রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

প্রকৃতিবিদের কাহিনী (কাহিনী-৪০)

  • Update Time : শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

পিওতর মান্তেইফেল

প্রকৃতিবিদের চোখে

বক্তাটির পরনে হাফ-প্যান্ট, গলায় বাঁধা পাইওনিয়রদের লাল রুমাল। অল্পবয়সী শ্রোতারা তার প্রতিটি কথা গিলছিল সাগ্রহে…

এটা হল মস্কো চিড়িয়াখানার কিশোর জীববিদ চক্রের একটা হেমন্তী সভা। বিগত গ্রীষ্মে কী কী কাজ হয়েছে তার আলোচনা চলছিল। একের পর এক রিপোর্ট দিল তারা। প্রচুর চিত্তাকর্ষক পর্যবেক্ষণ চালিয়েছে কিশোর প্রকৃতিবিদেরা, মাথা- খাটানো পরীক্ষা করেছে অনেক।

সমাগতদের একটা মজার ঘটনা জানাল শুরা গকভ। মিলন-কালে উই- ঢিপি থেকে তরুণ উইয়েরা উড়ে যাবার পর কীভাবে তাদের পাখা খসে যায়, সেটা পর্যবেক্ষণ করেছে সে। ডানাওয়ালা উইগুলোকে সে একটা বিশেষ আধারে মন দিয়ে লক্ষ্য করতে থাকে। দ্বিতীয় দিনেই তাদের মধ্যে সুস্পষ্ট অস্থিরতা দেখা গেল: মনে হল যেন ডানায় ওদের অসুবিধা হচ্ছে, ভয় পাচ্ছে। একের পর এক উইগুলো বে’কে গিয়ে প্রথমে একটা ডানার গোড়া কামড়ে ছি’ড়ে ফেলল, তারপর দ্বিতীয় ডানাটা।

এইভাবে শুরা সিদ্ধান্ত করল যে উই নিজেই নিজের ডানা কেটে ফেলে, আগে যা ভাবা হত, সেভাবে পরস্পর কামড়ে নয়।

অন্য দুটি ছেলে বোরিয়া ভাসিলিয়েভ আর ভলোদিয়া সীতিন গ্রীষ্মে লক্ষ্য করে উইরা কী শিকার নিয়ে যায় তাদের বাসায়। উইয়ের সারির কাছে বসে তারা উইদের সবকিছু শিকার কেড়ে নিয়ে বয়ামে রাখতে থাকে। এ থেকে কিশোর জীববিদরা এই সিদ্ধান্তে আসে যে উইয়েরা প্রধানত শিকার করে অনিষ্টকর কাঁট আর গেড়ি। উইয়েদের একটা সারিকে ওরা পর্যবেক্ষণ করে দুই ঘণ্টা ধরে। পর্যবেক্ষণাধীন উই-ঢিপিটার বাসিন্দারা দিনে কী পরিমাণ শিকার ধরে তা জানার জন্যে বোরিয়া আর ভলোদিয়াকে শুধু একটা সরল অঙ্ক কষতে হয়েছিল। একটা সারিতে দুই ঘণ্টার ভেতর যত খাদ্য তারা পেয়েছিল সেটাকে তারা পাঁচগুণ করে, কেননা উই-ঢিপি থেকে এ রকম সারি চলে গিয়েছিল পাঁচটা; তারপর সেটার আরো পাঁচগুণ, কেননা গ্রীষ্মের এ সময়টা উইদের কর্মদিনের দৈর্ঘ্য দশ ঘণ্টা।

মস্কো অঞ্চলের পদূকিনো গ্রামে ইউরা সকোলভ একটা প্রাচীন স্তূপে খোঁড়া ব্যাজারের গর্ত খুজে পায়। এখানে শুধু প্রকৃতি-বৈজ্ঞানিক নয়, প্রত্নতাত্ত্বিক সন্ধানও চালানো যেত: গর্ত খোঁড়ার সময় ব্যাজাররা মাটির সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীন কালের ছোটোখাটো ব্যবহার্য জিনিসও বার করে দিত।

গ্রীষ্মে বোরিয়া গাত্কাভি যায় ক্রিমিয়ার সংরক্ষিত জীবাঞ্চলে, একজাতের রো হরিণ পর্যবেক্ষণ করে। সে বললে, লোক দেখলে ওরা ঝোপের ভেতর থেকে কর্কশ গলায় ডাকতে শুরু করে। বোরিয়া বোঝাল যে শত্রু বা যাকে তারা শত্রু বলে ভাবছে তার আচমকা আবির্ভাবে এই জাতের সব হরিণই তাই করে। ডাকে এরা খুবই জোরে।

উই সম্পর্কে আরো একটা চিত্তাকর্ষক রিপোর্ট দিলে ভলোদিয়া সীতিন। গ্রীষ্মে ছোটো ছোটো কালো একজাতের উইয়ের দিকে তার নজর যায়, এরা তাদের বাগান-বাড়িতে এসে চিনি-টিনি, নানা খাবার খেত।

‘এদের বাসাটা আবিষ্কার করলাম বাগান-বাড়ি থেকে সামান্য দূরে,’ বললে ভলোদিয়া। ‘সেখান থেকে তাদের লম্বা একটা সারি চলে এসেছিল বাড়ি পর্যন্ত। বাসায় কেরোসিন ঢেলে দিই। সেই থেকে বাড়িতে আর উই দেখা দেয় নি, তবে তাদের জায়গা নেয় পিসু। দিন দিনই তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।’

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, আগে যে পিসু দেখা যায় নি, তার কারণ কি এই নয় যে কাঠের তক্তার ফাঁকে ফাঁকে বাসা নেওয়া এইসব পরজীবীদের শুক খেয়ে

ফেলত উইয়েরা?

ভানিয়া দানিলভ আকৃষ্ট হয় পে’চায়। তার পর্যবেক্ষণ থেকে সে সুনিশ্চিত যে পেচার ছানারা ভয়ানক পেটুক। ও বললে:

‘দীর্ঘকর্ণ’ পে’চাদের আমি লক্ষ্য করি, তারা তাদের তিনটি বাচ্চার জন্যে রোজ নিয়ে আসত প’চিশটা করে নেংটি ই’দুর, কিন্তু তাতেও তাদের মন উঠত না।’

শুখার সময় প্রাণীরা কী করে, এই নিয়ে ছিল কিশোর জীববিদ ইউরা ন্তেইকের আগ্রহ। বিশেষ করে সে লক্ষ্য করেছে যে মক্ষিকাপালকেরা যদি মৌমাছিদের জন্যে বিশেষ জলের ব্যবস্থা না করে, তাহলে তারা কিছুতেই কাছের জলাশয় ছেড়ে আসতে চায় না, যদিও সবুজ ব্যাঙেরা তাদের খেয়ে ফেলে। গোল্ড ফিশু, কাক প্রভৃতি পাখি শুখার সময় নদী ছেড়ে যায় খুবই অনিচ্ছায়। জল ছেড়ে যেতে চায় না বলে তারা তখন মানুষকে তাদের খুবই কাছাকাছি আসতে দেয়…

অপেক্ষাকৃত অল্পসংখ্যক কিশোর জীববিদের এই হল গ্রীষ্মকালীন কাজের খতিয়ান। এ থেকে বোঝা যায় যে আমাদের ছেলেদের পর্যবেক্ষণ-শক্তি বেশ আছে, এমন সব চিত্তাকর্ষক পরীক্ষা চালাতে পারে তারা, যা থেকে প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত টানা সম্ভব।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024