদের মতো অনেকেরই প্রথম ছাপা অক্ষরে পড়া শব্দ এইগুলোই। যখন ছোট বেলায় পড়িয়াছিলাম তখনও যেমন মনে শব্দগুলো ঝংকার তুলিতো এখনও তোলে।
রবীন্দ্রনাথ বিদ্যাসাগরের জল পড়ে, মেঘ ডাকে কে প্রথম কবিতা হিসাবে অন্তরে গাথিয়া দোলায়িত হইয়াছিলেন। আমাদের মতো সাধারণদের যদি বলা হয়, তোমাদের প্রথম কবিতা কী- তাহলে সমস্বরে যদি বলিয়া উঠি , কর, খল, ঘট, জল। দোষ হইবে কি? মনে কি একটি ছন্দ দোলায়িত করে না।
নাম ছিলো তার প্রথম ভাগ। প্রথম কয়েক পাতা বর্ণ পরিচয় গুলো পড়িবার পরে প্রথম শব্দগুলো এমনি ছন্দ ঝংকারে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিলো। যাহা সারা জীবন মনের মধ্যে কোথায় যেন বসিয়া আছে।
প্রথম ভাগ পার করিতে পারিলেই গৃহ শিক্ষক মহোদয় নিজ হাতে দ্বিতীয় ভাগ তুলিয়া দিতেন। দ্বিতীয় ভাগ জটিল শব্দ শেখাইলেও বইখানা কেমন যেন নিজ শক্তিতে শেষের দিকে টানিয়া লইয়া যাইতো। যাহা এখনও বার বার মনে পড়ে “ শ্রম না করিলে, লেখাপড়া হয় না। যে শ্রম করে সেই লেখাপড়া শিখিতে পারে”। আবার মনে পড়িয়া যায়, “ সে কখনও আলস্যে কাল কাটায় না। যে সময়ের যে কাজ মন দিয়া তাহা করে” । “ যে সময়ে বিদ্যালয়ে থাকে, গুরু মহাশয় যে সময়ে যাহা করিতে বলেন, প্রফুল্ল মনে তাহা করে কদাচ তাহার অন্যথা করে না”।
গুরু মহাশয়রা আজ বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হইতে চলিয়াছেন। পৃথিবীর নিয়ম অনুয়ায়ী কোন প্রাণী’র বিলুপ্তি ঘটিলে- সেখানে শক্তিশালী অন্যপ্রাণী লেজ দাপিয়ে বেড়ায়।
পৃথিবীর এ নিয়মে যাহাই ঘটুক না কেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় তোমাকে কেউ না কেউ স্মরণ করিবেনই। আর না করিলেও তোমার কোন ক্ষতি নাই। কারণ, রবীন্দ্রনাথ বলিয়া গিয়াছেন, বাঙালির মধ্যে ভুল ক্রমে দুই একজন মানুষ জম্মিয়া যায়, বিদ্যাসাগর তাহাদেরই একজন। তাই তুমি বাঙালির থেকে দূরে থাকিলেও মনুষ্য সমাজের কোন ক্ষতি নাই।
–কালান্তর
Leave a Reply