শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১৭ অপরাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৭৩)

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে, রাণী ভবানীর সমস্ত ‘সৎকীর্ষির উল্লেখ করা এ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নহে। কেবল বড়নগরসংক্রান্ত পুণ্যকীর্ত্তির কথামাত্র উল্লিখিত হইবে। আমরা প্রথমতঃ তাঁহার বড়নগরের দৈনন্দিন ক্রিয়ার উল্লেখ করিতেছি। রাণী ভবানী প্রতিদিন রাত্রি চারিদণ্ড থাকিতে গাত্রোত্থান করিয়া, জপকার্য্যে উপবিষ্ট হইতেন; রাত্রি অর্থদণ্ড থাকিতে জপশেষ হইলে, পুষ্পোস্থানে প্রবেশ করিয়া স্বহস্তে পুষ্পচরন করি- তেন। যেদিন অন্ধকার থাকিত, সেদিন ভৃত্যেরা অগ্রপশ্চাৎ মশাল ধরিয়া যাইত।

পুষ্পচয়নের পর প্রত্যুষে গঙ্গাস্নান করিয়া, বেলা দুই দণ্ড পর্যন্ত ঘাটে বসিয়া জপ, গঙ্গাপূজা ও শিবপূজা করা হইত। তাহার পর প্রত্যেক দেবালয়ে ‘পুষ্পাঞ্জলি দিয়া, গৃহে আগমনপূর্ব্বক পুরাণশ্রবণ, শিবপূজা ও ইষ্টপূজা করিতেন। বেলা দুইপ্রহর পর্যন্ত এই সমস্ত কার্য্যে অতি- ১। বাহিত হইত। তাহার পর স্বহস্তে রন্ধন করিয়া। দশজন ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইতেন; অবশেষে পরিবারস্থ ব্রাহ্মণসকলের ভোজনের ব্যবস্থা করিয়া আড়াই প্রহর বেলার পর স্বয়ং হবিষ্যান্ন আহার করিতেন।

তদনন্তর দেওয়ান-দপ্তরে কুশাসনে উপবেশনপূর্ব্বক মুখশুদ্ধি করিয়া কৰ্ম্ম- চারিগণকে বিষয়কর্ম্মের আজ্ঞা দিতেন; তাহারা সেই সমস্ত আদেশ লিখিয়া লইত। তৃতীয় প্রশ্নের পর পুনর্ব্বার ভাষাতে পুরাণশ্রবণ করি- তেন। দুই দণ্ড বেলা থাকিতে পুরাণশ্রবণ শেষ হইত। সেই সময়ে কর্মচারিগণ তাঁহার আদেশানুযায়ী লিখনাদি প্রস্তুত করিয়া স্বাক্ষর করাইতে আসিত। রাণী এই লিখনাদি শুনিয়া তাঁহাতে মুদ্রাঙ্কন করিয়া দিতেন। সায়ংকালে পুনর্ব্বার গঙ্গাদর্শন ও গঙ্গাতে স্বতপ্রদীপ দিয়া, বাসভবনে আসিয়া রাত্রি চারিদণ্ড পর্যন্ত মালা জপ’ করিতেন; তাহার পর জলগ্রহণান্তে দেওয়ান-দপ্তরে বিষয়সংক্রান্ত কার্য্যের আজ্ঞা দিতেন।

রাত্রি এক প্রহরের সময় প্রজাদিগের প্রার্থনা শুনিয়া বিচার করিতেন; অবশেষে পৌরজন কে কিভাবে থাকে, অনুসন্ধান লইয়া, রাত্রি দেড়- প্রহরের সময় শয্যায় গমন করিতেন। রাণী ভবানী বড়নগর ও তাহার নিকটস্থ অন্যান্য দেবালয়ের জন্য প্রায় লক্ষ টাকার ‘বৃত্তি নির্দেশ করিয়া দেন। এই সমস্ত-অর্থ দেবকার্য্যে ব্যয়িত হইত। তিনি তাহা হইতে এক কপর্দকও গ্রহণ করিতেন না। তাঁহার নিজের ও তাঁহার সহচরী বিধবামণ্ডলীর জন্য অবশেষে তাঁহাকে গবর্ণমেন্টের বৃত্তির উপর নির্ভর করিতে হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024