ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
পাঁচটি ভৌগোলিক অঞ্চল, পিরামিড
ভট (Vogt)-এর মত অনুযায়ী জিনা কানতান (Zina Cantan),তোতজিল (Tzotzil)-এর মধ্যে মোট পাঁচ রকম ভৌগোলিক অঞ্চল বা ভূমি দেখতে পাওয়া যায়।এই পাঁচ অবতার হল Ch’en (চে-ন) জমির উপর গর্ত যাকে ঐ দেবতার গুহা বলা হয়।এছাড়া অন্যান্য রূপ হল Hap sil (আপওসিল হাপ) Hap Osil (আপওসিল) অর্থ হল গিরিপথ (mountain pass),Ton (তান) পর্বত,Te (তে) গাছগাছালি।গবেষক ভট-এর মতে পাহাড়-এর সারি সারি সাজই হল স্বর্গ এবং পৃথিবীর মধ্যে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যম।
ভট একথাও মনে করেন পাহাড় পর্বতের শুরুটা হয়েছিল সেই প্রাক্-কলম্বিয়ান যুগ থেকে।এবং এই অস্তিত্বই সমসাময়িক মায়া জনগোষ্ঠীকে পিরামিড তৈরিতে উৎসাহ দিয়েছিল। পিরামিডকে মায়া জনগোষ্ঠী এক ধরনের পূর্বপুরুষের স্মৃতির বাহক হিসেবে মনে করত। এই পিরামিড তৈরির কলাকৌশল ছিল খুবই দেশজ। নিজেদের মত করে যেসব উপাদান পাওয়া যেত তাই দিয়েই তৈরি হত এই পিরামিড।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত লিপিকার ডেভিড স্টুয়ার্ট-এর মতে পিরামিডগুলি কার্যত কৃত্রিম পাহাড়। লিপিসংক্রান্ত তথ্য থেকে একথাও জানা যায় অনেক ক্ষেত্রে বড় বড় বাড়ি অট্টালিকাকে পাহাড় হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসম্পর্কে সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হল কোপান অঞ্চলের ‘মন্দির ২২’ এর নির্মাণ স্থাপত্য। এই অট্টালিকা পাহাড়-এর মত তৈরি এবং একে পৃথিবীর দানব বলে ভাবা হয়।
একে কার্যত গুহার রূপক (Metaphor) বলেও কল্পনা করা হয়। সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হল মায়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমন বিশ্বাস চালু আছে যেসব দর্শনার্থী এই ২২ গুহা মন্দিরে প্রবেশ করবেন তারা পূর্বপুরুষদের আত্মার অস্তিত্ব অনুভব করবেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। এর সঙ্গে নিশ্চিতভাবে রক্তদান এবং ধূপ পোড়ানর মত লোকাচারও মেনে চলতে পারবেন।
গুহা, পাহাড়-পর্বত: নানা বিশ্বাস: গুহা এবং পাহাড়-পর্বত মায়া অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যর অন্যতম দিক। এবং বাইরের পৃথিবী বা অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ- এর দ্বার হিসেবে এই গুহা ও পাহাড় কাজ করে। ভ্রমণ করার এক অনাবিল আনন্দ অনুভব করার এত বড় সুযোগ আর কোথাও দেখা যায় না। পূর্বপুরুষ, রাজা বা দেবতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পথ হিসেবে এই গুহা এবং গিরিপথকে ব্যবহার করা হত।
মায়াদের কথায় শমন (Shamans)-রা ভাবাবেগের ব্যাপারে খুবই দক্ষ এবং এই মনের ভাবাবেগ, উচ্ছ্বাস-এর জোরে তারা সাদামাটা পৃথিবীর সীমাকে অতিক্রম করে মৃত্যুকে অতিক্রম করে দেবলোকে পৌঁছতে পারে ও দেবতা, দস্যু, দানব, পূর্বপুরুষ এবং অদেখা সব শক্তির সঙ্গে সরাসরি যুঝতে পারার ক্ষমতা রাখে। মায়াদের বিশ্বাস এইসব অতিপ্রাকৃত শক্তিই এই জড়জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন দালাসে অবস্থিত সাউদার্ন মেথডিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক ডেভিড ফ্রেইডেল।
(চলবে)
Leave a Reply