আর্কাদি গাইদার
প্রথম পরিচ্ছেদ
আমাদের আরজামাস শহরটি ছিল ভারি শান্ত আর ছোট্ট একটুখানি জায়গা, নড়বড়ে বেড়ায়-ঘেরা ফুল আর ফলের বাগানের ছায়া-ঢাকা। ওই সব বাগানে ফলে থাকত অসংখ্য ‘বাপ-মা চোঁর’ আর অসময়ে-পাকা আপেল, কিংবা ফুটত থরে থরে ব্ল্যাকথন’ আর রাঙা পিয়োনি ফুল।
আর বাগানের আশেপাশে সারা শহর জুড়ে ছিল যত সব নিস্তরঙ্গ, এ’দো পুকুর। ভালো মাছ বলতে যা-কিছু ছিল পুকুরে, তার বংশ লোপাট হয়ে গিয়েছিল কোন কালে, পুকুরগুলোয় ছিল কেবল হড়হড়ে চুনোপুটি আর চট্টচটে ব্যাঙের রাজত্ব। দূরে, পাহাড়ের পা ঘে’ষে বইত ছোট্ট নদী তেশা।
শহরটাকে দেখলে মনে হত যেন পুরোটাই সন্ন্যাসীদের একটা মঠ। গোটা তিরিশেক গিজে আর চার-চারটে পাঁচিল-ঘেরা আশ্রম ছিল শহরটাতে। অলৌকিক ব্যাপার-স্যাপার ঘটাতে পারে মেরীমাতা বা যিশুর এমন অনেক মূর্তি ছিল আমাদের শহরে। কিন্তু কেন জানি না, আজামাসে অলৌকিক ব্যাপার বড়-একটা ঘটত না। এর কারণ হয়ত এই যে আমাদের শহর থেকে মাত্র যাট কিলোমিটারের মধ্যেই ছিল সেই বিখ্যাত সারোভো আশ্রম আর সেখানকার বাসিন্দা যত পুণ্যাত্মা সাধুসন্তই অলৌকিক ক্রিয়াকর্ম সব নিজেরা একচেটে করে রেখেছিলেন।
আর তখন প্রায়ই শোনা যেত সারোভোতে আজব সব কাণ্ড-কারখানা ঘটছে। যেমন, কখনও অন্ধ তার দৃষ্টি ফিরে পাচ্ছে, পঙ্গু উঠে হাঁটাচলা করছে, আবার কখনও-বা জন্ম-কংজো খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে উঠছে, এইসব। কিন্তু আমাদের মূর্তি বা আইকনের সামনে এমন তাজ্জব কাণ্ড কখনও ঘটতে দেখি নি।
আমাদের শহরের মিত্কা বেদে ছিল ভবঘুরে আর নামকরা মাতাল। ফি- বছর দ্বাদশতিথি-তে এক বোতল ভোস্কার বাজি জেতার জন্যে সে জানুয়ারি মাসের কনকনে ঠাণ্ডায় নদীর ওপরে জমা বরফের ফাঁক-ফোকর দিয়ে জলে নেমে স্নান করত। কী আশ্চর্য, একদিন গুজব রটল এহেন মিত্কার নাকি দিব্যদর্শন
• দ্বাদশতিথি ক্রিস্স্সাস বা যিশুর জন্মদিনের পর দ্বাদশ দিনটি বা ৬ই জানুয়ারি। প্রাচ্যের প্রাজ্ঞ মানুষেদের সামনে যিশুর আবির্ভাবের দিন হিসেবে ওই দিনে গির্জেয় উৎসব পালিত হয়। সম্পাঃ ঘটেছে, সে মদ ছেড়ে দিয়েছে। আরও শোনা গেল, তার জীবনের মোড় গেছে ঘুরে, ‘পরিত্রাতার মঠ এ সে নাকি সন্ন্যাসী হবে বলে দীক্ষা নিতে যাচ্ছে। খবর শোনামাত্র লোকে ছুটল ‘পরিশ্রাতার’ মঠ-এ।
Leave a Reply