টিউলিপ মজুমদার
প্রচন্ড গরমে কাজ করলে গর্ভবতী নারীদের মৃত সন্তান প্রসব ও গর্ভপাতের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ভারতীয় গবেষকদের নতুন এক গবেষণায় এমন তথ্য এসেছে । ভারতের চেন্নাইয়ের ‘শ্রী রামচন্দ্র ইনস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এর নতুন গবেষণায় এসেছে এ তথ্য। তামিলনাড়ু রাজ্যের ৮০০ গর্ভবতী নারী গবেষণায় অংশ নেয়।
২০১৭ সালে চেন্নাইয়ের শ্রী রামচন্দ্র ইনস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এসআরআইএইচইআর) নতুন এই গবেষণা শুরু করেছিল। গবেষকদের মতে, গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরম শুধু গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকার নারীদেরই নয়, বরং যুক্তরাজ্যের মতো দেশের নারীদের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষকরা তাই কর্মরত গর্ভবতী নারীদের সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন। ।
সুমাথি নামের এক নারী গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন । গর্ভাবস্থায় ১২ সপ্তাহেই তার সন্তান মারা যায়। গবেষণা চলাকালেও প্রথম সুমাথির সন্তানই মারা যায়। শসা তোলার জন্য তার বেতন ছিল মাত্র ২০০ রুপি। গরমে গর্ভবতী অবস্থায় কাজ করে অনেক ক্লান্তি লাগত বলে জানিয়েছিলেন সুমাথি। একদিন বাসায় ফেরার পর সন্ধ্যায় হঠাৎই তার খারাপ লাগতে শুরু করে। চিকিৎসক জানায় তার গর্ভপাত হয়েছে । গর্ভপাতের কয়েক বছরের মধ্যে আবার গর্ভবতী হলেও গরমে কাজ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া সুমতির আর কোনও উপায় ছিল না। কিন্তু কীভাবে নিজেকে আরও ভালভাবে রক্ষা করা যায় সে সম্পর্কে তিনি ডাক্তার এবং গবেষকদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ পেয়েছিলেন। সুমতি একটি সুস্থ কন্যা ও পুত্রের জন্ম দেন।
এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, সুমাথির মতো পরিবেশে যে নারীরা কাজ করেন, তারা তুলনামুলক ঠান্ডা পরিবেশে কাজ করা নারীদের চেয়ে মৃত সন্তান প্রসব করা কিংবা গর্ভপাতের শিকার হওয়ার দ্বিগুণ ঝুঁকিতে থাকেন।
রাজ্যের জনস্বাস্থ্যের অধিকর্তা ডঃ টি. এস. সেলবাভিনাগম বলেন, তামিলনাড়ুতে এই গবেষণার ফলাফলকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই গর্ভবতী মহিলাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দিচ্ছি। কিন্তু হয়তো আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থান দেওয়ার বিকল্পগুলিও দেখতে হবে।”
রাজ্য সরকার দরিদ্র মহিলাদের গর্ভাবস্থার ১২ সপ্তাহে পৌঁছানোর সময় তাদের কিছু আর্থিক চাপ কমানোর চেষ্টা করার জন্য ১৮ হাজার রুপি দেয়। তবে, এই স্বল্প বেতনের শ্রমিকদের সুরক্ষার বেশিরভাগ ক্ষমতা কর্মক্ষেত্রের কর্তাদের হাতে রয়েছে।
একটি জরিপের তথ্য থেকে জানা যায়,প্রচন্ড গরমে কাজ করা নারীদের গর্ভপাতের হার ৫ শতাংশ, অপরিণত সন্তান জন্মদানের হার ৬ দশমিক ১ শতাংশ। সন্তানের ওজন কম হওয়ার হার ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। আর শীতল পরিবেশে কাজ করা নারীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি যথাক্রমে- ২ শতাংশ, ২ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।
গবেষণায় অংশ নেওয়া অর্ধেক নারীই এমন জায়গায় কাজ করত, যেখানে তাদেরকে উচ্চ মাত্রার তাপ বা প্রচণ্ড গরমের মধ্যে থাকতে হত। যেমন: কৃষিকাজ, ইটের ভাটা বা লবণের বিস্তৃত সমতল ভূমিতে কাজ। আর গবেষণায় অংশ নেওয়া বাকীরা হাসপাতাল ও স্কুলের মতো তুলনামূলক শীতল পরিবেশে কাজ করত।
সুমাথি, যিনি গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন
গবেষণায় অবদান রাখা বিজ্ঞানীদের একজন অধ্যাপক জেন হার্স্ট বলেন, “কারও দেহে তাপের প্রভাব কেমন হবে সেটি আপেক্ষিক। একজন কতটুকু তাপ সহ্য করে অভ্যস্ত বা তার দেহ কতটুকু তাপ সহনশীল তার ওপর বিষয়টি নির্ভর করে”।
তথ্য: বিবিসি
Leave a Reply