রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৭ অপরাহ্ন

ইশকুল (পর্ব-১০)

  • Update Time : শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪, ৮.০০ পিএম
আর্কাদি গাইদার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

ফাদার গেন্নাদি সেদিন আরও বললেন, ‘এই সমস্ত নীতিকথার বক্তব্য কী? প্রথম নীতিকথাটিতে এক অবাধ্য ছেলের কথা বলা হয়েছে। ছেলেটি বাপকে ছেড়ে বহুদিন এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াল, অবশেষে তাকে বাপের আশ্রয়ে ফিরে আসতে হল। তোমাদের যে-সব সহপাঠী জীবনের দুঃখকষ্ট সহ্য করায় অনভ্যস্ত হয়ে লুকিয়ে গৃহত্যাগ করেছে, স্বেচ্ছায় তারা যে-সর্বনাশের পথ বেছে নিয়েছে, সে- পথে চলতে গিয়ে তারা যে কত কষ্টে পড়বে সে কি আর বলতে? আমি তোমাদের আবার বলছি, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি জান ঘরছাড়ারা কোথায় রয়েছে, তাহলে তাদের লিখে দাও তারা যেন ঘরে ফিরতে ভয় না পায়।
পিতৃপুরুষের বাস্তুভিটায় ফেরার সময় পার হয়ে যায় নি এখনও। মনে রেখো, প্রথম নীতিকথায় উড়নচণ্ডে ছেলে যখন ঘরে ফিরে এল, তার ধর্মভীরু, বাবা তাকে ধমক দিলেন না তখন, বরং তাকে চমৎকার সব জামাকাপড় পরতে দিলেন আর পরবের ছুটির দিনে লোকে যেমনটি করে তেমনই ভোজের আয়োজন করতে মোটাসোটা বাছুরটি জবাই করতে বললেন। তেমনই এই দুটি ঘরছাড়া ছেলের বাবা-মাও তারা ফিরে এলে তাদের সব কিছু ক্ষমা করে দেবেন আর দু-হাত বাড়িয়ে বুকে তুলে নেবেন তাদের।’
কথাগুলো কতখানি ঠিক সে-সম্বন্ধে আমার অবিশ্যি সন্দেহ ছিল। তুপিকভ সেই প্রথম শ্রেণীর ছাত্রটি ফের ঘরে ফিরে এলে তার বাবা-মা যে কী করবেন তা অবিশ্যি আমার জানা ছিল না। কিন্তু এ-বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না যে ছেলে ফিরে এলে রুটিওয়ালা প্লাগিন মোটেই মোটাসোটা বাহুর জবাই করতে বসবেন না, বরং নিজের পরনের বেল্ট খুলে কষে একচোট উত্তমমধ্যম লাগাবেন।
ফাদার গেয়াদি সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘স্বাভাবিক গুণের বিকাশ সম্বন্ধে নীতিকথাটিতে বলা হয়েছে, কারো স্বাভাবিক গুণ কেউ যেন পাথর-চাপা দিয়ে না রাখে। তোমরাও এখানে নানা ধরনের বিদ্যা আহরণ করছ। স্কুলের পড়া শেষ করে প্রত্যেকে তোমরা নিজ নিজ গুণ, ইচ্ছে আর সামর্থ্য অনুযায়ী পেশা বেছে নেবে। ধরো, তোমাদের মধ্যে কেউ হবে মান্যগণ্য ব্যবসায়ী, কেউ ডাক্তার, আবার কেউ-বা সরকারী কর্মচারী।
তখন সকলেই তোমাদের খাতির করবে, প্রত্যেকে মনে- মনে বলবে: ‘হ্যাঁ, এই যোগ্য মানুষটি নিজ গুণ পাথর-চাপা দিয়ে রাখেন নি, বরং তাকে বাড়িয়ে তুলেছেন, আর তারই ফলে জীবনের সবকিছু সুখস্বাচ্ছন্দ্য এখন ভোগ করতে পারছেন। এ-সবই এ’র ন্যায্য পাওনা। কিন্তু’ এইবার ফাদার গেন্নাদি আকাশের দিকে দুই হাত তুলে বললেন, ‘কিন্তু, জিজ্ঞাসা করি, এই সব আর এদের মতো আরও অনেক ঘর-পালানের কী দশা হবে বলো তো? জীবনে যে-সুযোগসুবিধে এরা পেয়েছিল তা অবহেলায় পায়ে দলে জড়দেহ আর আত্মার পক্ষে সমান সর্বনাশা দুঃসাহসিক রোমাঞ্চের সন্ধানে এই যে এরা ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেল, তাদের কী হবে?

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024