শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৪ পূর্বাহ্ন

এক দশকের অপেক্ষার শেষে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ

  • Update Time : শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২.১৬ পিএম
আপার প্রাইমারিতে অবশেষে ১৪ হাজারেরও বেশি নিয়োগ হতে চলেছে।

পায়েল সামন্ত কলকাতা

মামলার জটিলতা কেটে যাওয়ায় উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ হতে চলেছে। ১৪ হাজারের বেশি শূন্যপদের জন্য মেধা তালিকা প্রকাশ করেছে কমিশন। পুজোর আগেই শুরু হতে পারে কাউন্সেলিং।

পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয়ে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে একের পর এক মামলা হয়েছে আদালতে। এই মামলার জট ছাড়িয়ে অবশেষে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

সুপ্রিম রায়

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মতো স্কুলে প্রাথমিক স্তরে নিয়োগ ঝুলে ছিল মামলার জেরে। নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠায় মেধা তালিকা বছরের পর বছর আদালতের সবুজ সংকেত পায়নি। বছর চারেক আগে কলকাতা হাইকোর্ট ১৪ হাজারের বেশি শূন্যপদে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিল।

এর বিরুদ্ধেও চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ মামলা করেছিলেন সর্বোচ্চ আদালতে। তাদের অভিযোগ ছিল, হাইকোর্টের রায় সংরক্ষণ নীতির বিরোধী। তারা যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে ডাক পাননি বলে দাবি করেন। যদিও তাদের দাবি নাকচ করে দেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।

নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা চাকরিপ্রার্থীদের পাল্টা সওয়াল ছিল, শীর্ষ আদালতে যারা আর্জি জানিয়েছেন, তারা হাইকোর্টে মামলা করেননি। অভিযোগ থাকলে নিম্ন আদালতে কেন আগে আবেদন করেননি ওই চাকরিপ্রার্থীরা? এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। এর ফলে নিয়োগের পথে সব বাধা দূর হয়ে যায়।

এক দশকের অপেক্ষা

এই রায়ের পর বুধবার স্কুল সার্ভিস কমিশন নিজস্ব ওয়েবসাইটে মেধা তালিকা প্রকাশ করে। এরপর চাকরিপ্রার্থীদের জানানো হবে কাউন্সেলিংয়ের সূচি। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দুর্গাপুজো। তার আগে কাউন্সেলিং শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের প্রায় ১০ বছরের প্রতীক্ষা শেষ হলো। চাকরির পরীক্ষায় বসা প্রার্থীরা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের গোড়ায় উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল। পরীক্ষা হয় ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে। এক বছর পর ফল প্রকাশিত হয়।

গত আট বছরে দুবার নিয়োগের জন্য মেধা তালিকা প্রকাশ করেছে কমিশন। কিন্তু সেগুলি দুর্নীতির অভিযোগে বাতিল হয়ে যায়। মূল অভিযোগ ছিল, টাকা নিয়ে যোগ্য প্রার্থীদের বাতিল করে অযোগ্যদের মেধা তালিকায় ঠাঁই দেয়া হয়েছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রথম তালিকা হাইকোর্ট বাতিল করে দেয়। এরপর দ্বিতীয় তালিকাও সংশোধন করতে বলে আদালত। এর ফলে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকতে হল চাকরিপ্রার্থীদের। বুধবার প্রকাশিত তৃতীয় তালিকা তাদের নিয়োগের পথ প্রশস্ত করেছে।

কমিশনের সূত্র অনুযায়ী, ১৪ হাজার ৫২ জনের মেধা তালিকা হাইকোর্ট প্রকাশ করতে বলেছিল। আরো কিছু সংযোজনের পর এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৬২-তে। এরপর কিছু গরমিলের জন্য ৯৬ জনের নাম বাদ পড়ে। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বুধবার প্রকাশিত কমিশনের তালিকায় প্রার্থীদের নাম, প্রাপ্ত নম্বর-সহ অন্যান্য তথ্য বিশদে দেয়া হয়েছে।

সুপ্রিম নির্দেশের পরও যেন নিশ্চিত হতে পারছেন না চাকরিপ্রার্থীদের কেউ কেউ।

পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের তাতাসী রায় ডিডাব্লিউকে বলেন, “নিঃসন্দেহে এই প্যানেল প্রকাশকে আংশিক জয় বলতে পারি। পুরোপুরি জয় তখনই বলতে পারব, যখন আমরা স্কুলে যোগদান করব। ১০ বছর ধরে বিভিন্ন রকম টালবাহানা করে আমাদের নিয়োগ আটকে রাখা হচ্ছিল। এ জন্য প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থী মরিয়া হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। আবার যদি কোনো কারণে নিয়োগ আটকে যায়, তা হলে ফের রাস্তায় নামব।”

অন্য প্রার্থীদের আশা

সুপ্রিম কোর্টের রায় দেখে আশায় বুক বাঁধছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের চাকরিপ্রার্থীরা। মাসের পর মাস তারা আন্দোলন করে চলেছেন, চলছে টানা অবস্থান ও মিছিল।

এই আন্দোলনে সামিল কৃষ্ণনগরের অভাবী পরিবারের তরুণ আবু নাসেরের নাম এসএসসি-র মেধা তালিকায় থাকা সত্ত্বেও তিনি নিয়োগ পাননি। নাসের ডিডাব্লিউকে বলেন, “মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের নিয়োগ নিয়ে আমরা গান্ধী মূর্তির পাদদেশে এক হাজার ৩০০ দিন ধরে অবস্থান-বিক্ষোভে আছি। উচ্চ প্রাথমিকের ক্ষেত্রে আদালতে যেটা দেখলাম, এসএসসির পক্ষের আইনজীবী এবং উচ্চ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় উদ্যোগ নিয়ে মামলা এগিয়ে নিয়ে গেলেন, তার নিষ্পত্তি হলো। একইভাবে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়ারও নিষ্পত্তি হোক। শীর্ষ আদালতে তারিখের পর তারিখ আসছে, কিন্তু মামলার শুনানি হচ্ছে না। ”

তিনি বলেন, “কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে প্যানেল এখন বাতিল। চাকরি হোক বা না হোক, মামলার যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। দিনের পর দিন মামলা ঝুলে থাকা আমাদের পক্ষে আরো যন্ত্রণার।”

বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, “কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে আমরা জিতেছিলাম। যে সব বেআইনি কাজ কমিশন করেছিল, তা সংশোধন করে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে বলেছিল আদালত। তথাকথিত সফল বলে যারা নিজেদের দাবি করছেন, যারা বেআইনি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিলেন, তারা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। তাদের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। সুতরাং আগামী দিনে যখন এসএসসি মামলার শুনানি হবে, তখন তাদের আবেদন খারিজই হবে। এতে বিশেষ চিন্তার কারণ নেই। শুনানি হচ্ছে না বলেই চিন্তা।”

ডিডাব্লিউ ডটকম

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024