ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
মায়া জনগোষ্ঠীর বর্তমান প্রজন্মের রীতি-আচার একটু স্বতন্ত্র। এই পরিবর্তন সমাজ এবং জনগোষ্ঠীর মধ্যে নানা মিশ্রণ, টানাপোড়েন, আত্তীকরণ-এর ফলে গড়ে উঠেছে। তবুও একথা বলার সুযোগ আছে যে বর্তমান মায়া গোষ্ঠীর রীতি-আচারকে প্রাক-কলম্বিয়ার বিশ্বাস, রীতি-আচার অনেক পরিমাণে প্রভাবিত করে।
একটি লোকাচারের গল্প উল্লেখ করা এখানে প্রাসঙ্গিক হবে। মানযোগ চামুলা মন্ত্র-কথার শব্দ দিয়ে পূর্ণ হল। পাইন/আপেল গাছের সুন্দর গন্ধ যেন মোমবাতির গন্ধর সঙ্গে মিশে গেল। তারপর এই সুন্দর পরিবেশের মধ্যে পর্যটক, তীর্থযাত্রীরা এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে এগিয়ে চলল। সঙ্গে প্রার্থনা করল ধন, স্বাস্থ্য।
ভাগ্যের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য একজন বয়স্কা মহিলা এবং অন্য একজন মতলববাজ লোক ডিম এবং মুরগী মাথায় করে এগিয়ে আসল। শ্রীমান বা ঐ খারাপ লোকটি মহিলার শরীরে কি আছে তা ভাল করে দেখার চেষ্টা করল। এবং এরপর ভোগ নৈবেদ্য পাবার পর ঐ মতলববাজ মুরগির মধ্যে রোগ ঢুকিয়ে দিল। এরপরের গল্পটিও চমকপ্রদ।
তিন ফুট লম্বা একজন বেদীর কাছে দাঁড়াল সেলাই-এর সুন্দর নকশা করা পোশাক পরে এবং ঐসব সাধারণ মানুষকে সম্বর্ধনা জানাল। এক্ষেত্রে লোকবিশ্বাস হল চিয়াপাসের তোতজিল (Tzotzil) মায়া চার্চ-এর পাদ্রী সেইন্ট হল বৃষ্টি এবং ফসলের ভাল ফলনের জন্য দায়ী। লোকবিশ্বাসের আরেক মুকুট-এর সন্ধান পাই চিয়াপাসে তিলা নামক চোল শহরে (Chol Town)।
ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক নিকোলাস হপকিন্স এবং ক্যাথলিন জোসেরান্ড কালো খ্রিস্টান-এর তত্ত্বটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এবং বলেছেন এই কৃষ্ণ খ্রিস্টকে তিলার প্রধান পুরুষ বলে জানে। এই কৃষ্ণখ্রিস্ট হল খ্রিস্ট এবং মূর্তি ইকাল (Ikal)-এর মিশ্রণে এই প্রাক-কলম্বিয়ার গুহায় বাস করা তৈরি এক দেবতা।
বছরের জানুয়ারি এবং জুন মাসে তীর্থযাত্রীরা এই শহর পর্যটনে আসেন এবং তিলাকে দেবতা মেনে নিজেদের মঙ্গলের আশায় প্রার্থনা করেন। আঞ্চলিক লোকবিশ্বাস বা সংস্কার হল এই ইকাল (Ikal) নাকি পৃথিবীর মালিক-এর অবতার এবং আত্মার দেবতা। এই দেবতা আবার ধনসম্পত্তি এবং সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি নিয়ে বসে আছেন। ভক্তজনেরা দেবতার কাছ থেকে আশীর্বাদ মঙ্গল লাভের আশায় নান উপঢৌকন ও নৈবেদ্য সাজিয়ে দেয়।
(চলবে)
Leave a Reply