আর্কাদি গাইদার
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
একদিন কেতি-কোঁত করে সকালবেলার চা-টা গিলে, কোনোরকমে বইগুলো গুছিয়ে নিয়ে ইশকুলের দিকে দৌড়চ্ছি, এমন সময় পথে দেখা হয়ে গেল তিমুকা শৃকিনের সঙ্গে। তিল্কা আমার ক্লাসের বন্ধু। ছোট্ট ছেলে, ভারি ছটফটে। এমনিতে তিষ্কা শর্তুকিন ছিল নেহাত নিরীহ, গোবেচারা। তার নাকে যখন তখন স্বচ্ছন্দে ঘুষিটা-আশটা বসিয়ে দেয়া চলত, পাল্টা মার খাওয়ার ভয় ছিল না। তিঙ্কা খুশিমনে বন্ধুদের আধ-খাওয়া স্যান্ডউইচ খেয়ে ফেলে তাদের খাওয়ার হাত থেকে বাঁচাত, একছুটে ইশকুলের পাশের মুদির দোকানে গিয়ে ইশকুলে টিফিন করার জন্যে রুটি কিনে আনত। কেবল মাস্টারমশাইকে আসতে দেখলে ভয়ে-ভয়ে কেমন-যেন চুপ করে যেত, যদিও ভয় পাওয়ার কোনো কারণই ছিল না।
একটিমাত্র সাংঘাতিক নেশা ছিল তিষ্কার ভারি পাখি ভালোবাসত ও। ওর বাবার ওপর ছিল কবরখানার লাগোয়া গির্জের দেখাশোনার ভার। ওই গির্জেয় একটা ছোট্ট আস্তানা ছিল তাঁর। আস্তানাটা ছিল নানা জাতের পাখি-ভরতি খাঁচায় বোঝাই। তিমুক্কা নিজে পাখি কেনাবেচা করত, এর-তার সঙ্গে বদলাবদলি করত, আবার কবরখানায় জাল কিংবা ফাঁদ পেতে পাখি ধরতও।
একদিন হল কী, ব্যাপারী সিনিউগিন তাঁর ঠাকুমার সমাধি দর্শন করতে এসে দেখতে পেলেন সমাধির পাথরের ফলকের ওপর শণের বীজ ছড়ানো আর একটা টানা দড়িতে-বাঁধা জাল পাতা। অর্থাৎ, পাখি ধরার ফাঁদ তৈরি। সিনিউগিনের নালিশে সেদিন বাপের হাতে খুব একচোট মার খেয়েছিল তিষ্কা। আর আমাদের ধর্ম-শিক্ষার মাস্টারমশাই ফাদার গেন্নাদি বাইবেল-ক্লাসে বিরক্তির সুরে বলেছিলেন: ‘সমাধির উপর প্রস্তরফলক মৃত ব্যক্তির স্মরণেই স্থাপন করা হয়, অন্য কোনো কারণে নয়। সেই ফলকের উপর ফাঁদ পাতা বা অন্য কোনো শিকার ধরার কৌশল রচনা পাপ ও ঈশ্বরনিন্দার সামিল।’
বক্তৃতার মধ্যে তিনি মানবজাতির ইতিহাস থেকে এমন বেশ কয়েকটি উদাহরণ দিলেন যে-সব ক্ষেতে এই ধরনের অধর্মের ফলে অপরাধীর মাথায় দৈবশক্তির কঠোর শাস্তি নেমে এসেছিল।
Leave a Reply