ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
মায়াদের এই ধর্মীয় বিশ্বাস একথাও বলে যে মানুষের কথা, শব্দও ঈশ্বরের ঘরের রূপ গ্রহণ করে।এইভাবে ধূপ, বালচে (এক ধরনের পানীয়) এবং লোকাচার খাদ্যবস্তু লাক-ইল-কু (Lak-il-kuh)-এর মত ঈশ্বরের পাত্রে রাখা হয়। এটি অনেকটা মাটির মত কিছু দিয়ে ধূপ পোড়ানোর সামগ্রী। এইসব পাত্রর সবকটির মুখ একটু উল্টো করা উঁচু এবং এর উপর সাদা-লাল-এর টিপ দিয়ে সাজানো হয়।
তবে এইসঙ্গে একথাও বলা দরকার এই ধরনের ঈশ্বর নাকি প্রকৃত বা আসন দেবতার রূপ নয়। উপরন্তু এই আকারগুলি আসলে মানুষেরই এক কল্পিত রূপ। এবং এরা মাধ্যম হিসেবে মানুষের দান ঈশ্বরের কাছে পৌঁছে দেয়। লাকানডন দেবতাদের যে সব দান অর্পণ করা হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পম, কোপাল, ধূপ। এবং এগুলি পুড়ে গেলে দেবতাদের খাদ্য ডিমের ওমলেটে পরিণত হয়।
এখানে উল্লেখ্য মায়াদের এই দেবতা লাল রং-এর ভক্ত এবং কুক্স (Kuxu)-এর গন্ধ খুব আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেন। এই লাল রং তৈরি করা হয় আন্নামাত্তো (Annamatto) নামে একটি বিশেষ ধরনের গাছ-এর ফল থেকে। এই রং নানা ধরনের লৌকিক দ্রব্য এবং মাথার ব্যান্ড রং চিত্রায়িত করার কাজে ব্যবহার করা হয়। এইসব মাথার ব্যান্ড-এর সঙ্গে রং করা কাপড় বেঁধে দেওয়া হয়। এবং এই লাল কাপড়ের সঙ্গে রক্তের একটা অর্থ ভাবা হয়।
এই ধরনের ছবি ক্লাসিক মায়া চিত্রাঙ্কণে দেখানো হয়েছে। এসব ছাড়া তরল জাতীয় নানা নৈবেদ্য দেবতার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়। বিশেষ ধরনের ঝুড়ি, মাংস দেওয়া ওমলেট ঈশ্বরপাত্রের সামনে নিবেদন করা হয়। এবং তা মুখের উপর রাখা হয়। এই সঙ্গে মিষ্টি দেওয়া একটু শস্য ও মধু দেবতাকে খাওয়ানো হয়। দেবতা এই ভোগ গ্রহণ করার পর ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভক্তদের তা প্রসাদ করে বিতরণ করা হয়।
সাধারণভাবে দেবতাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এই নৈবেদ্য এবং বালসে (Balche) পান-এর অনুষ্ঠান লাকানডন জনগোষ্ঠীর প্রায় সব রীতি-আচারেই পালন করা হয়। এই ঈশ্বরের বাড়ি ছাড়াও মায়াদের মধ্যে গুহা এবং বেদীর ধারণা ও বিশ্বাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এই বিষয়টি মেনসাবাক (Mensabak) গ্রামের কাছে ইতসানোক-উক (Itsanok’uk) লেকের উপর লক্ষ্য করা যায়।
এর উপর জন্তুর উপর লাল চিত্রাঙ্কণ দিয়ে উঁচু মিনারের চূড়াটি ঢাকা দেওয়া হয়। এইসব গুহা প্রাচীন ঈশ্বরপাত্র (God Pots) এবং মানুষের মাথার খুলি দিয়ে ঢাকা। লাকানডনরা বিশ্বাস করে এইসব মাথা বা কঙ্কালের হাড় প্রাক্-স্পেনীয় যুগের এবং এসব মাথার করোটি মূলত দেবতাদের। পরবর্তীকালে তা মানুষের রূপ নিয়েছিল।
(চলবে)
Leave a Reply