শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪৪ অপরাহ্ন

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-২৩)

  • Update Time : বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪, ৬.৩১ পিএম

ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

এইসব প্রাচীন কলাশিল্প-সংস্কৃতির মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস মিশে আছে। পর্যবেক্ষণ করে মনে হয় এসবের সৃষ্টি হয়েছিল ৩০০ প্রাক্-খ্রিস্টিয় শতক (300 BC), এবং তা হল প্রাক-ক্লাসিক যুগের। জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেমস্ ব্র্যাডি (James Brady) সম্প্রতি এই তথ্য সংগ্রহ করেছেন যে নাজতুনিচ (Naj Tunich) নামে একটি দু’মাইল লম্বা গুহা আছে যার ওপর বর্ণময় চিত্রণ অঙ্কিত।

এটি গুয়াতেমালার দক্ষিণ- পূর্বদিকে পেতেন (Peten) অঞ্চলে অবস্থিত। এবং এই দু’মাইল দীর্ঘ গুহার ধর্মীয় আবেদন এত জনপ্রিয় ছিল যে খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দী থেকেই পার্শ্ববর্তী প্রদেশ, শহর থেকে অনেক পর্যটক, তীর্থযাত্রী এখানে এই গুহা দর্শন করতে আসতেন। ঐ সময়েই গুহামন্দিরের প্রবেশপথে পাথরের পাটাতন বা উঁচু একটু জায়গা তৈরি করা হয়েছিল।

এছাড়া প্রায় ৪০টি গুহাকে নানাভাবে চিত্রাঙ্কিত করা হয়েছিল এবং এই ৪০টি গুহাচিত্রণ সম্পন্ন করা হয়েছিল আনুমানিক সপ্তম বা অষ্টম শতকের মধ্যে। উইসকনসিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিয়াউকী গুহার উপরে শিলালিপি পর্যবেক্ষণ করে তিনটি ক্রিয়াপদের পাঠোদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছেন। এই তিনটি ক্রিয়াপদ হল hul (উল)- অর্থ এসে পৌঁছন বা আসা, pak (পাক) – অর্থ ফেরত আসা এবং il (ইল) অর্থ দেখা বা কোনো ঘটনার সাক্ষী হওয়া।

শিলালিপির ভাষার অর্থ উদ্ধার করতে পাবার পর প্রত্নতাত্ত্বিকগণ মনে করেন যে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সাধারণ মানুষ এই গুহা ব্যবহার করতেন এবং তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের মধ্যে বা তার উপর গুহার একটি বিশেষ সম্পর্ক বা প্রভাব ছিল। একটি শিলালিপি পড়ে একথা জানা গেছে যে কারাকোল (Caracol) শহরে ৭৪৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সাধারণ মানুষ একটি প্রথা খুব মেনে চলত, যার নাম কাক কুচ (K’ak Kuch)।

এই লোকাচারে শব বা কোনকিছু দাহ করা হত। এই দাহ থেকে যে বাতাস বা গন্ধ বেরোয় তা স্থানীয় দেবতাদের সন্তুষ্ট করত বলে সমসাময়িক মায়ারা বিশ্বাস করত এবং দেবতা খুশী হলে পর্যটক বা বিশিষ্ট অতিথিরা নিরাপদে ঘোরাফেরা করতে পারত। বর্তমানে ১৫ মাইল দূরবর্তী তানজক (Tanjoc) এবং আলতা ভেরাপাজ (Alta Verapaz)-এর কেকচি (Kekchi) গ্রাম থেকে এইসব গুহায় ৬টার ঠিক আগে এসে পৌঁছয়।

এসে তারা ধূপের মত কিছু বা মোমবাতি জ্বালায়। এর থেকে তারা আশা করে মরশুমে আরো ভাল ও নিরাপদ ফসল উৎপাদন। এই ধরনের লোকাচার বা গান, মূর্তিপূজা, উৎসব ভারতীয় সমাজের অনেক গোষ্ঠী বিশেষত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায়। ফসল উৎপাদন-এর সঙ্গে ফার্টিলিটি কাল্ট-এর বিশ্বাস অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে।

(চলবে)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-২২)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-২২)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024